ই-পেপার | শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফায়ার সার্ভিসের ডিজি’র ভাইয়ের নিয়ন্ত্রণে টেন্ডার-বাণিজ্য

ঢাকা অফিস:

নিয়োগ ও বদলি-বাণিজ্য, নিজ ভাইকে দিয়ে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ বেশ কিছু গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। দুদক তা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে। দুদক থেকে লিখিত চিঠি পাওয়ার পর অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সুরক্ষা বিভাগ।

এ নিয়ে ২ আগস্ট সেবা সুরক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহির্গমন) মো. সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) ফয়সাল আহমেদ এবং সিনিয়র সহকারী সচিব (নিরাপত্তা-৩) আফরোজা আক্তার রিবা।
এ বিষয়ে জানতে তদন্ত কমিটির প্রধান মো. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

ফায়ার সার্ভিসের ডিজির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে বলা হয়, ডিজির ছোট ভাই নুরউদ্দিন আনিস ও সালাউদ্দিন মিলে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটাচ্ছেন। অধিদপ্তরে একটি অপারেশন বিভাগ থাকার পরও মহাপরিচালক, তাঁর ভাই এবং তাঁদের সিন্ডিকেট নিয়োগ, বদলি ও টেন্ডার-বাণিজ্য, কোটেশন-বাণিজ্য করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ ছাড়া ঢাকা শহরের সব দল ও ফায়ার ফাইটার, লিডার, ড্রাইভার, সাব অফিসার, স্টেশন অফিসার, ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর, সিনিয়র স্টেশন অফিসার, উপসহকারী পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও উপপরিচালকদের ঢাকার বাইরে বদলির মাধ্যমে ঢাকা শহরে অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণে দক্ষ কর্মীর সংকট সৃষ্টির অভিযোগও উঠেছে মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে।

 

এ ছাড়া যোগদানের পর ৩৫০ জনকে অনিয়মের মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে ডিজি মাইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তাঁর ভাইয়ের দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগে বলা হয়, ডিজির ছোট ভাই নুর উদ্দিন আনিসকে প্রথম শ্রেণির পদে বদলি জন্য ২০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। ফলে অধিদপ্তরে অযোগ্য অনেক কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে যান। বহুতল ভবনের ছাড়পত্র ও সেফটি প্ল্যান পাস করানোর জন্যও তাঁদের টাকা দিতে হয়।

 

সম্প্রতি সুরক্ষা সেবা বিভাগ বদলির নীতিমালা প্রণয়ন করে প্রথম শ্রেণি কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ে নিয়ে গেছে। এতে মহাপরিচালক ক্ষুব্ধ হন দাবি করে অভিযোগকারী জানান, ক্রয়সংক্রান্ত কাজেও ছোট ভাইকে দিয়ে তিনি সব নিয়ন্ত্রণ করেন। নীতিমালা অনুযায়ী, সারা বছর সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকার বেশি কোটেশন পদ্ধতি অনুযায়ী ক্রয় করা যাবে না বলে উল্লেখ থাকলেও গত অর্থবছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে এভাবে। অধিদপ্তরের মোট ২১৭ জন ওয়্যারহাউস পরিদর্শক কর্মরত আছে; যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ফায়ার লাইসেন্স দিয়ে থাকে। এ জন্য এলাকাভেদে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা মাসোহারা আদায় করা হয়ে থাকে। এসব টাকার একটি অংশ মহাপরিচালকের ভাগ ভাই নুর উদ্দিন আনিসের পকেটে যায়। পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং সেন্টারে বাইরের কোনো খাবার কেউ কিনতে পারেন না। সেখানেও ছোট ভাই নুর উদ্দিন আনিস কর্মচারীর মাধ্যমে ক্যানটিন পরিচালনা করে থাকেন। সেখানে জিনিসপত্রের দাম খুব বেশি।

 

এসব অভিযোগের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ যেহেতু জানি না, তাহলে মন্তব্য করব কীভাবে?

 

তখন অভিযোগগুলো ফোনে পড়ে শোনানোর পর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। তবে নুর উদ্দিন আনিস ও সালাউদ্দিন নামে তাঁর দুই ভাই আছে স্বীকার করে মাইন উদ্দিন বলেন, ডিজির কি ভাই থাকতে পারবে না? সূত্র:আজকের পত্রিকা।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪