ই-পেপার | শনিবার , ৬ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ময়মনসিংহে ভয়াবহ বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একজনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহে স্মরণকালের ভয়াবহ বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহ নগরীর বেশির ভাগ সড়ক। অনেক এলাকায় বাসাবাড়িতেও উঠে পরেছে পানি। বৃহস্পতিবার ৫ অক্টোবর সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত চলে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত। এর মধ্যে গতকাল বিকেল ৪টা থেকে রাতভর চলে ভারি বর্ষণ।

 

এতে তলিয়ে যায় ময়মনসিংহ নগরীর বেশির ভাগ রাস্তাঘাট। হাঁটু থেকে কোমর পানিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে।

 

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সকাল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় কমতে শুরু করেছে পানি। তবে বিকেল পর্যন্তও কিছু কিছু এলাকায় পানি জমে থাকতে দেখা যায়। এ পানি দ্রুত সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে কাজ করছে সিটি কর্পোরেশনের একাধিক টিম।

 

এদিকে নগরীর ব্রাহ্মপল্লী এলাকায় বাসায় হাঁটু পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছেন মোঃ পলি (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বসতঘরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টিতে ময়মনসিংহ নগরীর গাঙ্গিনারপাড়, ধোপাখোলা, চরপাড়া, নতুন বাজার, স্টেশন রোড, নয়াপাড়া, ব্রাহ্মপল্লী, কালিবাড়ি, গুলকিবাড়ি, আমলাপাড়া, ভাটিকাশর, কালিবাড়িসহ নগরীর অনেক এলাকা হাঁটু ও কোমর সমান পানি জমে। এসব এলাকার বাসাবাড়ি, দোকানপাট, মসজিদ, মাদরাসা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠে।

 

অনেক পরিবারের সদস্যকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। শুক্রবার সকালের মধ্যে বেশকিছু এলাকার পানি নেমে গেলেও সানকিপাড়া, গুলকিবাড়ী, কপিক্ষেত, আকুয়া, ভাটিকাশরসহ বেশকিছু এলাকায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত পানি জমে থাকতে দেখা যায়।

 

সানকিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মইনুল হোসেন সিএনএন বাংলা২৪কে বলেন, আমার ৪০ বছর বয়সে এমন বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা দেখিনি। এলাকার প্রত্যেকটা বাসায় পানি উঠে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি না হলে দুই দিনের মধ্যে পানি সরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

 

অটোরিকশাচালক হামিদ মিয়া বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে দুই দিন ধরে কোনো আয় নেই। পানির মধ্যে পেটের ক্ষুধা নিয়ে বের হয়ে বিপাকে পড়েছি। মনে হচ্ছে রিকশার ব্যাটারি একটি নষ্ট হয়ে গেছে।

 

এদিকে, নগরের আকুয়া এলাকায় দেখা যায়, দুটি খাল উপচে ব্যাপকভাবে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন নালা দিয়ে পানি দ্রুত গতিতে ব্রহ্মপুত্র নদে নামছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ভারি বৃষ্টি না হলে দ্রুতই অবস্থার উন্নতি হবে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক জাকিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতাল চত্বরের কিছু এলাকা নিচু হওয়ায় পানি ঢুকে পড়েছে। স্টাফ কোয়ার্টারগুলোর নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর দিয়ে চিকিৎসাসেবা চালু রাখা ছিল। তবে সকাল থেকে বিকল্প বিদ্যুৎ লাইনে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা চালু রয়েছে।

 

রেলওয়ের ময়মনসিংহ অঞ্চলের সহকারী প্রকৌশলী আকরাম আলী সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে রেলপথ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সিগন্যাল পয়েন্ট কাজ করছিল না। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছিল।

 

টানা বৃষ্টিতে রাতে নগরীর কেওয়াটখালী এলাকার পাওয়ার গ্রিডের কন্টোল রুমে পানি উঠে যায়। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তিন ঘণ্টা কন্ট্রোল রুমের পানি সেঁচে বের করেন। এ ঘটনায় কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।

 

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহের (দক্ষিণ) নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দ্রজিৎ দেবনাথ বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে কেওয়াটখালী পাওয়ার গ্রিডের কন্ট্রোল রুমে পানি ঢুকলে সরবরাহ বেশ কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এতে বেশকিছু এলাকার মানুষকে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

 

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু সাংবাদিকদের বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বৃষ্টিপাত হয়েছে ময়মনসিংহে। এত বৃষ্টি আমার জীবনেও দেখিনি। খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন সঠিকভাবে না হওয়ায় নগরীতে জলাবদ্ধতা বেশি হয়েছে। যেসব এলাকায় এখনো পানি জমে আছে সেসব এলাকার ভোগান্তি নিরসন করতে সিটি কর্পোরেশন কাজ করছে।

 

অপরদিকে ভারি বর্ষণে তলিয়ে গেছে ধানখেত, ভেসে গেছে পুকুর-ঘেরের মাছ। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর এলাকার বাসিন্দা রুকন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, টানা বর্ষণে আমার ১০ কাটা ধানখেত পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। পানি দ্রুত না কমলে জমিতে ধান পচে যাবে।

ফুলবাড়িয়া উপজেলার মৎস্যচাষি আব্দুল হক বলেন, ৩০০ শতাংশের দুইটি ফিশারি ডুবে সব মাছ ভেসে গেছে। এতে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মতিউজ্জামান বলেন, জেলার সব উপজেলায় অনেক ধানখেত তলিয়ে গেছে। তবে, কী পরিমাণ ধানখেত তলিয়েছে তার হিসাব এখনো করা হয়নি। পানি নেমে গেলে হিসাব করা যাবে।

 

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল রাতের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছ চাষিরা। খামারিদের ফিশারির মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া প্রতি উপজেলায় অনেক ধানখেত তলিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির এখনো সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে, হিসাব সংগ্রহ করছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪