ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রতিরোধের প্রথম ব্যারিকেড স্মরণে ফার্মগেটে ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঢাকা: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধে প্রথম ব্যারিকেডের স্মরণে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্যারিকেড উদযাপন জাতীয় কমিটি’।

 

সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ মিলনায়তনে ওই কমিটি আয়োজিত ‘প্রতিরোধের প্রথম ব্যারিকেড: বাঙালির বীরত্বের গৌরবগাথা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ দাবি করা হয়।

 

২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাতে ঢাকা সেনানিবাস থেকে বের হলে সর্বপ্রথম ফার্মগেট এলাকায় মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার ব্যারিকেডের মুখোমুখি হয়। সে ব্যারিকেডের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল।

 

প্রথম ব্যারিকেড উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান।

 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজির আহমেদ, সংসদ সদস্য একে আজাদ, অনিমা মুক্তি গোমেজ, একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ আলমগীর, বিশিষ্ট সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রমুখ।

 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা ২৫ মার্চ কালরাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্যারিকেডের গৌরবময় ইতিহাসের স্মৃতিচারণ করেন। তারা প্রথম ব্যারিকেডের ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখতে ফার্মগেট এলাকায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ এবং সেই প্রতিরোধের নেতৃত্বদানকারী আসাদুজ্জামান খান কামালের নামে একটি সড়কের নামকরণের দাবি জানান।

 

আলোচনা সভার শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্যারিকেড তৈরির ঐতিহাসিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

 

মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের গৌরবের ইতিহাস। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো মুছে ফেলা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে তৎকালীন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা ব্যারিকেড তৈরি করে একটি প্রশিক্ষিত সেনা বহরকে যেভাবে ২০ মিনিটের মত ফার্মগেটে আটকে রেখেছিল, তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অন্যতম স্থান দখল করে থাকবে।

 

স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ভাস্কর্য বা স্মৃতিস্তম্ভ বানাতে হলে একটি নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, আপনার আবেদন করেন। আমি মন্ত্রী হিসেবে, সেই স্মৃতি সংরক্ষণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সম্ভাব্য সব প্রকার সহযোগিতা করবো।

 

শাজাহান খান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। এটি ছিল বিশ্বের ইতিহাসে একটি গণহত্যা। বিশ্বের কাছ থেকে আমাদের এ গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনা বহরকে ব্যারিকেড দিয়ে ফার্মগেট তথা তেজগাঁওবাসী এক বীরত্বের ইতিহাস রচনা করেন।

 

চিত্রনায়ক এম এ আলমগীর তার বক্তব্যে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সেই প্রতিরোধে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ভাইয়ের সঙ্গে আমিও ছিলাম। সেদিন আমিও গাছ কেটেছিলাম, একটা গাছ এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যে কেটে ফেলা যায়, সেদিন প্রথম বুঝেছিলাম। সেদিন কামাল সাহেব নেতৃত্ব দিয়েছেন, যিনি আজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনি হয়তো ভবিষ্যতে মন্ত্রী নাও থাকতে পারেন, তিনিও হয়তো না থাকতে পারেন, কিন্তু সেই ইতিহাস, সেখানে যদি একটা ম্যুরাল হয়ে থাকে, তাহলে সেটা প্রজন্মের পর প্রজন্ম একশ বা দুইশ বছর থেকে যাবে। সেখানে নেতার নাম থাকলেই হয়, সবার নাম থাকার দরকার নেই।

 

মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ফার্মগেট এলাকায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রথম প্রতিরোধের স্থানে একটা ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে, এজন্য দাবি জানাতে হবে কেন, আমি বুঝি না। এটা কার দায়িত্ব আমি বুঝি না, তবে আমি মনে করি, এটা শুধু আসাদুজ্জামান খান কামালকে সম্মানিত করার জন্য নয়, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটা ঘটনাকে সম্মানিত করার জন্য তৈরি করা প্রয়োজন। যিনি নিজের জীবন বাজি রেখে প্রথম প্রহরে প্রতিরোধ করে আমাদের সামনে ইতিহাস হয়ে আছেন, তার নামে একটি সড়কের নামকরণ করতে কেন আমাদের ৫৩ বছর লাগবে, সেটাও বুঝি না।

 

সভাপতির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ইতিহাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই ফার্মগেট এলাকা। সে রাতে (২৫ মার্চ) আমরা ছাত্র-জনতা বিশ্বের অন্যতম প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বহরকে প্রায় ২০ মিনিটের মত আটকে রেখেছিলাম। আমরা গাছ কেটে, লোহার চাঁই দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেছিলাম, ঢিল, পেট্রোল বোমা ছুঁড়েছিলাম। কিন্তু সেনাবহরটি ২০ মিনিটের বেশি আটকে রাখতে পারিনি। তারপরই এই বাহিনী ঢাকা শহরে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। সেদিন না পারলেও নয় মাস যুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।