সালেহ আহমদ (স’লিপক):
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন মির্জাপুর রোড সরকার বাজার হয়ে প্রবাহিত আলিয়া ছড়া গাং জবরদখল করে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। মির্জাপুর রোডের পাশঘেঁষা সরকারি (খাস) জমি ও আলিয়া ছড়া গাংয়ের বৃহদাংশ জবরদখল করে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের ফলে ছড়া গাং দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি অবৈধভাবে নির্মিতব্য ভবনের পাশঘেঁষা ধ্বসে যাওয়া ব্রীজ পূন:নির্মাণে সমস্যা সৃষ্টি হবে।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন মির্জাপুর রোড সরকার বাজার এলাকা দিয়ে বয়ে চলা আলিয়া ছড়া গাংয়ের উপর অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আইয়ুব আলী। তিনি ছড়া গাং ও তীর সংলগ্ন সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে জবরদখল করে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ফ্লোর ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছেন।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার, শ্রীমঙ্গল থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবরে লিখিত এবং ভূনবীর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ২নং ভূনবীর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডস্থ বাদে আলীসা গ্রামবাসীর পক্ষে মোঃ সিরাজ মিয়া স্বাক্ষরিত অভিযোগে জানা যায়, বাদে আলীসা গ্রামের মৃত ছুরত আলীর ছেলে আইয়ুব আলী অবৈধভাবে ও বিনা অনুমতিতে আলিয়া ছড়া গাং বন্ধ করে সরকারি খাস ভূমির উপরে জোরপূর্বক বিল্ডিং নির্মাণ করছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি মেম্বার সহ গ্রামবাসী বাঁধা প্রদান করলেও আইয়ুব আলী তাতে কর্ণপাত না করে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে জোরপূর্বক বিল্ডিং নিমার্ণ কাজ শুরু করেন। নির্মিতব্য বিল্ডিংয়ের পাশঘেঁষে আলিয়া ছড়া গাং এর উপর একটি পুরাতন ভাঙ্গা ব্রীজ রয়েছে এবং ব্রীজটি পূন:নিমার্ণের অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু এ বিল্ডিং নিমার্ণ হলে ব্রীজ করা সমস্যা সৃষ্টি হবে এবং আলিয়া ছড়া গাং দিয়ে পানি নিঃষ্কাশনে বাঁধা সৃষ্টি হবে। এতে করে আশপাশ গ্রামীবাসীর কৃষি কাজ করতে খুবই অসুবিধা হবে এবং পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।
আলিয়া ছড়া গাংয়ের উপর ব্রীজ পূন:নির্মাণ না হলে বাদে আলীসা সহ কয়েকটি গ্রামের লোকজনের চলাচল এবং স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীরা যাতায়াতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে। গ্রামের কৃষকগণ কৃষি জমি চাষাবাদ করা সহ বিভিন্ন ফলস ফলানো বন্ধ হয়ে যাবে।
এ বিষয় সম্পর্কে উপজেলা সাব-ইঞ্জিনিয়ার মনির মিয়াকে অবগত করা হয়েছে এবং এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে অবগত করার পর তারা বিল্ডিং নির্মাণে বাঁধা দিলে আইয়ুব আলী তাতে কর্ণপাত না করে নির্মাণ কাজ চলমান রেখেছেন।
এমতাবস্থায় তদন্তপূর্বক আলিয়া ছড়া গাংয়ের বৃহদাংশ জবরদখল করে সরকারি খাস ভূমির উপর প্রভাবশালী আইয়ুব আলী কর্তৃক অবৈধভাবে জোরপূর্বক বিল্ডিং নির্মাণ বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলাকাবাসী আবেদনপত্রে জোর দাবী জানিয়েছেন।
এলাকার কয়েকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, আইয়ুব আলী নির্মিতব্য বিল্ডিং থেকে অল্প দুরে মালিকানাধীন ১ শতক জায়গা ক্রয় করেন। কিন্তু তিনি তার ক্রয়কৃত জমিতে ভবন নির্মাণ না করে ছড়া গাংয়ের বৃহদাংশ জবরদখল করে সরকারি খাস ভূমির উপর জোরপূর্বক বিল্ডিং নিমার্ণ কাজ শুরু করেন। তাকে বাঁধা দেয়ার পরেও সরকারি জায়গার উপর এই বিল্ডিং করা হচ্ছে। এখানে কাগজের কোন জায়গা নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ সিরাজ মিয়া জানান, এটা ১৫৮১ দাগ সম্পূর্ণ সরকারী খাস জায়গা। ছড়া গাং এবং খাস জায়গা জবরদখল করে বিল্ডিং করছেন তিনি। আমরা এলাকাবাসী মিলে বিভিন্ন দপ্তরে দরখাস্ত দিয়েছি। তবুও কর্তৃপক্ষ নিরব ভুমিকা পালন করছে।
ভূনবীর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার জসিম আহমেদ কামাল বলেন, দুই নম্বরি করে এই বিল্ডিং এর কাজ করা হচ্ছে। একে তো ব্রীজের গা ঘেঁষে বিল্ডিং তৈরি করা হচ্ছে, যা ব্রীজ তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। আলিয়া ছড়া গাং এর উপর এই ব্রীজটি ঝুঁকিপূর্ণ। এই ব্রীজের কাজ অচিরেই শুরু হবে। ব্রীজ নির্মাণে নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ার সরজমিন পরিদর্শনকালে বলেন, পুরাতন ব্রীজ থেকে ১০ ফুট দুরত্বে অন্যান্য স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করতে। কিন্তু এই ভবনটি ৪ ফুট থেকেও কম দূরত্বে নির্মাণ করা হচ্ছে। যা ব্রীজ নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। এটা সরকারি জায়গার উপরে হচ্ছে। এই জায়গা তার ক্রয়কৃত জায়গা নয়।
ভূনবীর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ ছইদুর রহমান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরে আমার স্যারের সাথে আলাপকরে আমি নিজে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। ঈদুল ফিতরের ছুটির ফাঁকে নির্মাণ কাজটুকু করে নিয়েছেন। জায়গা যে লুকিয়ে দখল করা হচ্ছে তা তো আর বুঝা যায়নি। আমি নিশ্চিত এই জায়গাটা সরকারি খাস জায়গা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু তালেব বলেন, আমি এধরণের কোন অভিযোগ পাইনি। সরকারি জায়গায় যদি কোন বিল্ডিং হয় আমরা তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। সরকারি জায়গায় বিল্ডিং উঠানোর কোন সুযোগ নাই। যদি সে সরকারি জায়গায় বিল্ডিং উঠায় অবৈধভাবে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
এ ব্যাপার অভিযুক্ত আইয়ুব আলীর সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।