ইকরা তৌহিদ মিম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রীদের জন্য নির্মিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৬০ শতাংশ বৌদ্ধ ছাত্রীদের আসন বরাদ্দ দেয়ায় ধর্মীয় বিভাজনের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ।
বুধবার (৯ আগস্ট) বিকেলে সংগঠনটির সভাপতি আল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক তারেকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ০৮ আগস্ট সকাল ১০টায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসার ৯৩তম জন্মদিন উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলতুন্নেসা মুজিব হল উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ অবিবেচনাপ্রসূত হলটিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের জন্য ৬০ শতাংশ আসন বরাদ্দ রেখে বাকি ৪০ শতাংশ সাধারণ ছাত্রীদের জন্য নির্ধারণ করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলায় নির্দিষ্ট ১ শতাংশ ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠী জনগোষ্ঠীর জন্য ৬০ শতাংশ আসন বরাদ্দ করে বাকি ৯৯ শতাংশ ছাত্রীদের জন্য ৪০ শতাংশ আসন বরাদ্দ দেওয়া পাকিস্তান সরকারের বিভাজন নীতিকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার জন্য অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্ত বাতিল করবে বলে আশা করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার হলটি খুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আসন বিভাজনের বিষয়ে জানতে চাইলে হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. উদিতি দাশ বলেন, চীন সরকারের সহায়তায় জননেত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক তত্ত্বাবধানে হলটি তৈরি করা হয়েছে। তার নির্দেশেই, এখানে যেহেতু চীনা গভর্নমেন্টের সহায়তা আছে, সেজন্য যারা আদিবাসী, নৃগোষ্ঠী এবং পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী, তাদের জন্য ও বুদ্ধিস্টদের জন্য ৬০ শতাংশ সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তবে বিষয়টিকে ধর্মীয় বিভাজন হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্রী হলে থাকতে কোনো ধর্মের ছাত্রীদের কোনোরকম সমস্যা হচ্ছে না। তবুও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশে নির্দিষ্ট একটি ধর্মের ছাত্রীদের জন্য আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে কেন? অন্য ধর্ম বা জাতি থেকে কোনো একটি ধর্ম বা জাতিকে আলাদা করে দেয়া অন্যায়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের সভাপতি আল আমিন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, এখানে বিভিন্ন ধর্মের শিক্ষার্থী শান্তিপূর্ণভাবে পড়াশুনা করছে। ধর্মের ভিত্তিতে ছাত্রীদের জন্য হল করা হলে দেশের সংবিধানের মূলনীতি ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ এর সাথে সাংঘর্ষিক হয়। অসাম্প্রদায়িকতার মূলনীতি নিয়ে যেহেতু এ দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেহেতু কোন নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে ৬০ শতাংশ আসন দিয়ে হল বরাদ্দ করা সত্যিই দুঃখজনক। চবি কর্তৃপক্ষের এমন অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফাল্গুনী দাস বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা অধিকাংশই পাহাড়ি। তাদের সাথে আমাদের ধর্ম, চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদিতে একটা পার্থক্য আছে। কিন্তু আমরা যখন একসাথে মিলেমিশে থাকবো তখন একজন অপরজনকে বুঝতে পারবো, জানতে পারবো। বিপরীতে তারা যখন আলাদা হয়ে যাবে তখন তাদেরকেও আমরা বুঝতে পারবো না, আর তারাও আমাদেরকে বুঝতে পারবে না। তখন দেখা যাবে আরও নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এভাবে বিভাজন করাটা ঠিক না। কেননা, অদূর ভবিষ্যতে এটি থেকে অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে, যেহেতু এটি একটি সাম্প্রদায়িক ইস্যু, সেহেতু সকল ছাত্র, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এক সাথে বসে এর একটি সমাধান খোঁজা দরকার।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দল, মত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থী মিলেমিশে বসবাস করছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সেখানে নির্দিষ্ট করে একটি ধর্মের ছাত্রীদের জন্য আসন কোটা রাখা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দর্শনে কোনো সুযোগ নেই।