কক্সবাজার অফিস :
কক্সবাজারের টেকনাফে অপহরণের শিকার হওয়া পল্লী চিকিৎসকসহ দুই ব্যক্তির প্রাণ বাঁচাতে অপহরণকারীদের দাবিকৃত ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হয়েছে। মুক্তি পাওয়া অপহৃতরা এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।
সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত এগারোটার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের শীলখালী সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় পল্লী চিকিৎসকসহ দুই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। এরপর পুলিশের অভিযানিক দল সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে হেফাজতে নেয়।
অক্ষত অবস্থায় পল্লী চিকিৎসক জহিরসহ দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করার সত্যতা নিশ্চিত করে, টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন,অপহৃত দুই ব্যক্তিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করার জন্য গতকাল ঘটে যাওয়া ঘটনার পর থেকে পুলিশের বেশ কয়েকটি অভিযানিক দল ঘটনাস্থলসহ টেকনাফের গহীন পাহাড় গুলোতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে পুলিশের পাশাপাশি টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোকনসহ সাধারণ মানুষের সহযোগিতা ছিল লক্ষণীয়। পুলিশ ও জনতার যৌথ অভিযানে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। অবশেষে তাদেরকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। তবে মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়টি তিনি অবগত নন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
অপহৃত পল্লী চিকিৎসক জহির উদ্দিন উখিয়া উপজেলার থাইংখালী এলাকার মাওলানা জাকের হোসেনের পুত্র এবং উখিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কমরুদ্দিন মুকুলের ভাই।
অপহরণের শিকার জহির উদ্দিনের ছোট ভাই সাংবাদিক কমরুদ্দিন মুকুল জানান, তার ভাই শাপলাপুর এলাকায় প্রতিদিনের মতো চেম্বার শেষে সিএনজি অটোরিকশাযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। তার সঙ্গে একজন যাত্রীও ছিলেন। পথিমধ্যে শামলাপুর-হোয়াইক্যং সড়কে আসলে তাদের দুই জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। পরে সিএনজি ড্রাইভার বিষয়টি পরিবারকে জানায়। এরপর থেকে অপহরণকারীরা মোবাইলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের মুঠোফোন ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল। তবে তার ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরা সর্বশেষ অপহরণকারীদেরকে কত টাকা মুক্তিপণ দিয়েছে তার সত্যতা তিনি জানাতে পারেন নি।
এদিকে পল্লী চিকিৎসক জহির উদ্দিন ও অপর জন অপহরণকারীদের কবল থেকে ফিরে আসার পর থেকে ক্ষনিকের মধ্যে শোসাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যায় ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে পল্লী চিকিৎসকসহ দুই ব্যক্তি প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।
অপহৃত পল্লী চিকিৎসকের ভাগ্নির স্বামী আল আব্দূল্লাহ তার ফেইসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন আমার মামা শ্বশুরকে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে মুক্তি দিয়েছে অপহরণকারীরা।
বিগত ২০২৩ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২০ জন ব্যক্তি অপহরণের শিকার হয়। এর মধ্যে ৬২ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে ওই এলাকায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নাগরিক। পাশাপাশি অপহরণের শিকার হওয়া ভুক্তভোগী পরিবারের তথ্যমতে, অপহৃতদের মধ্যে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি মুক্তিপণ দিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচিয়েছে।