ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাঁশখালীর প্রধান সড়কে স্পিড ব্রেকার : অপসারণের দাবী

শিব্বির আহমদ রানা,বাঁশখালী প্রতিনিধি:

আনোয়ারা-বাঁশখালী-পেকুয়া সংযোগ পিএবি আঞ্চলিক সড়কটি বাঁশখালীর একমাত্র বিকল্প প্রধানসড়ক। চট্টগ্রাম শহর থেকে পার্শ্ববর্তী পেকুয়া উপজেলার সংযোগ আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভারী যানবাহনসহ যাত্রীবাহী বাস-সিএনজি যাতায়ত করে। বাঁশখালীর উত্তর সীমান্ত তৈলারদ্বীপ সেতু থেকে বাঁশখালীর দক্ষিণ সীমান্তবর্তী টেইটং পর্যন্ত প্রায় দীর্ঘ ৩৪ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে রয়েছে ২৫ থেকে ৩০টির অধিক স্পিড ব্রেকার।

 

 

অপ্রয়োবনীয় ও অস্বভাবিকভাবে বসানো স্পিড ব্রেকারের ফলে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। স্পিড ব্রেকারে দীর্ঘদিন থেকে কোনো রং বা সাংকেতিক চিহ্ন না থাকায় স্বাভাবিকভাবে দেখা যায়না। এতে প্রায়ই ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা সহ মারাত্মক দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে যাত্রী ও পথচারী। সাধারণত সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে স্পিড ব্রেকার দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সড়ক আইনের কোন রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিতভাবে স্পিড ব্রেকার বসানোর কারণে ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীদের পড়তে হয় জীবন ঝুঁকির কবলে। এরই মধ্যে অভ্যন্তরিণ সড়কেও ব্যক্তি উদ্যোগে যত্রতত্র স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য স্পিড ব্রেকার। যার কারণে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধানসড়কের স্পিড ব্রেকারগুলোর আগে পরে নেই কোন প্রতিকী চিহ্ন, লেখা নেই কোন সতর্কবানী। এমনকি রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়নি ওই স্পিড ব্রেকারগুলো। কিছু কিছু স্পিড ব্রেকার এতো উঁচু যে, এগুলোর উপর দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় বেশ জোরে ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়, যানবাহনের নীচে স্পীড ব্রেকার অনেক সময় লেগে যায়। সাংকেতিক চিহ্ন না থাকায় দ্রুতগতির যানবাহনগুলো প্রতিনিয়ত যাত্রীসহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এ নিয়ে প্রায় সময় গাড়ী চালকদের সাথে যাত্রীদের কথা কাটাকাটি ও বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব রাস্তায় যাতায়াতকারী রোগী ও শিশুরা ঝাঁকুনিতে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ডেলিভারী রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জীবনের ঝুঁকিতে পরেছে। বাঁশখালী প্রধানসড়কের ওপর ৮ থেকে ১০টি কাঁচা বাজার বসে। আর হাট-বাজার, দোকান থেকে শুরু করে স্কুল, মাদরাসার সামনে অতি উঁচুতে স্পিড ব্রেকার নির্মাণ এবং স্পিড ব্রেকারে রং বা সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার না করায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনায় অঙ্গহানীসহ হারাচ্ছে প্রাণ।

 

এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়তকারী বেশকয়েকজন যাত্রী ও পথচারীদের মধ্যে মো. নাছির হোসাইন জানান, ‘দারোগা বাজারের মহাজনঘাটা সংলগ্ন স্পিড ব্রেকারটা অপ্রয়োজনীয় এবং অস্বভাবিকভাবে বসানো। এখানে গত বছর আমি এক্সিডেন্ট করেছিলাম।’ সংবাদকর্মী দিদার হোসাইন জানান, ‘প্রধান সড়কের ওপর এইসব স্পিড ব্রেকার বসানো নিয়মে পড়ে বলে মনে হয়না। অস্বভাবিকভাবে বসানো স্পিড ব্রেকারগুলো দ্রুত অপসারণ করা হোক।’ মোটরসাইকেল চালক এহসানুল হক জানান, ‘দারোগাবাজার সংলগ্ন স্পিড ব্রেকারে মোটরবাইকের সেলেন্জার আটকে যায়।’ নীলকমল সুশীল নামে আরেক যাত্রী জানান, ‘আমি দারোগাবাজার মহাজনঘাটা সংলগ্ন স্পিড ব্রেকারে বাইক নিয়ে এক্সিডেন্ট করেছিলাম। বাঁশখালী প্রধান সসড়কের প্রায় জায়গায় বসানো স্পিড ব্রেকারগুলো অপ্রয়োজনীয় ও অস্বভাবিক।

 

এগুলো দ্রুত অপসারণ করা দরকার।’ জিসান ফারুখ নামের এক মোটরসাইকেল চালক জানান, ‘এতো উঁচু স্পিড ব্রেকারগুলোতে গাড়ির গতি কমিয়ে উঠার চেষ্টা করলে গাড়ি স্পিড ব্রেকারের ওপর উঠতে চায়না। তাই বাধ্য হয়ে জোরে চালিয়ে উঠতে হয়। মাঝেমধ্যে ওই স্পীড ব্রেকারগুলোতে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মোটরসাইকেল চালকরা।’ বাঁশখালীর সচেতন মহল অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রধান সড়কের ওপর অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত এই স্পিড ব্রেকারগুলোর কারণে যাত্রী ও মালবাহী বড় বড় যানবাহনের পাশাপাশি সাইকেল, ভ্যান, মোটরসাইকেল, সিএনজি চালকরাও সমস্যায় পড়েছেন। প্রতিদিন ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে।

 

সাধারণত দুর্ঘটনা কমাতে সড়কে স্পিড ব্রেকার (গতিরোধক) তৈরী করা হয়। সেগুলোও আবার নির্দিষ্ট দূরত্বে। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাতেই স্থাপন করা হয়। কিন্তু উপকারী স্পিড ব্রেকার অনেক সময় ক্ষতিও করে। সড়কের বাঁকে মার্কিং বা সাইন বোর্ড সম্বলিত নেই কোন সাংকেতিক চিহ্ন। যার দরুণ প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার মতো অনাখাঙ্খিত দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। অস্বভাবিকভাবে বসানো গতিরোধকগুলো ভেঙে ফেলা হোক। যে কয়টি আছে তাতে রং করে মার্কিং করা হোক। এতে কিছুটা দুর্ঘটনা কমে যাবে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে খোদ প্রধান সড়কেই নয়, বাঁশখালীর অভ্যন্তরিণ সড়কগুলোতেও যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠেছে স্পিড ব্রেকার।

 

এ ব্যাপারে ঠিকাদারদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, সড়ক সংস্কার করার সময় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজ নিজ বাড়ির সামনে স্পিড ব্রেকার দিতে বাধ্য করে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, সড়কে স্পিড ব্রেকার দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ রাতের আঁধারে অনৈতিকভাবে স্পিড ব্রেকার বসায়। বাঁশখালী প্রধানসড়কে নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠা স্পিড ব্রেকার গুলো ভেঙ্গে দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হবে। জনস্বার্থে যেখানে স্পিড ব্রেকার প্রয়োজন শুধু সেখানেই স্পিড ব্রেকার থাকবে। বাকি সব স্পিড ব্রেকার যথাসম্ভব অপসারণ করার ব্যবস্থাগ্রহণ করবো এবং জরুরী স্পিড ব্রেকারগুলোতে রং (মার্কিং) করার বিষয়টিও দ্রত গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

 

নুর মোহাম্মদ, সিএনএন বাংলা২৪