ই-পেপার | সোমবার , ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

খাগড়াছড়িতে শিক্ষক নিয়োগ তালিকা নিয়ে নানান প্রশ্ন

আলমগীর হোসেন, খাগড়াছড়ি :

 

খাগড়াছড়ি জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় ফেল করেছেন, তবু তাঁর রোল নম্বর রয়েছে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত ব্যক্তিদের তালিকায়। বিষয়টি নজরে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনায় মেতেছেন অনেকে। সমালোচনার মুখে ফেল করা ওই শিক্ষার্থীকে বাদ দিয়ে আবারও নিয়োগের জন্য চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সেই তালিকা নিয়েও তৈরি হয়েছে নানান প্রশ্ন।

 

খাগড়াছড়িতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে তৈরি হয়েছে এমন হযবরল অবস্থা। নিয়োগ নিয়ে উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ। তবে ফেল করা প্রার্থীর রোল নম্বর চুড়ান্ত তালিকায় আসাকে মুদ্রণের ভুল জানিয়ে নিয়োগে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের।

 

জানা যায়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী শিক্ষক পদের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় গত ২২ সেপ্টেম্বর। সেখানে ১ হাজার ২৪৯ জন প্রার্থীকে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। পরে ২ থেকে ৫ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে গত শুক্রবার চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত ৩৩৭ জনের রোল নম্বর প্রকাশ করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত ব্যক্তিদের ওই তালিকায় ৭৭১ রোল নম্বরের প্রার্থীকে রাখা হয়, যদিও তাঁর রোল নম্বর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকায় ছিলনা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনায় মেতে ওঠেন প্রার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে লিখিত পরীক্ষায় ফেল করা ওই প্রার্থীকে বাদ দিয়ে রোববার সংশোধিত চুড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে পার্বত্য জেলা পরিষদ। তবে সংশোধিত ফলাফলে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে আরও চারজনকে বাদ দিয়ে নতুন করে চারজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

 

অভিযুক্ত ৭৭১ রোল নম্বরটি তালিকা থেকে বাদ দিতে গিয়ে এবার নতুন করে ৪টি রোল নম্বরে পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে। সংশোধিত ফলাফল থেকে এবার বাদ পড়েছে ৭৭১, ১৬৫৪, ৩২১৬ ও ৩৮৩৮ রোল নম্বরধারী ব্যক্তিরা। আর তাদের জায়গায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নতুন চার জনকে। সেই চারজনের রোল নম্বরগুলো হলো- ৮৮৪, ২০৮২, ৩২৪৬ ও ৩৮৩৭।

 

পরীক্ষার্থী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, চুড়ান্ত তালিকা থেকে একজনকে বাদ দিতে গিয়ে চারজনের রোল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সেই জায়গাগুলোতে নতুন চার জনকে অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

দেখা গেছে, গত ৬ অক্টোবর প্রকাশিত চুড়ান্ত ফলাফল নিয়ে সমালোচনার মুখে কর্তৃপক্ষ শনিবার (৭ অক্টোবর) সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করে। ওয়েবসাইটে সেই ফলাফল রোববার প্রকাশ করে।

 

শিক্ষ নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য পার্থ ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ‘নিয়োগ দেওয়ার কথা ২৫৭ জনকে, অথচ চুড়ান্ত করা হয়েছে ৩৩৭ জনকে। লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ প্রশ্নে। নিয়োগে কোনো নিয়ম মানা হয়নি, কোটা সংরক্ষণ করা হয়নি। জেলা প্রশাসকের কোনো প্রতিনিধিও ছিলনা। মেধাক্রম অনুসারে নামসহ ফল প্রকাশের পরিবর্তে কেবল রোল নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে।  লিখিত পরীক্ষায় ফেল করা প্রার্থী চুড়ান্ত ফলাফলে থাকা ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রক্রিয়া চালানোর প্রমাণ।

 

ভুল ও নানা অনিয়মের প্রতিবাদে রোববার, ৮ অক্টোবর সকালে খাগড়াছড়ি জেলাতে ভুক্তভোগীরা মানবন্ধন করে। তারা এইসব নাটকীয় নিয়োগ ও ভুল বলে অনিয়মকে নিয়ম করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে ভুক্তভোগীরা।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪