ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শ্রীমঙ্গলে সিলিকা বালু উত্তোলন, ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

সালেহ আহমদ স’লিপক:

 

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ব্যাপক আকারে চলছে সিলিকা বালুর অবৈধ ব্যবসা। কৃষি জমিতে শ্যালো মেশিন বসিয়ে সিলিকা বালু উত্তোলন করা হচ্ছে অবৈধভাবে। এতেকরে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পরিবেশও মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে।

 

জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৫০ থেকে দেড়শ ফুট গভীর গর্ত করে সিলিকা বালু তোলা হচ্ছে। নেপথ্যে প্রভাবশালীরা থাকায় কেউ বাঁধা দিতে সাহস পায় না। কেউ কিছু বলতে গেলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ধানি জমির মাটি নিচের দিকে ধেবে যায়। ফলে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ভালো হচ্ছেনা ফলন। রাতদিন বালু ভর্তি গাড়িগুলো প্রকাশ্যে চলাচল করছে। সরকারি কোনো অনুমোদন না নিয়ে অবৈধ সিলিকা বালু উত্তোলন করা হলেও প্রশাসনের কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেই। প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় প্রশাসনের লোকজনও মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক হাইকোর্টে এক রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে ইজারা বন্দোবস্ততে স্থগিতাদেশ প্রদান করা হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলার ২৯টি সিলিকা বালুর ছড়ায়। ২০১৮ সালে আদালত এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট (ইআইএ) প্রাপ্তিসাপেক্ষে ছড়ার ইজারার অনুমোদন দিতে বলা হয়। ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার কার্যালয় থেকে ১৪২৮ বাংলা সনের বৈশাখ মাস হতে ১৪২৯ বাংলা সনের ৩০ চৈত্র ২ বছরের জন্য ইজারা সংক্রান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়।

 

এতে উপজেলার ২৯টি ছড়ার ইজারা বন্দোবস্ত পান ইজারাদাররা। ওই ২৯টি ছড়ার ইজারাদাররা শুধু ২৫ শতাংশ সিকিউরিটির টাকা জমা দিয়ে পরিবেশ ছাড়পত্র ‘ইআইএ’ সংগ্রহের জটিলতার অজুহাতে দেখিয়ে বিগত দুই বছর রাজস্বের বাকি টাকা জমা না দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। এতে শুধু বিগত দুই বছরে ভ্যাট, ট্যাক্স ও ইজারা মূল্যসহ এই বালুমহাল থেকে ইজারাদাররা ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৪ হাজার ৫৬২ টাকা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন।

 

বিগত ২০১৬ সাল থেকে হিসাব করলে সরকার এ খাত থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আহরণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাকি কোনো ইজারাদার ‘ইআইএ’ জমা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার তাগিদ অনুভব করছেন না এবং তারা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। তারা পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতির কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না।

বর্তমানে ১৪৩০ বাংলা সন চলমান কিন্তু ১৪২৯ বাংলা সনে আগের ওই দরপত্রের ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ নতুন ইজারা দরপত্র আহ্বান করছে না।ছোট বড় ২৯টি ছড়ার মধ্যে ছয়টি ছড়া বৈধতা রয়েছে বাকি ২২টি ছড়ায় বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা। এতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত সরকার।

 

ভুনবীর এলাার স্থানীয় কৃষক মোঃ হাসান মিয়া বলেন, সরকার অনুমতি না দিলেও কীভাবে বালু তোলা হচ্ছে কেউ জানে না। ভুনবীর এলাকায় এত বড় বড় গর্ত আছে, যা যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। ১২ থেকে ১৪ একর জায়গার বালু তোলা হয়েছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। সিলিকা বালু উত্তোলন করলে জমি নষ্ট হয়। ভালো ফসল ফলানো যায় না।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক কৃষক বলেন, জমি থেকে বালু তোলা হয়। সরকারি কর্মকর্তা নাই, দেখেও না, চেকও করে না। প্রতিনিয়ত বালু তুলে ফেললে জমির ফসলো তো আর হবেই না। অভিযোগ করে করে পাহাড় বানিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। প্রশাসনের কোনো গুরুত্ব নেই।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়কারী আ স ম সালেহ সোহেল বলেন, শ্রীমঙ্গলের ভুনবীর ইউনিয়নের আশপাশের ইউনিয়নগুলোর সিলিকা বালু অনেক দামি। সেই বালু উত্তোলনে সরকারের নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু সেটি অমান্য করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কীভাবে বালু তোলা হয় এবং প্রশাসনের কি এ ব্যাপারে কোনো দায়িত্ব নেই? প্রশ্ন করেন তিনি।

 

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, আমাদের কাছে সংবাদ আসা মাত্রই আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা করে থাকি। দরকার হলে আবারও মোবাইল কোর্ট পাঠাবো। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।