জাহাঙ্গীর আলম:
উখিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালে। উখিয়া এবং টেকনাফে এইটাই প্রথম কলেজ। যে ক’জন মহান মানুষ এই কলেজ প্রতিষ্ঠার পেছনে নিরলস ভুমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন কলেজের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ জনাব ফজলুল করিম চৌধুরী। তাঁর মতো একজন মানুষের জন্ম না হলে হয়তো আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষ তৈরী হতো না।
বর্তমান উখিয়া-টেকনাফের মাননীয় সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারও এই কলেজে পড়াশোনা করেছেন এবং তিনি সরাসরি স্যারের ছাত্রী।
উখিয়া-টেকনাফের শত শত মানুষ ঘর থেকে গরম ভাত খেয়ে গিয়ে আইএ-বিএ পাশ করার সুযোগ পেতো না। আমার মতো শতশত জাহাঙ্গীরের জন্ম দিয়েছে এই উখিয়া কলেজ।
৩২ বছর আগে এমন একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা খুব একটা সহজ ছিল না। যারা এই কঠিন কাজটাকে সহজীকরণ করে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁরা ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সন্তান।
প্রশ্ন হলো- এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আমরা কতটুকু মূল্যায়ন করতে পেরেছি? আমরা কি জমিদাতা বিধু ভুষন বড়ুয়ার কথা মনে রেখেছি? আমরা কি প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষকে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিদায় দিতে পেরেছি? তাঁদের স্মৃতি আমরা কলেজের কোথায় সংরক্ষণ করেছি?
আমি এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে কিছু কথা লেখার অধিকার রাখি বলে মনে করি। বিগত ২১ বছর ধরে আমি ফজলুল করিম স্যারকে খুব কাছ থেকে চিনি এবং জানি। আমি স্যারের পরিবারের একজন সদস্য।
কলেজের উন্নয়নে স্যারকে আমি দিনরাত পরিশ্রম করতে দেখেছি। একজন সহজ-সরল মানুষ হিসেবে স্যারকে পেয়েছি। প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। হয়তো স্যারেরও কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে।
মাঝখানে স্যার কলেজের মামলায় হাইকোর্ট পর্যন্ত গিয়েছেন এবং তিনি সফলভাবে মামলায় জিতে কলেজে অধ্যক্ষ পদে পুণর্বহাল হয়েছিলেন। মামলা চলাকালীন সময়ে স্যার কী কষ্ট করে সংসার পরিচালনা করেছেন, তা আমি নিজের চোখে দেখেছি।
মাঝখানে সংসার পরিচালনার জন্য তিনি কিছুদিন আইন পেশায়ও নিয়োজিত ছিলেন। অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান ভাইকে ধন্যবাদ, তখন স্যারকে সহযোগিতা করার জন্য।
যিনি সময় দিয়ে, জীবন দিয়ে, যৌবনের সোনালী সময় দিয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁর শেষটা যদি সুন্দর না হয় তাহলে এমন গুণী এবং উদ্যোগী মানুষের আর জন্ম হবে না।
মামলা চলাকালীন এবং কলেজ হতে বিরত থাকাকালীন সময়ে কিছু শিক্ষক এবং কিছু ব্যক্তি স্যারের সাথে কেমন আচরণ করেছিলেন, তা তিনি বারংবার বলতে গিয়ে চোখের পানি ফেলেছেন।
মামলা মোকাবেলা করে স্যার যখন পুণরায় কলেজের অধ্যক্ষ পদে ফিরে আসলেন, তখন তিনি ফিরে পেয়েছিলেন হারানো সম্মান। আল্লাহ সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
একজন সাবেক সংসদ সদস্য ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য, সেই সময় তিনি স্যারকে সহযোগিতা করেছিলেন। তিনি সহযোগিতা না করলে স্যারের পক্ষে ফিরে আসা খুব একটা সহজ হতো না।
বর্তমানে কলেজ পরিচালনা কমিটিতে বেশ কিছু উদ্যোগী এবং সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। যার মধ্যে রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী অন্যতম। তিনি সৃজনশীল একজন মানুষ।
স্যার বর্তমানে অসুস্থ। খুব একাকী জীবনযাপন করছেন। আমরা কি পারিনা প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষের নামটি দেওয়ালে টানিয়ে রাখতে? আমরা কি পারিনা শেষ সময়ে স্যারকে একটু সম্মানিত করতে? আমরা কি পারিনা জমিদাতা বাবু বিধুভূষণ বড়ুয়ার নামটি মনে রাখতে? এইসব না হলে কার কী ক্ষতি? ইলিশের পঁচনতো মাথা থেকেই।
জাহাঙ্গীর আলম,
কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক।