আবদুল হাকিম রানা :
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার উদ্যোগে চট্রগ্রাম প্রেসক্লাবের সুলতান আহমদ মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল: দক্ষিণ চট্টগ্রামের উন্নয়ন সম্ভাবনা’ শীর্ষক আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন,
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে ওয়ান সিটি টু টাউন করার করার লক্ষ্যে কর্ণফূলীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল উদ্বোধন করে যে অনন্য ইতিহাস রচনা করেছেন তা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। আমরা সরকারের এ দৃশ্যমান উন্নয়নের প্রশংসা করে বলতে চাই, এ টানেলের ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, কর্ণফূলী, পটিয়াসহ সবকটি উপজেলার যোগাযোগ ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। শিল্পায়ন ও পর্যটনের উপর অপার সম্ভাবনা ও বাস্তবতার আলো দেখবে।
তার পাশাপাশি সেদিন দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত জেলা বাস্তবায়ন ও কালুরঘাট সেতু এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামে স্বাতন্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা ও প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু তা হয়তো দেশের চলমান নানা পরিস্থিতির কারণে প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে আমরা না শুনলেও আশার প্রহর গুণবো, যেন সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে অচিরেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। অনুষ্ঠানে তারা ১২ দফা দাবিও নামা পেশ করেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি মাওলানা ফেরদৌসুল আলম খান।গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব অধ্যক্ষ স.উ.ম. আবদুস সামাদ।দক্ষিণ জেলা সেক্রেটারি আলী হোসাইনের সঞ্চালনায় এতে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ সোলাইমান ফরিদ।
প্রধান অতিথি অধ্যক্ষ সামাদ বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের মেগা প্রজেক্ট গ্রহণকে আমরা সাধুবাদ জানাই। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে একটি নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, টানেল উদ্বোধনী জনসভায় কোন মন্ত্রী, এমপি কিংবা আওয়ামী লীগের কোন নেতা টানেলের মাধ্যমে কর্ণফুলীর দু’পাড়ে ওয়ান সিটি টু টাউন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কথা বলেননি। চট্টগ্রামের নেতারা ভুলে গেছেন যে, চট্টগ্রামে পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটিও নেই। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহান নেতা মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এক হাজার একর জমি ক্রয় করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য রেখে গেছেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আমূল পরিবর্তন হবে এ বিষয়ে কোন ঘোষণা বা বক্তব্য না আসায় জনগণ বিস্মিত হয়েছেন।
সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য চট্টগ্রামের দুঃখ- কালুরঘাট সেতুর কথাও কারো বক্তব্যে পেলাম না, এমনকি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক ছয় লেইন করার কথা ভুলেও উচ্চারণ করেন নি। চট্টল দরদী নেতারা তৈলশাস্ত্র চর্চায় ব্যস্ত ছিলেন। তারা জনতার দাবীর কথা বেমালুম ভুলে গেছেন। এতে জনগণ আশাহত হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতেই যদি কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ করা হয়, তবে তা মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ডিটেইলড মাস্টারপ্ল্যান ভিত্তিক পরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন হলেই টানেলের সুফল আসবে।
লিখিত প্রবন্ধে সোলাইমান ফরিদ দক্ষিণ চট্টগ্রামের কাঙ্খিত উন্নয়নের জন্য ১২ দফা দাবি পেশ করেন।
দাবিগুলো হল- ওয়ান সিটি টু টাউন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্পায়ন ও পর্যটনের অপার সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে কর্ণফুলী, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, পটিয়া, বোয়ালখালী, বাঁশখালী ও মহেশখালী ঘিরে একশত বছরের একটি ডিটেইলড মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, কালুরঘাটে একটি নতুন সেতু দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে, ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চতর শিক্ষার সহজ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিশাল দেয়াং পাহাড়ে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর নামে দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিশিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানী প্রফেসর ডাঃ নুরুল ইসলামের নামে একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ/একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে, টানেলের পরিপূর্ণ সুফল দ্রুত পেতে হলে টানেলের পূর্বাংশে তথা কর্ণফুলির দক্ষিন পাড়ে, কর্ণফুলী, পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, বাঁশখালী অংশে পরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, সাবেক পটিয়া মহকুমাকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম জেলায় রূপান্তর করতে হবে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষকে বন্যা থেকে রক্ষা করার জন্য দোহাজারী, কক্সবাজার রেললাইনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মান করতে হবে, বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন জোন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে যাতায়াত দ্রুত ও সহজ করতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক প্রকল্প ছয় লেইনের দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে, সমুদ্র পাড় ঘেঁষে মীরসরাই, আনোয়ারা হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন-ড্রাইভ মহাসড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নসহ চট্টগ্রাম-বাঁশখালী- টইটং সড়ককে কক্সবাজার পর্যন্ত মহাসড়কে রূপান্তর করতে হবে, পটিয়া শ্রীমাই খালের উপরে ব্রিটিশ আমলের উৎপাদনকৃত স্থানে খনিজ গ্যাস সম্পদ পুনরায় উৎপাদনের পদক্ষেপ নিতে হবে, পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ পাহাড়ী এলাকায় অমূল্য খনিজ সম্পদ হোয়াইট স্টোন তথা সাদা পাথরের পাহাড়কে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে ও পটিয়া হাইদগাঁও-রাঙ্গুনীয়া বাঙ্গালহালিয়া সড়ক বাস্তবায়ন করে বিশাল পার্বত্য অঞ্চল- রাঙ্গুনীয়া ও বান্দরবান কেন্দ্রীক সবজি বাজারজাতকরণে সহজ ও সাশ্রয়ের মাধ্যমে নিন্মবিত্ত জনশ্রেণীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথ সুগম করা।
এতে আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক পূর্বদেশের সহকারী সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল, ডায়মন্ড সিমেন্ট গ্রুপের ডি.জি.এম মোহাম্মদ আবদুর রহিম, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সোহেল মোহাম্মদ ফখরুউদ্দিন, সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান সৈয়দ এয়ার মোহাম্মদ পেয়ারু, মাস্টার আবুল হোসাইন, মহিউল আলম চৌধুরী, সৈয়দ আমান উল্লাহ সমরকন্দি, কাজী শাকের আহম্মদ চৌধুরী, ডি আই এম জাহাঙ্গীর আলম, মাস্টার আলী খান, মো: জাহাঙ্গীর আলম, কলিম উদ্দিন, বেলাল উদ্দিন আলমদার, জি এম শাহাদাত হোসাইন মানিক, ডা: নাজিম উদ্দিন, যুবনেতা মামুন উদ্দিন সিদ্দিকী, ছাত্রনেতা তারিফ হোসেন, নুরুদ্দিন প্রমুখ।