ই-পেপার | সোমবার , ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিভিন্ন সরকারি অফিসে জাল স্ট্যাম্প সরবরাহ করত চক্রটি

সিএনএন বাংলা২৪ডেস্কঃ

অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি চক্রের অন্যতম হোতাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। গ্রেপ্তাররা হলেন মূলহোতা মো. সোহেল কাজী (৩১), মো. জাহাঙ্গীর আলম ওরফে জাহিদ (৪০), মো. সোহেল রানা (৩৫), মো.সাব্বির হোসেন (২২), মোছা. সাবিনা ইয়াছমিন (৩০), মোছা. শাহনাজ আক্তার (৩১), কামরুল হাসান (২৬), মো. সুমন (২২), বিল্টু (১৯) ও মো. সেন্টু মিয়া (২৫)।

মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-৪ এর একটি দল ঢাকার আশুলিয়া ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা মূল্যমানের ৩ লাখ ৮০ হাজার ৮৬০টি স্ট্যাম্প, ২০০ টাকা মূল্যমানের ৬২ হাজার স্ট্যাম্প, ১০০ টাকা মূল্যমানের ৯২ হাজার ২০০টি স্ট্যাম্প, ৫০ টাকা মূল্যমানের ৬০ হাজার ৭৬০টি স্ট্যাম্প, ২০ টাকা মূল্যমানের ৩২ হাজার ২০০টি স্ট্যাম্প, ১০ টাকা মূল্যমানের ৪ লাখ ২১ হাজার ৯০০টি স্ট্যাম্প, ৫ টাকা মূল্যমানের ৯ হাজার স্ট্যাম্প, ৪ টাকা মূল্যমানের ৩৬ হাজার ৯০০টি স্ট্যাম্প, ২ টাকা মূল্যমানের ৫‌ হাজার ৬০০টি স্ট্যাম্প, পারফেক্ট মেশিন ৩টি ও স্ট্যাম্প তৈরির প্যাটেন্ট ২০টিসহ সর্বমোট ২২ কোটি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যমানের ১১ লাখ ১ হাজার ৪২০টি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও নগদ ৩০ হাজার ৭৪৫ টাকাসহ বিপুল পরিমাণ অন্যান্য সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।

বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চক্রটি প্রায় ২ বছর ধরে ঢাকার আশুলিয়ার বলিভদ্র এলাকায় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। এভাবে তারা প্রতারণার মাধ্যমে সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হতে বঞ্চিত করে আসছিল। চক্রটি মূলত সোহেল কাজীর মাধ্যমে পরিচালিত হতো। অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি ও বিক্রয়ে অন্যান্যরা সোহেল কাজীর সহযোগী হিসেবে কাজ করত। সোহেল কাজী পূর্বে বিভিন্ন প্রিন্টিং প্রেসে চাকরির সুবাদে সেখান থেকে বিভিন্ন রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির কাজ রপ্ত করেন। অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প চিহ্নিতকরণ সহজ না হওয়ায় অধিক মুনাফা লাভের আশায় তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি ও বিক্রয়ের পরিকল্পনা করেন। আশুলিয়াস্থ ‘কনফিডেন্স প্রিন্টিং’ প্রেসের মালিক ও অন্যান্য কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তিনি উল্লেখিত ছাপাখানায় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প মুদ্রণের কাজ শুরু করেন।

তিনি বলেন, ‘কনফিডেন্স প্রিন্টিং প্রেসে’ তার অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প মুদ্রণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন গ্রেপ্তার সাব্বির, সুমন, কামরুল সেন্টু ও বিল্টু। অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প মুদ্রণের পর পারফেক্ট মেশিনের মাধ্যমে কাটিং ও ছিদ্রকরণ করা হতো। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে রাজধানীর উত্তরা, বনানী, গুলশান, সাভার ও টঙ্গীসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে কোর্ট ফি ও অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হতো। বিভিন্ন সময় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করার সুবাদে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করতে পারে এমন অনেক ব্যক্তির পরিচয় হয় এবং তারা সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এভাবে তারা ১০-১৫ জনের একটি চক্র গড়ে তুলেন। এছাড়াও তার সঙ্গে বিভিন্ন অনুমোদিত ভেন্ডরদের সু-সম্পর্ক থাকায় তাদের নিকট কমমূল্যে অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি সরবরাহ করতেন তিনি। ভেন্ডররা এসব অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নিকট বিক্রি করতেন।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে এক রিম কাগজের মাধ্যমে অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করতে গড়ে তাদের ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ হতো। সোহেল তা তৈরি করে জাহিদের নিকট এক লাখ টাকায় বিক্রি করতেন। জাহিদ উক্ত অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্পগুলো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আনুমানিক ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। এভাবে তারা প্রতি মাসে ৮-১০ রিম কাগজ দিয়ে অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করে আসছিলেন। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় মামলা রয়েছে বলেও তিনি জানান।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪