নিজস্ব প্রতিবেদক :
রামু’র ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ দক্ষিণ মিঠাছড়ি হাইস্কুলের ৫১ শতক নিজস্ব জমি একটি প্রভাবশালী মহল জোরপূর্বক দখল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকার সচেতন নাগরিকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
দক্ষিণ মিঠাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদ্যালয়ের ৫১ শতক জমির দলিল, বিএস খতিয়ান, বিএস দাগসহ সমস্ত ডকুমেন্টস বিদ্যালয়ের নামে চুড়ান্ত প্রচার রয়েছে। জমিটি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের দখলে রয়েছে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। দক্ষিণ মিটাছড়ি মৌজার বিদ্যালয়ের দখলে থাকা নিষ্কন্ঠক উক্ত জমিটির নামজারী খতিয়ান নম্বর ৩৭৫ এবং দাগ নম্বর ৭২২। খতিয়ান ও দাগ নম্বর অনুযায়ী বিদ্যালয়ের জমিটার অবস্থানও সঠিক রয়েছে। বিদ্যালয়ের পক্ষে জমিটির সরকারি রাজস্ব আদায় রয়েছে।
কিন্তু একই ইউনিয়নের সিরাজুদ্দৌলার পুত্র মোবারক ও তার লোকজন দক্ষিণ মিটাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫১ শতক নিজস্ব জমি জোরপূর্বক দখল করে মাটি ভরাট করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ মোবারকের দাবিকৃত জমির দাগ, খতিয়ানের সাথে দক্ষিণ মিটাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমির দাগ নম্বরের কোন মিল নেই। মোবারকের দাবিকৃত জমির বিএস দাগ নম্বর ৭২৩, পক্ষান্তরে, দক্ষিণ মিটাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের জমির বিএস দাগ নম্বর ৭২২। আবার মোবারকের খরিদ করা জমির দলিলে রেজিষ্ট্রিদাতার পূর্ববর্তীদের নামেও দাবিকৃত জমির কোন খতিয়ান, দাগ উল্লেখ নেই।
দক্ষিণ মিঠাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমি জোরপূর্বক দখল করতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী মোবারককে বাঁধা দেওয়ায় মোবারক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ২০২১ সালে রামু থানায় একটি নন জিআর মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর নন জিআর : ৬৬৭/২০২১ (রামু)। মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া, মোবারকের দাবিকরা জমির সমস্ত ডকুমেন্টস ত্রুটিপূর্ণ থাকায় সেগুলো সংশোধন করে দিয়ে তাকে জমির মালিক হিসাবে ঘোষনা করার জন্য দক্ষিণ মিটাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে বিবাদী করে ২০২১ সালের ১৪ জুন কক্সবাজারের রামুর সহকারী জজ আদালতে একটি সিভিল মামলাও দায়ের করেন। মামলাটির নম্বর : অপর ৫৪০/২০২১ ইংরেজি। এ মামলাটিও বিচারাধীন রয়েছে।
দক্ষিণ মিটাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির বর্তমান সভাপতি ও একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস প্রকাশ ভূট্টো জানিয়েছেন, বিরোধীয় জমি নিয়ে রামুর সহকারী জজ আদালতে দায়ের করা মামলাটি বিচারধীন থাকা সত্বেও সম্প্রতি মোবারক বিদ্যালয়ের জমিটা জোরপূর্বক দখল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। দক্ষিণ মিটাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের বিগত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ ইউনুস প্রকাশ ভূট্টো`র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন খোদেস্তা বেগম রীনা।
ভূট্টো জানান, নির্বাচনী আক্রোশ থেকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী খোদেস্তা বেগম রীনা ও তার আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে মোবারক বিদ্যালয়ের জমিটি আবারো দখল করার অপচেষ্টা করতে থাকে। তখন বিদ্যালয়ের জমি জবরদখলের অপচেষ্টা রোধ করতে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির বর্তমান সভাপতি হিসাবে মোহাম্মদ ইউনুস ভূট্টো বাদী হয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে খোদেস্তা বেগম রীনা, তাঁর সন্তান ইয়াছিন মনির সোহাগ, খোদেস্তা বেগম রীনা, র পরিবারের সদস্য দিলওয়ার আলম চৌধুরী সহ ৭ জনকে আসামী করে রামু আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আমলী আদালতের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি আমলে নিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মোহাম্মদ ইউনুস প্রকাশ ভূট্টো আরো জানান, এ মামলার পর পরই তাঁর নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী খোদেস্তা বেগম রীনা নিজে বাদী হয়ে মোহাম্মদ ইউনুস প্রকাশ ভূট্টো, তাঁর ২ ভাই সহ ৯ জনকে আসামী করে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নম্বর-১, দ্রুত বিচার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলাটি গত ৫ এপ্রিল দ্রুত বিচার আইনের ৪/৫ ধারায় রামু থানায় রেকর্ড করা হয়। যার রামু থানা মামলা নম্বর : ০৮ এবং সিআর মামলা নম্বর : ২৯৬/২০২৩ ইংরেজি। এ মামলায় দক্ষিণ মিটাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি জোরপূর্বক দখলের অপচেষ্টাকারী মোবারককে ৬ নম্বর সাক্ষী করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের নিষ্কন্ঠক জমি জোরপূর্বক দখল করার জন্য প্রভাবশালী মহল বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করায় কমিটি, এলাকার সচেতন নাগরিক, অভিবাবক, শিক্ষক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সুলতান আহমদ বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ সার্বিক ব্যবাস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে করে থাকে কমিটি। কিন্তু প্রভাবশালীদের কবল থেকে স্কুলের জমি রক্ষা করতে গিয়ে কমিটি বার বার হামলা ও মামলার শিকার হচ্ছে। কমিটিকে এসব নিয়ে অহেতুক ব্যস্ত থাকতে হয়। যা স্কুলের সার্বিক ব্যবস্থাপনাকে বিঘ্নিত করছে। কমিটির অপর সদস্য সাবেক মেম্বার মোঃ খলিল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রভাবশালী মহল কর্তৃক স্কুলের জমি দখলের অপচেষ্টা রোধ করতে গিয়ে কমিটিকে বার বার ঝামেলায় জড়াতে হচ্ছে। যা কখনো কাম্য নয়।
স্কুলের অভিভাবক দক্ষিণ মিটাছড়ির সিকদার পাড়ার আবুল মনসুর বলেন, স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে যদি স্কুলের জমি রক্ষা করতে গিয়ে বার বার হামলা ও মামলার শিকার হতে হয়, তাহলে স্কুলের নিয়মিত স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নে বাঁধা সৃষ্টি করবে। তিনি আরো বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস ভূট্টো স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ায় নির্বাচনী বিরোধ থেকে মূলত অনেকেই তা মেনে নিতে পারছেন না।
দক্ষিণ মিটাছড়ি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা মোঃ আমান উল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন, ৭৪ বছর পূর্বে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি কক্সবাজারের একটি স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহী একটি বিদ্যাপীট। এলাকাবাসীর জন্য এটা একটা বিশাল সম্পদ। কিন্তু স্কুলের নিজস্ব জমি জোরপূর্বক দখল করার জন্য প্রভাবশালী মহল যেভাবে মরিয়া হয়ে উঠেছে, কমিটির জন্য একের পর এক মামলা করছে, তাতে স্কুলটির সুনাম ক্ষুন্ন হবে এবং লেখাপড়ার মান চরমভাবে বিঘ্নিত হবে। নির্বাচনী বিরোধকে কেন্দ্র করে স্কুলের নিজস্ব জমি জোরপূর্বক বার বার দখল করার চেষ্টা করা কখনো উচিত নয়। যা এলাকাবাসীকে হতাশ করেছে।
এদিকে, এ বিষয়ে জানার জন্য দক্ষিণ মিটাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন ও স্কুল কমিটির বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে দায়েরকৃত মামলার বাদী খোদেস্তা বেগম রিনা কে তাঁর মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
নুর মোহাম্মদ, সিএনএন বাংলা২৪