ই-পেপার | সোমবার , ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘আইসিসির আর্থিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে’

স্পোর্টস ডেস্ক:
অনেকদিন ধরেই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) লভ্যাংশ ভাগাভাগি নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসছে দেশগুলো। যেখানে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড— এ তিন মোড়লের আধিপত্য নিয়ে বাকি সদস্য দেশগুলোর ক্ষোভের শেষ নেই। সাম্প্রতিক সময়েও অন্তত তিন কিংবদন্তি বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি ক্রিকেটার আলী বাখের, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েডের পর ওই তালিকায় যোগ দিয়েছেন ক্যারিবীয় বোর্ডের প্রধান নির্বাহী জনি গ্রেভ।

অনেকগুলো দ্বীপরাষ্ট্র নিয়ে গড়ে ওঠা ক্যারিবীয় বোর্ডের এই কর্মকর্তা দাবি করেছেন— আইসিসির লভ্যাংশ ভাগাভাগির আর্থিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। উইন্ডিজরা ভালো ক্রিকেটারদের নিয়ে টেস্ট দল গড়ে না বলেও যে অভিযোগ উঠেছে, তার জবাবও দিয়েছেন জনি গ্রেভ। একইসঙ্গে সম্প্রচার স্বত্ব না পাওয়া এবং অতিরিক্ত বিমান ভাড়া গোনার কথাও তিনি তুলে ধরেছেন।

ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গ্রেভ বলেন, ‘লভ্যাংশ ভাগাভাগি (রেভিনিউ-শেয়ার) মডেল পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। আমাদের যদি ক্রিকেট সম্প্রদায় হিসেবে এগোতে হয়, তাহলে আমরা দুর্বলতম দলের সমানই শক্তিশালী (এটি মেনে নিতে হবে) এবং আমাদের দ্বিপক্ষীয় ক্রিকেটের ব্যাপারে মানসিকতা বদলাতে হবে।’

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ সম্প্রতি অভিযোগ তুলে বলেছিলেন যে— ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজও কয়েক বছর ধরে পূর্ণশক্তির টেস্ট দল নির্বাচন করছে না। আইসিসি যদি এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে টেস্ট ক্রিকেট আর স্বরূপে থাকবে না।’ যার জবাবে এবার গ্রেভ বলছেন, ‘আমি স্টিভ ওয়াহকে যেটি বলব, গত চার মাসে অস্ট্রেলিয়ার সহায়তায় সিডব্লিউআই (ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ) ২ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে এবং বিনিময়ে আমরা শূন্য ডলার ফিরে পেয়েছি। এটি কি ন্যায্য ও যুক্তিসংগত? আমরা অন্য যে কারও চেয়ে আকাশপথে বেশি ভাড়া গুনি এবং অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের টেলিভিশন সম্প্রচারের কোনো চুক্তি নেই। ফলে অস্ট্রেলিয়ান যেসব ব্রডকাস্টার ক্রিকেটের এ অবস্থা নিয়ে অভিযোগ তুলছে, তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজে ক্রিকেটের সহায়তায় কী করছে?’

এদিকে, ২০ ওভারের ফ্র্যাঞ্জাইজি টুর্নামেন্ট থাকায় নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্টের জন্য মূল দল পাঠাচ্ছে না দক্ষিণ আফ্রিকা। এই সিরিজের জন্য ঘোষিত প্রোটিয়াদের ১৪ সদস্যের দলে ৭ জনই অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন। যা দেখে স্টিভ ওয়াহ দাবি করেন যে, টেস্ট ক্রিকেটকে হত্যা করতে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই বিষয়টাও টেনে এনেছেন ক্যারিবীয় কর্মকর্তা গ্রেভ, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমের ঘুম ভাঙিয়েছে, যাতে তারা দেখতে পায়—টেস্ট ক্রিকেট পরিচালনা করার বাস্তবতা কী। যতক্ষণ না বোর্ডগুলো টেস্ট ক্রিকেটের অর্থনৈতিক কাঠামো বদলাচ্ছে, ততক্ষণ বিগ থ্রি দেশগুলোর বাইরে টেস্ট ক্রিকেটের উৎকর্ষ হবে না। এটি শেষ হয়ে যাবে, সেটিও মনে করি না। তবে এটি আরও অনেক উন্নত হতে পারে, হওয়া উচিৎ। দক্ষিণ আফ্রিকার এ পরিস্থিতি যদি অর্থবহ আলোচনা নতুন করে শুরু করতে পারে টেস্ট ক্রিকেটের অবস্থানের ব্যাপারে, আমরা সেটিকে স্বাগত জানাব। এর জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে দোষ দেওয়াটা অন্যায্য হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সেরা খেলোয়াড়েরাও যেন টেস্ট খেলে আমরা সেটা চাই, যাতে এই প্রতিযোগিতা যথাসম্ভব সেরা হয়। বিগ থ্রি দেশগুলোর কোনো ঐশ্বরিক অধিকার নেই শুধু তাদের টি-টোয়েন্টির জন্য উইন্ডো রাখার। কেউ যদি বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ক্রিকেট মৃতপ্রায়, তাহলে আপনি বলতেই পারেন, “সিপিএলের দিকে তাকান”। এখানে বয়সের গড়ে সবাই তরুণ, লিঙ্গ ভারসাম্যে পুরুষের চেয়ে নারী বেশি। সিএ (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া) ও ইসিবি (ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড) এমন অবস্থা পেতে মরিয়া। একই জিনিস দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রেও। কেউ যদি বলে সেখানে ক্রিকেট মারা যাচ্ছে, তাহলে বলতে পারেন, “এসএ টোয়েন্টির দিকে তাকান।”’