ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কুড়িয়ে পাওয়া বরই খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিনিধি :

রাজশাহীতে কুড়িয়ে আনা বরই খেয়ে অসুস্থ হয়ে দুই দিনের ব্যবধানে দুই সহোদর শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ধারণা করা হলেও চিকিৎসকরা অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও করছেন। সহোদর দুই বোনের মৃত্যুর পর তাদের বাবা-মাকেও হাসপাতালের নিপাহ ওয়ার্ডে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এছাড়া দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ জানতে নমুনা পাঠানো হয়েছে ঢাকায়।

 

জানা যায়, গত বুধবার হঠাৎ জ্বর আর বমির কারণে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারিশা মারা যায়। তার মৃত্যুর তৃতীয় দিনে একই লক্ষণ নিয়ে মাশিয়াও মারা যায়। মৃত্যুর আগে ও পরে দুই শিশুরই শরীরে ছোপ ছোপ কালো দাগ দেখা দিয়েছিল। তবে এটি কোনো ভাইরাসের সংক্রমণে হতে পারে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা।

 

মারিশা ও মাশিয়ার বাবা মনজুর রহমান রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন গৃহিণী। বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তারা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকেন।

 

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাশিয়া। এর আগে গত বুধবার একই লক্ষণ নিয়ে মারা যায় ছোট বোন মারিশা। মৃত্যুর পর শনিবার বিকেলে মাশিয়ার মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হলে সন্ধ্যার পর দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে তার মরদেহ দাফন করা হয়। এর আগে গত বুধবার রাতে ছোট মেয়ে মারিশাকেও একই স্থানে দাফন করা হয়েছে।

 

শিশুদের মা পলি খাতুন জানান, গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে কোয়ার্টারের কাজের বুয়া (গৃহকর্মী) কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দিয়েছিলেন। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। সেদিন তারা ভালোই ছিল। পরদিন বুধবার সকাল ১১টার দিকে ছোট মেয়ে মারিশা জ্বরে আক্রান্ত হয়। বারবার পানি খাচ্ছিল। এরপর দুপুরের পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে দ্রুত রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালের উদ্দেশে রওয়ানা হন। পথে কাটাখালী এলাকায় মারা যায় মারিশা।

 

এদিকে, শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুর্গাপুরের বাড়িতে মাশিয়ারও একই লক্ষণ দেখা দেয়। ফলে দ্রুতই তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাজশাহী সিএমএইচে নেয়া হয়। এরপর রাতে মাশিয়ারও পুরো শরীরে ছোপ ছোট কালো দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকেরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। একপর্যায়ে রাত ৯টায় তাকে রামেক হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা দ্রুতই আইসিইউতে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়।

 

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ২ জনই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। যদিও তাদের বাবা-মা জানিয়েছেন, তারা খেজুরের রস খায়নি। তবে না ধুয়ে বরই খেয়েছিল। এটা নিপাহ ভাইরাস হতে পারে, আবার অন্য কোনো ভাইরাসও হতে পারে। সেটা আসলেই কী তা জানতে হাসপাতালে মারা যাওয়া মারিশা আর তার বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রোববার রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানাতে পারব।