ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হারানো পুঁজি বিনিয়োগকারীদের পকেটে ফেরেনি

সিএনএন বাংলা ডেস্ক:

ব্রোকারেজ হাউস ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মালিক মো. শহিদুল্লাহ। ২০২০ সালের মে মাসে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বিনিয়োগকারীর ৬৫ কোটি টাকা নিয়ে সস্ত্রীক পালিয়ে যান। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যে ঘটে এই ঘটনা। এরপর কিছু বিনিয়োগকারী এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা ফেরতও পান। বাকিরা টাকা খোয়ানোর ব্যথা এখনও ভুলতে পারেননি।

 

ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ ছাড়াও বানকো ও তামহা নামে আরও দুটি সিকিউরিটি হাউসের মালিক প্রায় পাঁচ হাজার বিনিয়োগকারীর ২৬৮ কোটি টাকা মেরে দেন। এই তিন ব্রোকারেজ হাউসের প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার বিনিয়োগকারীর লোপাট হওয়া প্রায় ৩৩৩ কোটি টাকার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৬ কোটি টাকা ফেরত এসেছে। ডিএসই সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

টাকা ফেরত পেতে বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিনিয়োগকারীরা বারবার ধরনা দিলেও হারানো টাকা আর তাদের পকেটে আসছে না। তারা আদৌ হারানো টাকা ফেরত পাবেন কিনা, সে বিষয়ে কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। এই নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মনে জমেছে অনিশ্চয়তার মেঘ।

বিএসইসির কর্মকর্তারা বলছেন, এটি ডিএসইর কাজ। ডিএসইর কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের আইনি ক্ষমতা সীমিত। জোর বা অন্য উপায়ে কারও কাছ থেকে টাকা আদায়ের এখতিয়ার নেই। দুই সংস্থার এই রকম ঠেলাঠেলিতে পেরিয়ে যাচ্ছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। মুনাফার আশায় লগ্নি করে সঞ্চয়ের টাকা হারিয়ে গাড্ডায় পড়া বিনিয়োগকারীরা ঘুরছেন পথে পথে।

গেল তিন বছরে যে তিন ব্রোকারেজ হাউস বিনিয়োগকারীদের টাকা মেরেছে, এর সবকটিই ডিএসইর আওতাধীন। ডিএসইর একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ব্রোকারেজ হাউস গ্রাহকদের টাকা লুটে নিলে তা ফেরত দিতে বাধ্য করার আইনি এখতিয়ার স্টক এক্সচেঞ্জের নেই। যেসব ব্রোকারেজ হাউস টাকা মেরেছে, সেগুলোর ব্যাংক হিসাবে টাকা নেই। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক স্বেচ্ছায় টাকা ফেরত না দিলে তাদের সম্পদ জব্দের পর তা বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া যায়। কাজটি স্টক এক্সচেঞ্জ করতে পারে না। এ কাজ বিএসইসিকে করতে হবে।

ডিএসইর প্রধান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা (সিআরও) খায়রুল বাশার বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ কাউকে বেঁধে আনতে বা টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করতে পারে না। আইনেই আমাদের হাত-পা বাঁধা। ডিএসইর দায়িত্ব ছিল, টাকা আত্মসাতের তথ্য পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে তদন্তে নামা। এ দায়িত্ব আমরা পালন করেছি।

এদিকে, বিএসইসির পক্ষে ডিএসইর ইনভেস্টর প্রটেকশন ফান্ড থেকে ২০ কোটি টাকা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের এভাবে এই ফান্ড থেকে টাকা দেওয়া যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ডিএসই জানিয়েছে, আত্মসাতের ঘটনা ফাঁসের পর প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করার আগে ক্রেস্ট, তামহা ও বানকো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগকারীদের মোট ৩৪ হাজার ৬৮৬টি বিও হিসাব ছিল। এর মধ্যে ১১ হাজার ৩৬৪ বিও হিসাব থেকে মোট ৩৩৩ কোটি টাকা লোপাটের প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে গ্রাহকের নগদ জমা ছিল প্রায় ২০৪ কোটি টাকা আর শেয়ার ছিল ১২৯ কোটি টাকার। প্রথম আত্মসাতের ঘটনা ঘটে বর্তমান কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের মাথায়। ওই সময় ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মালিক মো. শহিদুল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী নিপা সুলতানা নূপুর গ্রাহকদের প্রায় ৬৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে গা-ঢাকা দেন। এর মধ্যে গ্রাহকের নগদ জমা ছিল প্রায় ৪৪ কোটি টাকা এবং শেয়ার বিক্রি করে আত্মসাৎ করেন আরও ২১ কোটি টাকা।

 

নুর মোহাম্মদ, সিএনএন বাংলা২৪