নিজস্ব প্রতিবেদক :
পাঁচ বছর থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর অষ্টম বৃহত্তম কারণের একটি হলো সড়ক দুর্ঘটনা। গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপের তথ্যানুযায়ী, যানবাহনে শিশুদের জন্যে সুরক্ষিত আসন ব্যবহার করলে শিশুদের ক্ষেত্রে শতকরা প্রায় ৭০ শতাংশ এবং বড় শিশুদের ক্ষেত্রে শতকরা ৫৪ থেকে ৮০ শতাংশ মৃত্যু হার কমানো সম্ভব।
রবিবার রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর আয়োজিত নিরাপদ সড়ক জোরদার করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিষ্ঠানটির রোড সেইফটি প্রকল্পের সমন্বয়কারী শারমিন রহমান জানান, ৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ সড়ক দুর্ঘটনায়। বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর অষ্টম বৃহত্তম কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অব রোড সেফটি ২০১৮-এর তথ্য বলছে- বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় গড়ে ১০ লাখ ৩০ হাজার মানুষ সড়কে মারা যাচ্ছেন। আহত হচ্ছে গড়ে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বে আনুমানিক ২৪ হাজার ৯৫৪ জন মৃত্যুবরণ করেন। আর এসব মৃত্যুর ৯০ শতাংশই নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে সংগঠিত হয়। সড়কদুর্ঘটনার ফলে দেশে শতকরা পাঁচ ভাগ জিডিপি কমে যাচ্ছে।
ইউএনবির রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসের তুলনায় দ্বিতীয় ভাগে (এপ্রিল-জুন) সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত গেল ২৮ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৬৭৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়। সড়কে শিশু মৃত্যু ঠেকাতে গাড়িতে সিটবেল্ট বাঁধা, যানবাহনে শিশুদের উপযোগী সিটের ব্যবস্থা করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ২০২২ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে সাত হাজার ৭১৩ জন। এর মধ্যে তিন মাস থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা এক হাজার ১৪৩। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে তিনজনের বেশি শিশু সড়কে প্রাণ হারিয়েছে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে, যানবাহনে শিশুবান্ধব আসনের ব্যবহার শিশুদের সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতের ঝুঁকি শতকরা ৭১ শতাংশ থেকে ৮২ শতাংশ হ্রাস করতে পারে।
গেল বছরের ২৭ ডিসেম্বরে গেজেট আকারে প্রকাশিত বিধিমালায় শিশুযাত্রীর জন্য সিটবেল্ট বাঁধা সংক্রান্ত নির্দিষ্ট বিধান কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জারির কথা বললেও শিশু আসনের বিষয়ে কোনো বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। উচ্চগতির যুগে এবং গাড়িতে আটকে থাকা রাস্তা, চালকদের বেপরোয়াতায়, ভ্রমণের সময় শিশুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই শিশুদের নিরাপদ পরিবহনের জন্য, শিশুদের উপযোগী সুরক্ষিত আসন অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া শিশুর সুরক্ষিত আসনেরও অভাব রয়েছে। ‘বাংলাদেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন শিশুবান্ধব নয়। শিশুদের জন্য উপযোগী যানবাহন নেই।
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ শিশুদের সুরক্ষিত আসন নিয়ে কোনো কিছু বলা নেই। কিন্তু আমাদের দেশের যানবাহনে শিশু আসন খুবই জরুরি। তাই এই বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে যানবাহনে (বিশেষ করে ছোট গাড়িতে) শিশুদের জন্য সু-রক্ষিত আসন প্রচলনে আইন দরকার। পাশাপাশি সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের ঘোষিত ‘সেইফ সিস্টেম এপ্রোচ’ অনুযায়ী একটি আলাদা আইন প্রণয়নের দাবি ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের। কারণ, বর্তমান আইনটি সম্পূর্নভাবে ‘মোটরযান সংক্রান্ত আইন’; যেখানে সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অনুপস্থিত।
নুর মোহাম্মদ, সিএনএন বাংলা২৪