চট্টগ্রাম ব্যুরো:
কখনো মানবাধিকার নেতা, কখনো সংবাদকর্মী, আবার কখনো রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন দলের স্বক্রিয় সদস্য বা কর্মী পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে মোটা অংকের প্রতারণা করেছেন আব্দুস ছালাম হাওলাদার নামের এক যুবক।
চট্টগ্রাম নগরীর সিইপিজেড গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর স্যাম্পল মেকার হিসেবে কর্মরত গ্রেফতারকৃত আসামীর আপন বড় ভাই মোঃ আল আমিন একই গার্মেন্টসে স্যাম্পল মেকার পদে কর্মরত থাকায় আসামীর সাথে ভিকটিম আবদুল হালিমের পরিচয় হয়।
আব্দুল ছালাম হাওলাদার নিজেকে আইনী সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সহ পরিচালক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভিজিটিং কার্ড প্রদান করেন। সেই সূত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে বলে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখায়। তখন ভিকটিম বলে তার ১৯ বছরের ছেলেকে ভূয়া ‘এসএসসি’ পাসের সনদপত্র জোগাড় করে দিয়ে সরকারি চাকুরির আশ্বস্ত করেন প্রতারক আবদুস ছালাম ।
পরবর্তীতে আব্দুল ছালাম হাওলাদার ভিকটিমের ছেলেকে ঢাকা বিমান বন্দরে ৪র্থ শ্রেণীর সরকারী চাকুরি দিবে বলে প্রায় আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
প্রতারক আবদুস ছালামের বড় ভাই তার সাথে দীর্ঘদিন চাকুরি করে বিধায় ভিকটিম তার কথায় সরল মনে বিশ্বাস করে। পরতর্বীতে আব্দুল ছালাম হাওলাদার ভিকটিমের ছেলেকে চাকুরি দিবে মর্মে পাঁচ লক্ষ ষাট হাজার টাকার একটি মৌখিক চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী ভিকটিমের ছেলেকে ঢাকা বিমান বন্দরে চাকুরি বাবদ গত বছরের ৬ জুলাই প্রথমে এক লক্ষ টাকা এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে সর্বমোট পাঁচ লক্ষ ষাট হাজার টাকা প্রতারক আব্দুল ছালাম হাওলাদারকে প্রদান করে। গত বছরের ২৯ নভেম্বর ছেলের চাকুরি চূড়ান্ত হওয়ার কথা বলে ভিকটিম ও তার ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যায় এবং চাকুরি হবে বলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের বিপরীতে একটি হোটেলে দীর্ঘ ১৭ দিন অবস্থান করার পর মোঃ আব্দুস ছালাম হাওলাদারের কোন খোঁজ না পেয়ে ভিকটিম ছেলেকে নিয়ে চট্টগ্রামে চলে আসেন।
একইভাবে কুমিল্লা জেলার লালমাই থানার মাঈনুদ্দিনের পুত্র মোঃ রাসেল আহমেদকে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রটোকল অফিসারের চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারক মোঃ আব্দুল ছালাম তিন লক্ষ বিশ হাজার টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়।
এছাড়াও মোঃ আক্তার হোসেন নামের একজনকে ঢাকা বিমান বন্দরে প্রটোকল অফিসারের চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারক মোঃ আব্দুল ছালাম হাওলাদার তার নিকট থেকে বিভিন্ন সময়ে চার লক্ষ টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়।
এছাড়াও গার্মেন্টসের নারী শ্রমিক (ছদ্মনাম) নীলুকে প্রেম ও বিয়ের প্রলোভনে বিভিন্ন সময়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। আরও জানা গেছে যে, ইপিজেড – পতেংগা এলাকায় আইনী সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির নামে – বেনামে বিবাহ, শালিশ, সমস্যা সমাধানের জন্য মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো এই চক্রের সদস্যরা।
পরবর্তীতে উক্ত প্রতারক মোঃ আব্দুল ছালাম হাওলাদারের নিকট বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে উল্লেখিত চাকুরীর বিষয়ে জানতে চাইলে সে কোন প্রকার সদুত্তর দিতে না পারায় ভিকটিমগণ তাদের দেয়া টাকা ফেরৎ চাইলে প্রতারক মোঃ আব্দুল ছালাম হাওলাদার টাকা ফেরৎ দিতে অস্বীকৃতি জানায় ও মারমুখী আচরণ করে।
বর্ণিত বিষয়ে ভিকটিমদের সন্দেহ সৃষ্টি হলে র্যাব-৭, পতেঙ্গা সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। চট্টগ্রাম র্যাব-৭, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে উক্ত প্রতারককে গত ৫ জুলাই নগরীর ইপিজেড থানাধীন আলিশাপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আটক করে।
গ্রেফতার মোঃ আব্দুল ছালাম হাওলাদার (৩০) ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানার পূর্ব ফুলোহার গ্রামের মৃত আবদুস সাত্তারের পুত্র।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে ৪-৫ জন অজ্ঞাতনামা আসামীর সহায়তায় পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে আত্মসাৎ করে আসছে মর্মে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে ইপিজেড থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে র্যাব-৭, পতেঙ্গা সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪: