বিশেষ প্রতিনিধি, চকরিয়া:
ইউপি চেয়ারম্যান মিরাজ যেনো এলাকায় এক মূর্তিমান আতঙ্ক । তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অন্তহীন অভিযোগ। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে তার বিরুদ্ধে একের পর এক জমা পড়েছে অভিযোগের পাহাড়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেইসব অভিযোগ নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।প্রতিপক্ষের লোকজনকে দমাতে চেয়ারম্যান মিরাজের রয়েছে এক সুকৌশলি পন্থা। তার অনুগত ও আস্থাভাজন লোকজন দিয়ে প্রতিপক্ষ ও প্রতিবাদী লোকজনের বিরুদ্ধে একের পর এক সাজানো-মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের দমিয়ে রাখেন। করেন শায়েস্তা।
মেহেরাজ হোসেন ওরফে মিরাজ; কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। সরেজমিনে বহুল আলোচিত-সমালোচিত এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে পাওয়া যায় আঁতকে উঠার মতো একের পর এক অভিযোগ। চাঁদা দাবি, জবরদখল, বনজ সম্পদ উজাড়, বালু উত্তোলন, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় হয়রানির অন্তহীন অভিযোগ তুললেন এলাকার বিভিন্ন স্তরের লোকজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেয়ারম্যান মিরাজের প্রায় সব অপকর্মের সহযোগী পরিষদের দফাদার শাহেদ। চেয়ারম্যানের আস্কারায় তিনিও হয়েছেন রীতিমতো আঙুল ফুলে কলাগাছ। হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য আমেনা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যদেরও চেয়ারম্যান মিরাজ দিয়েছেন অর্ধডজন মামলা। আমেনা বেগম বলেন, ‘মিরাজ ও সাঙ্গপাঙ্গরা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে তার কয়েকটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও বেপরোয়া লুটপাট চালিয়েছেন। তারা লাখ খানেক নগদ টাকা, তার পুত্রবধূর স্বর্ণালংকার লুটের পাশাপাশি বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ দিয়েছেন। এতে অন্তত ২০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি আমেনার। হারবাংয়ের রোসাইঙ্গাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় চেয়ারম্যান মিরাজের আরেক তেলেসমাতি কাণ্ড। ওই এলাকার একটি রাস্তা তৈরির জন্য মিরাজ গায়ের জোরে স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা শহিদুল ইসলামের বসতবাড়ির সীমানাপ্রচীর ভেঙ্গে দিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা করার জন্য অপর প্রান্তে সরকারি বিস্তর জমি থাকার পরও শহিদুল ইসলামের পাকা সীমানাপ্রচীর ভেঙ্গে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তাটির টেন্ডার হওয়ার পর ঠিকাদার আবদুল হাকিম কিছু না করা সত্বেও চেয়ারম্যান মিরাজ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। তার অনৈতিক দাবি পূরণ না করায় ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার শাহেদের নেতৃত্বে অন্যান্যরা আমার বসতবাড়ির সীমানাপ্রাচীর ভেঙ্গে রাস্তা সম্প্রসারণ করে। অথচ অপরপাশে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে।’
শহিদুল ইসলামের দাবি, চেয়ারম্যান মিরাজের অন্যায় দাবি মেনে না নেয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে দফাদার শাহেদকে বাদী বানিয়ে সাজানো মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এবিষয়ে কথা হয় হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজউদ্দিন মিরাজের সাথে। সাবেক নারী ইউপি সদস্য আমেনা বেগমের বসতবাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা তাদের নিজেদের ভাই-বোনের মধ্যকার বিরোধ বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া কৃষক লীগনেতা শহিদুল ইসলামের বসতবাড়ির কোনো সীমানাপ্রাচীর ভাঙা হয়নি বলেও জানান তিনি। মিরাজের দাবি, সরকারি রাস্তার কাজ করার সময় ঠিকাদার নিজেই রাস্তার পাশে দেয়া কাঁটাতারের বেড়া সরিয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার শাহেদ কেনো নিজে বাদী হয়ে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মিরাজ বলেন, ‘দফাদার হামলার শিকার হওয়ায় সে শহিদুল ইসলামকে আসামি করে মামলা করেছে।’