ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রামে মারামারির নাটক সাজিয়ে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রাম নগরের রিয়াজ উদ্দীন বাজারে দিনদুপুরে মারধরের নাটক সাজিয়ে কর্মচারীদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীর ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

সোমবার (১০ জুলাই) নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) নগরের দামপাড়ায় সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন— মো. একরামুল আলম (৩৭), সাহেব হাসান মনা (২৪), মো. ইরফান ওরফে সাব্বির (২৪) ও রবিউল হোসেন ওরফে ইবু (২৩)। এদের মধ্যে একরামুলের বাড়ি পটিয়ার দেউরডেঙ্গায়, সাহেদের বাড়ি মিরসরাইয়ে, ইয়াছিনের বাড়ি সাতকানিয়ায় এবং রবিউলের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে।

এর আগে, রবিবার (৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রিয়াজ উদ্দিন বাজার রয়েল টাওয়ারের সামনে থেকে ব্যবসায়ী নুর মো. ইয়াছিন কবিরের দুই কর্মচারীকে মারধর করে নগদ ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে রাতেই ওই ব্যবসায়ী বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আসামিরা সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত চক্র। তারা বড় বড় ব্যবসায়ীদেরকে টার্গেট করে এবং ব্যবসায়ীদের ব্যাংকিং লেনদেনের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়। ব্যবসায়ীদের টাকা কে কখন কোন ব্যাংকে জমা দিতে যায়, কে উত্তোলন করতে যায় তাদেরকে টার্গেট করে গতিবিধি নজরদারিতে রাখে। একপর্যায়ে যে ব্যক্তি ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যায় এবং উত্তোলন করে তাকে টার্গেট করে। এছাড়া আগে থেকে ওঁৎ পেতে রাখা স্থানে পৌঁছামাত্রই মারামারির পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যাতে কোন পথচারী বাঁচানোর চেষ্টা না করে। মারামারির একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারা বেশিরভাগই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে।

তিনি বলেন, বাদী নুর এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানে মোবাইল বিক্রয়ের ব্যবসা করেন। তার প্রতিষ্ঠানের এসআর মোরশেদ আলম (২২) ও সহকারী ম্যানেজার ত্রিদিব বড়ুয়া (৫৫) প্রায় সময় প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিং লেনদেনের সকল কার্যক্রম করে থাকে। সেই হিসেবে গত ৯ জুলাই দুপুরের দিকে একটি লাল রংয়ের পুরাতন ব্যাগে প্রতিষ্ঠানের ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা সিটি ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন মোরশেদ ও ত্রিদিব। কোতোয়ালী থানাধীন জুবিলী রোডস্থ রয়েল টাওয়ারের সামনে রাস্তার উপর পৌঁছামাত্রই অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন আসামি তাদের দুইজনকে ধাক্কা দেয়। সহকারী ম্যানেজার ত্রিদিব বড়ুয়া ধাক্কা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আসামিরা তাদের এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ও ছুরিকাঘাত করে। এসময় তাদের কাছ থাকা ব্যাগভর্তি ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়।

পরে ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে ছিনতাই কাজে জড়িত আসামি সাহেদ হোসেন মনাকে শনাক্ত করা হয়। পরে গোপন সংবাদে ভিত্তিতে সোমবার (১০ জুলাই) দুপুর ৩টার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন রউফাবাদ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার কথা স্বীকার করে এবং তার সহযোগী আসামিদের নাম-ঠিকানা জানায়। পরে তার দেখানো মতে ছিনতাই করা টাকার মধ্যে ভাগে পাওয়া নগদ ৪০ হাজার টাকা বাসার স্টীলের ছোট আলমারির ভেতর থেকে জব্দ করা হয়।

পররবর্তীতে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামি মো. একরামুল আলমকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সদরঘাটের মাদারবাড়ি রাবেয়া ওয়ার্কশপের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, গ্রেপ্তার আসামি মনাসহ ৮/১০ জন মিলে ডাকাতি করে লুণ্ঠিত টাকা তার কাছে দিয়েছে। তার মধ্যে কিছু টাকা মনাকে এবং আর কিছু টাকা ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদেরকে দিয়ে অবশিষ্ট টাকা নিজের কাছে রেখে দেয়।

তিনি আরও বলেন, পরে গ্রেপ্তার একরামুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হোটেল প্যারামাউন্টের কক্ষ থেকে নগদ ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

পরে গ্রেপ্তার দুইজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে কর্ণফুলী থানাধীন চরলক্ষ্যা সৈন্যেরটেক এলাকা থেকে আসামি মো. ইয়াছিন ও মো. ইকবালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা সকলেই গ্রেপ্তার আসামি মো. একরামুল আলমের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় ডাকাতির পরিকল্পনা করে। একইসঙ্গে তারা জানায়, গ্রেপ্তার একরামুলের পরিকল্পনায় অপরাপর আসামিরা বাদীর প্রতিষ্ঠানের টাকা কে আনা নেওয়া করে বেশ কয়েকদিন যাবৎ অনুসরণ করে। পরে ব্যাংকে টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা জানতে পেরে মারামারির নাটক সাজিয়ে টাকাগুলো ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে মো. একরামুল আলমের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় ২টি চাঁদাবাজির মামলা আছে। এছাড়াও আসামি সাহেদ হোসেন মনার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় ২টি চাদাবাজির মামলা, ২টি অস্ত্র মামলা ও ৩টি জখম সংক্রান্ত মামলা আছে। অপর আরেক আসামি মো. ইয়াছিনের বিরুদ্ধেও কোতোয়ালী থানায় দ্রুত বিচার আইনে ১টি ছিনতাইয়ের মামলা আছে।