নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা:
ঢাকা: অটিজম সচেতনতা নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ১৫ বছর আগ পর্যন্ত এটি নিয়ে তেমন কোন কাজ হয়নি। এ বিষয়ট সম্পূর্ণ অচেনা ছিল।
ভাবা হতো, অটিজম আক্রান্ত বাচ্চাটি অভিশপ্ত, পরিবারটি অভিশপ্ত। বাচ্চাটিকে লুকিয়ে রাখা হতো। চিকিৎসাক্ষেত্রে বেশিরভাগ লোকও এর সঙ্গে পরিচিত ছিল না।
মন্ত্রী সোমবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ মিলনায়তনে কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডার্স বিভাগ আয়োজিত বিশ্ব অটিজম সচেতনতা মাস-২০২৪ উপলক্ষে এক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ, এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করার জন্য। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে আমাদের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের মূল ধারায় নিয়ে এসেছেন। যার কারণে আজকে কোনো জায়গায় অটিজম কথাটি আসলে সবাই মোটামুটি জানে। এ জন্য এখন আর কেউ অভিশাপ ভাবে না। বাবা মা এখন যে কোনো পরিসরে বলতে পারে আমার বাচ্চা অটিস্টিক।
তিনি বলেন, এনডিডি ও অটিজম বিষয়ে যতবেশি আলোচনা হবে তত আমাদের জন্য ভাল। কারণ এই বিষয়গুলো নিয়ে কিন্তু সচেতনতা খুব কম।
মন্ত্রী বলেন, আমরা অনেকেই হয়তো যারা এ কাজগুলো করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত, অনেকেই আছি এমনকি এই বিষয়টা নিয়ে পড়াশোনা করি, কেউ কেউ আছেন অটিজম আক্রান্তদের নিয়ে সরাসরি কাজ করছেন, কেউ শিক্ষার সংগে আছেন, কেউ স্বাস্থ্যের সংগে জড়িত। এ নানা রকমের লোক আছেন তাদের নিজেদেরে মধ্যে যোগাযোগটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেই এবং তাতে কি হয় ,একজন যে কি করছেন তা আরেকজন জানে না। সাবার জানাটা যদি এক হয়, একটি যদি সত্যিকারের সমন্বয় হয়, আমাদের জানা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতার সমন্বয় হয় সব ক্ষেত্রে। আমরা কিন্তু আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে আরো অনেক ভালো সেবা দিতে পারি। কিন্তু আমরা এখনও সে জায়গাটায় যেতে পারিনি।
মন্ত্রী এনডিডি শিশুদের শিক্ষা প্রসঙ্গে বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা কোন বাচ্চাকে কোথায় দেব, চেষ্টাটা হলো আমাদের সব বাচ্চাকে আমরা সাধারণ বিদ্যালয়ে পড়ারাবার চেষ্টা করবো। যাদেরকে নেয়ার মত নয় সে বাচ্চাদেরকে বিশেষ বিদ্যালয়ে পড়াবো এবং পড়ায়ে চেষ্টা করবো তাকে ততদূর নিয়ে যাওয়া, যেন সে সাধারণ জায়গায় নেয়া যায়। যে বাচ্চাদের কোনোভাবেই কিছু করা যাচ্ছেনা তাদেরকে সেভাবে বাঁচাতে হবে। তাদেরকে স্বাভাবিকের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
দীপু মনি বলেন, অটিজম আক্রান্তদের যতটুকু পরিবারের মধ্য রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু কিছু বাচ্চা থাকবে তাদেরকে প্রতিষ্ঠানে রাখতে হবে। তারা প্রতিষ্ঠানে নিবাসী হবে। যেখানে বাড়িতে রাখা সম্ভব নয় তাদের জন্য সমিন্বত সেন্টার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। আটটি বিভাগে আটটি সেন্টার স্থাপন করা হবে। সেখানে আবাসন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা থাকবে। আমাদের আপাতত ১৪টি কেন্দ্র আছে। সেখানে নিবাসী রাখা যায় এরকম আপডেট করে তাদের রাখা হবে। ঢাকায় প্রথমে একটি পাইলটিং করা হবে। তারপর আমরা প্রত্যেক বিভাগে করবো, ঢাকার সেন্টারটির ফলাফলের উপর ভিত্তি করে আমরা পরিবর্তন আনবো। সেগুলোতে প্রশিক্ষণ, থেরাপী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হবে।
মন্ত্রী এনডিডিদের সণাক্তকরণ ও উন্নত চিকৎসার বিষয়ে বলেন, সনাক্তকরণের জন্য জন্য একটি কর্মশালা করে আমরা একটি স্টান্ডার্ডাইজড টুল তৈরি করেছি। সেটা এনডিডি ব্যক্তি সণাক্তকরণের জন্য ব্যবহার করা হবে। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট গ্রহণে পরিবর্তন বা প্রয়োগ করলে এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তি ও শিশুদের মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। বর্তমানে এ ধরণের স্যাম্পল সংগ্রহ করে তা বিদেশে পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হয় যা ব্যয় বহুল। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় হতে একটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ল্যাব তৈরি করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.এ.এস.এম. মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন এড টেক হাব এর কান্ট্রি লিড আফসানা সাদিক অতুলি,সোসাইট ফর দি ওয়েলফেয়ার অব অটিস্টিক চিলড্রেন সুবর্ণ চাকমা।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডার বিভাগের চেয়ারম্যান শারমিন আহমেদ।