ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিস্কুট খাইয়ে অজ্ঞান করে ইজিবাইক ছিনতাই,২ নারীসহ গ্রেফতার ৬

নিজস্ব প্রতিনিধি:

চেতনানাশক ঔষধ মেশানো বিস্কুট খাইয়ে অজ্ঞান করে ইজিবাইক ছিনতাইকারী চক্রের ৬ সদস্যকে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি এবং মাদারীপুরের শিবচর থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০।

জানা যায়, গত ২৭ জুন ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকায় বসবাসকারী ইজিবাইক চালক ফিরোজ (২২) প্রতিদিনের মতো জীবিকা নির্বাহের জন্য ইজিবাইক নিয়ে বের হন। সেদিন বিকেল থেকে পরিবারের লোকজন তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুঁজি করেন। কোথাও খোঁজ না পেয়ে পরদিন দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় জিডি করেন ফিরোজের বাবা কিবরিয়া গাজী। ঘটনাটি জানতে পেরে র‌্যাব-১০ এর একটি দল নিখোঁজ ইজিবাইজ চালক ফিরোজকে উদ্ধার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।

 

এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব-১০। এসময় শফিকুল ইসলাম (৪৫), নুর ইসলাম (৩২), গোলাম রাব্বি (২৫) ও আব্দুর রহমান (২৭) কে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থেকে শীমা আক্তার (২৮) এবং মাদারীপুরের শিবচর থেকে শাহনাজ (৩৭) কে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত চেতনানাশক ঔষধ, চেতনানাশক মেশানো বিস্কুট, ভিকটিম ফিরোজের মোবাইল ফোন এবং ১টি চোরাই সিএনজি উদ্ধার করা হয়।

 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২৭ জুন শফিকুল, নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বি, আব্দুর রহমান, শীমা আক্তার এবং শাহনাজ ইজিবাইক ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকায় অবস্থান নেন। নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বি, শীমা ও শাহনাজ হাসনাবাদ গরু হাটে যাওয়ার কথা বলে ভিকটিম ফিরোজের ইজিবাইক ভাড়া করে। গরুর হাটে যাওয়ার পর ভিকটিম ফিরোজের সাথে নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বিকে চা-বিস্কুট খাওয়ার কথা বলে শীমা ও শাহনাজ গরুর হাটে ঢোকেন। পরে নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি তাদের কাছে থাকা চেতনানাশক ঔষধ মেশানো বিস্কুটের মতোই এক প্যাকেট বিস্কুট স্থানীয় একটি চায়ের দোকান থেকে কেনেন। এরপর তারা কৌশলে সেই বিস্কুটের প্যাকেট বদলে চেতনানাশক ঔষধ মেশানো বিস্কুট ইজিবাইক চালক ফিরোজকে খাওয়ায়।

 

ভিকটিম ফিরোজসহ নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি ইজিবাইকে গিয়ে বসে। ফিরোজের শরীরে চেতনানশক ঔষধের ক্রিয়া শুরু হলে তারা ইজিবাইকসহ ফিরোজকে কাউটাইল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর ভিকটিম ফিরোজকে অজ্ঞান অবস্থায় ইজিবাইক থেকে ফেলে দেয়া হয়। এরপর ইজিবাইক নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাগলা এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাদের দলনেতা শফিকুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করে। শফিকুল ইসলাম ইজিবাইকটি শহীদ নামের এক ব্যক্তির কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।

 

গ্রেফাতরকৃত শফিকুল ইসলাম পেশায় সিএনজি চালক হলেও আড়ালে তিনি চেতনানাশক ঔষধ খাইয়ে সিএনজি-ইজিবাইক ছিনতাইকারী চক্রের দলনেতা। তার বিরুদ্ধে মাদক, চুরি, চোরাই মালামাল বেচাকেনাসহ ৪টি মামলা রয়েছে।

 

গ্রেফাতরকৃত নুর ইসলাম পেশায় ট্রাকের হেলপার। তিনি সিএনজি-ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালকদের চেতনানাশক ঔষধ মেশানো বিস্কুট খাওয়ানোর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। গ্রেফাতরকৃত গোলাম রাব্বি পেশায় ইজিবাইক চালক। তিনি ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করেন। গ্রেফাতরকৃত আব্দুর রহমান পেশায় সিএনজি চালক। তিনি ছিনতাইকৃত সিএনজি-ইজিবাইক চালানোর দায়িত্ব পালন করেন।

 

গ্রেফাতরকৃত শাহনাজ বিস্কুটের ক্রিমের সাথে মেশানোর জন্য বিক্রয় নিষিদ্ধ চেতনানশক ঔষধ অবৈধভাবে দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সংগ্রহ করতেন। তিনি শফিকুলের স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। ভাড়া বাসার ভেতরে চলতো বিস্কুটের সাথে চেতনানশক ঔষধ মেশানোর কাজ। পাশাপাশি ইজিবাইক-সিএনজি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাও করা হতো।

 

গ্রেফাতরকৃত শীমা আক্তার বিস্কুটের ক্রিমের সাথে চেতনানশক ঔষধ মেশানো ও সিএনজি-ইজিবাইক ভাড়া করে তাদের পূর্ব-পরিকল্পিত স্থানে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করতেন।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪