ই-পেপার | মঙ্গলবার , ১৮ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচনী সহিংসতা: স্ত্রীর ওষুধ কিনতে গিয়ে গুলিতে মৃত্যু স্বামীর

নিজস্ব প্রতিবেদক,দিনাজপুর:

দিনাজপুর: মাগরিবের নামাজ পড়ে স্থানীয় চৌরঙ্গী মোড়ে স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে যান মোহাম্মদ আলী। মোড়ের আগে সাঙ্গুল হামিদ-হামিদা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণার কার্যক্রম চলছিল।

হঠাৎ প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছুঁড়ে পুলিশ। এ সময় মোহাম্মদ আলীর গায়ে গুলি লাগলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রোববার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ১ নম্বর আজিমপুর ইউনিয়নের সাঙ্গুল হামিদ-হামিদা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মোহাম্মদ আলী সাঙ্গুল ডাঙ্গাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। তিনি চার মেয়ে ও এক মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলের জনক। তার মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

স্থানীয়রা জানান, রোববার সন্ধ্যায় প্রথম দফায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ঝামেলা হয়। পরে সদস্য প্রার্থীর ফলাফল ঘোষণা করলে ১৯ ভোটে ব্যবধানে জয় পান জোবায়দুর রহমান। অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজয় মানতে না পারায় সাইফুল ইসলামের আহ্বানে ভোট পুনরায় গণনা হয়। তাতেও জয় পান জোবায়দুর রহমান। ফলাফল ঘোষণা করতে দেরি হওয়ায় তাদের সমর্থকরা কেন্দ্রের আশপাশে সমবেত হতে থাকেন।

এ সময় নির্বাচনী ফলাফল শিট নেওয়ার জন্য ভিড় করেন উভয় প্রার্থীর সমর্থকরা। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ছুঁড়ে পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এ সময় মোহাম্মদ আলীকে পড়ে থাকতে দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে, ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সিঙ্গুল হামিদ-হামিদা উচ্চ বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় সতর্ক অবস্থানে আছে পুলিশ। দুই-একটা ছাড়া বাজারে তেমন কোনো দোকানপাট খুলতে দেখা যায়নি।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতালের মর্গ থেকে মোহাম্মদ আলীর মরদেহ বাসায় পৌঁছে। বিকেলে তার নামাজে জানাজা শেষে সিঙ্গুল কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এর আগে, দুপুরে নিহত মোহাম্মদ আলীর বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ ও পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শেখ জিন্নাহ আল মামুন, ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিফাত-ই রাব্বান, বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাওলাসহ পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে এখানে এসেছি। তার পরিবারের সদস্যদের কাছে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিকে ১৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে তা কখনওই কাম্য নয়। এর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে। একইসঙ্গে অযথা কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়েও সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।

রোববার (২৮ এপ্রিল) দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় আজিমপুরসহ তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আজিমপুর ইউনিয়নে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হলেও ফলাফল ঘোষণার শেষ দিকে গণ্ডগোল বাঁধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে মোহাম্মদ আলী নিহত হন।