বিশেষ প্রতিনিধি:
‘আমি মন্দিরের ভেতরে ছিলাম ৩-৪ জন লোক আইস্যা আমারে কইলো ‘চেয়ারম্যান তোরে পরিষদে ডাকছে’। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের ভেতর ‘আমারে আটকাইয়া মাইরধর করছে শাহাবুর চেয়ারম্যান, তাঁর লোক দিয়াও মারাইছে’। ‘আমারে মাইরা, আমার পকেটে গাঁজা দিয়া ভিডিও করাইয়া হেরপর থানার পুলিশ ডাকাইয়া পুলিশের হাতে ধরাইয়া দিছে শাহাবুর চেয়ারম্যান’। ‘হেরপর আমারে থানায় পাঠায়, আমি থানার সধ্যে সারারাত জাগাইয়া থাহি’।
‘পরদিন আমি থানার তন বাইর হই’। ‘আমি গাঁজা খাইও না, বেচিও না’। এ প্রতিবেদককে কথাগুলো কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছিলেন, বিকাশ মন্ডল। তিনি ভাঙ্গা উপজেলার নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিন আকন বাড়িয়া গ্রামের বিজয় মন্ডলের ছেলে। বৃহষ্পতিবার (৩১ আগষ্ট) এ প্রতিবেদকের কাছে এমনই ঘটনার বর্ননা দেন বিকাশ মন্ডল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
প্রায় ২৫ দিন আগে বিকাশের সঙ্গে এমন অমানুবিক অত্যাচার করা হয় নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে। এতে বিকাশসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা সামাজিক-মানুষিক চরম বিষন্নতার মধ্যে দিন যাপন করছেন বলেও অভিযোগ করেন বিকাশ ও তার পরিবারের সদসদ্যরা। তবে, ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহীন আলম শাহাবুর তাঁর বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন।
বিকাশের বড় ভাই বিষ্ণু মন্ডল ও বৌদি রুম্পা রানী জানান, নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিন আকন বাড়িয়ার ১৬নং মৌজায় আরএস ৪৬৯ ও বিএস ৪৮০ নং জমিতে তাদের দেড় শতাংশ জমি ৫ লাখ টাকায় কিনে নেন চেয়ারম্যান শাহাবুর। সেখানে ক্লাবঘর বানানোর কথা বলে সেই জমি বিক্রির মাত্র ২ লাখ টাকা দিয়ে তাদেরকে কাছ থেকে জমিটি রেজিষ্ট্রি করে নেন চেয়ারম্যান। কিন্তু, জমি বিক্রির পাওনা ৩ লাখ টাকা গত এক বছর যাবত না দিয়ে উল্টো ডাক্তার বাজারে তাঁদের পৈত্রিক আরও ৪ শতাংশ জমি দখলের পায়তারা করছেন চেয়ারম্যান শাহাবুর ও স্থানীয় ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার মাসুদ মাতুব্বর। সেখানে তারা গতকাল রাতেও ইট-বালি ও বাস খুঁটি দিয়ে দখলের চেষ্টা করছেন। বিকাশের ভাই বিষ্ণু মন্ডল জানান, তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে সিমেন্টের খুঁটি ও টিনের বেড়া দিয়ে তাদের পথরোধ করেছেন চেয়ারম্যান ও তার অনুসারিরা। এতে বর্তমানে তাঁরা বাড়ির বাইরে যেতে বাড়ি সংলগ্ন জঙ্গল ও পানির মধ্য দিয়ে পার হতে হচ্ছে তাদেও সবাইকে। এ ঘটনায় বুধবার (৩০ জুলাই) রাতে জাতীয় সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে বিষয়টি জানানোর পর সেখান থেকে থানা পুলিশকে অবগত করতে বলা হয় তাদেরকে। কিন্তু, চেয়ারম্যান ও মেম্বার স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না তারা। এর আগেও একাধিকবার ভাঙ্গা থানা পুলিশ ও জেলা প্রশাসক বরাবর গত ৩০ জানুয়ারী শাহীন আলম শাহাবুর চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজনের বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও কোন আশানুরুপ ফল পায়নি তারা । বিষ্ণু মন্ডলের স্ত্রী রুম্পা রানী বলেন, তিনি গতকাল স্থানীয় একটি বাজারে বাজার করতে গেলে চেয়ারম্যানের ভাগ্নে তাকে হুমকি দেয় ‘তোরা সংখ্যালঘু, তোদেরকে এই গ্রামে একঘরে করা হবে’। তাদের সঙ্গে এমন অবিচারের ঘটনায় একটি সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টিসহ সাহায্য কামনা করেছেন সংখ্যালঘু পরিবারটি।
অভিযোগের বিষয়ে নুরুল্লাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহীন আলম শাহাবুর দাবি করেন, বিকাশ মন্ডল একজন নেশাগ্রস্থ মানুষ। সম্প্রতি সে মাদক সেবন অবস্থায় স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েন। সেখানে উপস্থিত লোকজন তাঁর কাছে নিয়ে আসেন বিকাশকে। পরে মাদকসহ বিকাশকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। এছাড়াও বিষ্ণু ও তাঁর পরিবার একটি মামলাবাজ পরিবার। ৩ লাখ টাকায় তাদের কাছ থেকে দেড় শতাংশ একটি জমি ক্রয় বাবদ সমস্ত টাকাই তিনি ইতোমধ্যে পরিশোধ করে দলিল করে নিয়েছেন। বিকাশ ও তাঁর পরিবারের সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে তিনি দাবি করেন। এ বিষয়ে জানতে ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য মাসুদ মাতুব্বরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়ারুল ইসলাম জানান, আইনের উর্দ্ধে কেউ নয়। সে যেই হোক। ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তিনি লিখিত কোন অভিযোগ পাননি। তবে, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।