সালেহ আহমদ স’লিপক:
অগ্রহায়ন মাসের শেষের দিকে সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। সকালের কুয়াশা কিংবা সন্ধ্যার হিমেল বাতাসের মাঝে মৌলভীবাজারে কদর বেড়েছে শীতের ভাঁপা ও চিতই পিঠার।
মৌলভীবাজার শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে এখন ভাঁপা ও চিতই পিঠা বিক্রির ধুম পড়েছে। শীত এলেই এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা, এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত এ ব্যবসায় ব্যস্ত সময় কাটান। সদ্য চুল্লী থেকে নামানো গরম আর সুগন্ধি ধোঁয়ার সুধাগন্ধে মন আনচান করে ওঠে সবার। এসব পিঠার স্বাদে ক্রেতারা মুগ্ধ। শীতের সময় এখানকার নিম্ন আয়ের অনেক মানুষের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ভাঁপা ও চিতই পিঠার ব্যবসা। একদিকে ভাঁপা ও চিতই পিঠার স্বাদ আর অন্যদিকে চুলার আগুন আর জলীয় বাষ্পের উত্তাপ যেন চাঙ্গা করে দেয় দেহমন। এ যেন শীতের আরেক আমেজ।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র কুসুমবাগ, পশ্চিমবাজার, চৌমুহনী, চাঁদনীঘাট সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় স্বল্প আয়ের লোকজন গড়ে তুলেছেন অস্থায়ী পিঠার দোকান। মূলত সেখানে ভাঁপা ও চিতই পিঠা তৈরি হচ্ছে। রিকশাচালক, দিনমজুর, শিশু-কিশোর, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী সহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এ পিঠার দোকানের ক্রেতা। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অনেককেই আবার পিঠা খেতে দেখা যায়। অনেকে আবার পরিবারের সদস্যদের জন্য পছন্দের পিঠা বাসা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।
কথা হয় সিলেট সড়কে পিঠা বিক্রেতা সত্তার মিয়া (৩৫) এর সাথে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন যাবত এই পিঠা ব্যবসার সাথে আমি জড়িত। শীতকাল আসলেই পিঠা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকি। প্রতিদিন ৮/১০ কেজি করে চালের গুড়া লাগে। ভাঁপা এবং চিতই পিঠা পিচ প্রতি ১০ টাকা দরে বিক্রি করি। তবে ভাঁপা পিঠার চাহিদা একটু বেশি। খরচ বাদে গড়ে ৫শ থেকে ৬শ টাকা আয় হয়।
আমতৈল গ্রামের সিএনজি চালক রাতুল মিয়া বলেন, হোটেলে পুরি, সিঙ্গারা ও পিঁয়াজু সবসময়ই পাওয়া যায়। আমরা কিনে খাই। এসব পিঠা শুধু শীতের সময় পাওয়া যায়। শীতে গরম গরম পিঠা খাওয়ার স্বাদই অন্যরকম। ভাঁপা পিঠা ও চিতই পিঠার সাথে সরিষার ভর্তা, শুটকি ভর্তা, ধনে পাতা ভর্তা অনেক স্বাদের। এ কারণেই প্রতিদিন এখানে আসি পিঠা খেতে।
মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়কাপন এলাকার বাসিন্দা খোকন মিয়া বলেন, সারাদিন পরিশ্রমের পর বাড়িতে গিন্নীর আর পিঠা বানাতে ইচ্ছে করেনা। তাই মাঝে মধ্যে পরিবারের জন্য ফুটপাত থেকে পিঠা কিনে বাড়িতে নিয়ে যাই।
পাশেই ভ্যানগাড়ীতে করে নিয়মিত বিরানী, চানা, পিঁয়াজু বিক্রেতা আল আমিনের সাথে কথা বলে জানা যায়, শীত এলে আমাদের ব্যাবসায় একটু ভাটা পড়ে। সবাই গরম গরম পিঠা খেতে ঝুঁকে পড়েন।
পিঠা খেতে আসা সানি, রাফি ও আব্দুল্লাহ অভিন্ন সুরে বলেন, আজ ক’দিন ধরে বেশ শীত পড়েছে। তাই আমরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখানে পিঠা খেতে আসি।
হোমিও চিকিৎসক ডাঃ এসকে পাল জানান, রাস্তার পাশে খোলা পরিবেশের যেকোন খাবার খেলে ফুড পয়জনিং, ডায়রিয়া, টাইফয়েড সহ নানা ধরণের পেটের পীড়া হতে পারে। এজন্য খোলা পরিবেশের খাবার পরিহার করা উচিত। তবে, স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে কোন সমস্যা নেই।
পিঠা আমাদের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য। বর্তমান সময়ে এই ঐতিহ্যগুলো ক্রমেই হাঁরিয়ে যাচ্ছে। শীত মৌসুমে রাস্তার পাশে অস্থায়ী দোকানগুলোয় মূলত ভাঁপা পিঠা, চিতই পিঠা ও তেলে ভাজা সন্দেশ পিঠা সহ নানান জাতের পিঠা বিক্রি করা হয়। শীতকালে বাসা বাড়িতে মেহমান আসলে আনন্দ উল্লাস করে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরী করে মজা করে সবাই মিলে খাওয়া হতো। এখন আর বাসা বাড়িতে এসব আয়োজন চোখে পড়েনা। নানান ব্যস্ততার কারণে এখন বাজার থেকে কিনে এনে খেয়ে নেন পিঠাপ্রেমীরা। গ্রাম বাংলার পিঠার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আমাদের সকল পরিবারে পিঠা তৈরী করার নীতি চালু রাখা প্রয়োজন, তা নাহলে একদিন এই ঐতিহ্য বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।