সালেহ আহমদ স’লিপক:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ জন সহকারী শিক্ষক কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিদেশ চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে শিক্ষকের অভাবে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বিদেশ যাওয়া ৪ জন সহকারী শিক্ষক হলেন, উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের মাইজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইসরাত জাহান, মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুর রহমান, বৃন্দাবনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ মোরশেদুল ইসলাম ও সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুর্শেদা খাতুন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগন। তাদের মধ্যে মুর্শেদা খাতুন কোথায় গেছেন জানা যায়নি। বাকি ৩ জন যুক্তরাজ্য অবস্থান করছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাইজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইসরাত জাহান চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চিকিৎসাজনিত ছুটি কাটিয়ে ৩ অক্টোবর থেকে আর স্কুলে আসেননি। পরে জানাযায় তিনি যুক্তরাজ্য চলে গেছেন। মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুর রহমান গত ২২ জানুয়ারী স্কুলে যোগাদান করে মাত্র ১ দিন ক্লাস করান। এরপর ২৩ জানুয়ারি থেকে আর স্কুলে আসেননি। বৃন্দাবনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ মোরশেদুল ইসলাম সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ থেকে বিদ্যালয়ে আর উপস্থিত হননি। পরে জানা যায় এই তিনজন যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন।
চৈতন্যগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুর্শেদা খাতুন ১২ অক্টোবরের আগে তিনি চিকিৎসাজনিত ছুটি কাটিয়েছেন ২ মাস এরপর আর বিদ্যালয়ে যোগদান করেননি। তিনি কোন দেশে গেছেন জানা যায়নি।
মাইজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস খান, মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন মিয়া, বৃন্দাবনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজিয়া বেগম ও চৈতন্যগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরেন্দ্র কুমার সিংহ জানান, তাঁরা কেউ আমাদেরকে কিছু বলেনিনি। কেউ ছুটি কাটিয়ে আর আসেননি। আবার কেউ কিছু না বলেই বিদ্যালয় থেকে চলে গেছেন। পরবর্তীতে লোকমুখে শোনা যায় তারা বিদেশে চলে গেছেন। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর এসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা সাথে সাথে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে চিঠি দিয়েছেন। তাদের পরিবর্তে নতুন করে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। শিক্ষক সংকট থাকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে তারা জানান।
অভিযুক্ত শিক্ষকদের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাবিবুর রহমান, ইসরাত জাহান, মোরশেদুল ইসলাম স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন। আর মুর্শেদা খাতুন কোথায় গেছেন তা জানা যায়নি। আবার দেশে এসে শিক্ষকতায় যোগদান করবেন কি না পরিবারের সদস্যরা তা জানেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার কয়েকজন সহকারী শিক্ষক জানান, চিকিৎসার কথা বলে অনেকেই ২ মাস ছুটি কাটান। আসলে এই দুইমাস তারা বিভিন্নভাবে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য প্রসেসিং করেন। হঠাৎ এভাবে যাওয়াটা মোটেও ঠিক হয়নি তাদের। বাচ্চাদের কথা ও দেশের কথা চিন্তা না করে এভাবে নিজের স্বার্থের জন্য চলে গেলেন তারা।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, যারা ছুটি কাঁটিয়ে স্কুলে আসেননি বা না জানিয়ে কোথাও চলে গেছেন তাদেরকে আমরা নোটিশ পাঠিয়েছি। বিদেশে যাওয়ার কোন অনুমতি নেই। তিনি আরও বলেন, যারা বিদেশ গিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা অলরেডি হয়ে গেছে। আমরা কাউকে এসব বিষয়ে ছাড় দেই না।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, এ রকম ঘটনাগুলো শুধু এই অঞ্চলে হচ্ছে। যা কখনও ভাবা যায়না। আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। যারা এভাবে না বলে চলে গেছে তাঁরা এই কাজটি মোটেও ঠিক করেনি। চাকুরী থেকে সেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে চলে যেতো পারতো। যারা দুই মাসের অধিক ছুটি কাঁটিয়ে বিদ্যালয়ে আসেনি আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।