ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ডাম্পিংয়ের গাড়ি বনানীর পাঁচ সড়কে

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা:

রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানী থানার দখলে পাঁচটি সড়ক। প্রতিটি সড়ক যেন থানার অলিখিত ডাম্পিং জোনে পরিণত হয়েছে। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন পড়ে রয়েছে। ধুলায় ধূসরিত যানবাহনের কোনোটির চাকা বসে গেছে, কোনোটির আসন নেই, কোনোটির দরজা নেই, কোনোটির গ্লাস উধাও, আবার কোনোটির শুধু কাঠামো পড়ে আছে। বছরের পর বছর ধরে রাস্তায় পড়ে আছে গাড়িগুলো। ফলে রাস্তা সংকুচিত হয়ে সকাল-সন্ধ্যা যানজট লেগেই থাকে।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, বনানী থানার সামনের সড়কসহ আশপাশের পাঁচটি সড়কের অর্ধেকাংশে ফেলে রাখা হয়েছে প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, ট্রাক্টর, বাস, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। এই সড়কগুলোতে ৭০-এর বেশি গাড়ি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ব্যাটারিচালিত রিকশা, দুটি সিএনজিচালিত রিকশা, একটি ট্রাক্টর রাখা আছে। এ ছাড়াও দুটি বাস, পাঁচ থেকে সাতটি মাইক্রোবাস রাখা আছে। গাড়িগুলোর মধ্যে কোনোটির সিট নেই, কোনোটির দরজা নেই, কোনোটির চাকা চুরি হয়ে গেছে, কোনোটির আবার গ্লাস উধাও, আবার কোনোটির শুধু বডি পড়ে আছে। কয়েকটি গাড়ির অবস্থা এতটাই বেহাল ও ভাঙাচোরা যে, ভাঙারির দোকানে বিক্রির যোগ্য। ৭ নম্বর সড়কের পাশের ভবনগুলোর কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা বলেন, রাস্তায় রাখা থানার গাড়িগুলোর মেয়াদ অনেকদিন হয়েছে। এর মধ্যে কোনোটার মেয়াদ ১০ বছরও পেরিয়েছে। কোনোটা পাঁচ সাত বছর হয়েছে। অনেকগুলোতে বালি জমেছে এক আঙুল। কোনোটির দরজা, জানালা, গ্লাস নেই শুধু ইঞ্জিনটা পড়ে আছে। গাড়িগুলো রাস্তায় রাখার কারণে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। থানার এ গাড়িগুলোর ব্যাপারে কেউ কথা বলেন না।

 

এ বিষয়ে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাহান হক বলেন, রাস্তায় রাখা গাড়িগুলো মামলার আলামত। থানায় জায়গা সংকটের কারণে গাড়িগুলো রাস্তায় রাখা হয়েছে। এসব গাড়ির বিষয়ে আদালতকে অবহিত করা আছে। যেগুলোর আইনি সমাধান হয়ে যাচ্ছে সেগুলো আমরা মালিককে দিয়ে দিচ্ছি। এ ছাড়া বিভিন্ন মামলায় যেসব গাড়ি জব্দ হয়, সেগুলোর মালিকানার হদিস পাওয়া না গেলে নিলামের জন্য আদালতে পাঠানো হয়। মামলা চলমান অবস্থায় আদালতের কাছ থেকে গাড়ি ছাড়ানোর অনুমতিপত্র এলে মালিককে গাড়ি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তা ছাড়া রাস্তার পাশেই ফেলে রাখতে হয়। ডাম্পিং করার মতো জায়গা নেই। জায়গা পেলে এসব গাড়ি স্থানান্তর করা হবে। শুধু বনানী থানা নয়, রাজধানীর ৫০টি থানায় গিয়ে ডাম্পিং স্টেশনের দিকে চোখ রাখলেই দেখা যাবে থানা ভবনের চার পাশেই জরাজীর্ণ গাড়ির স্তূপ। থানায় দুর্ঘটনা, চোরাই, মাদকদ্রব্য বহনকারী, পরিত্যক্ত ও নিবন্ধনবিহীন, উদ্ধার হওয়া, চোরাচালানে ব্যবহৃত গাড়ি। বিভিন্ন মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা অবস্থায় পড়ে আছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরগাড়িসহ এসব যানবাহন। বিক্ষিপ্তভাবে ও এলোপাতাড়ি অবস্থায় পড়ে থাকায় রাজধানীর থানাগুলোয় জব্দ হওয়া গাড়ির ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব গাড়ির ইঞ্জিন শুধু নষ্টই হচ্ছে না, গাড়ি ক্রমশ মিশে যাচ্ছে মাটির সঙ্গে। জব্দ ওইসব গাড়ির কিছু অংশ মামলার দীর্ঘসূত্রতায় মালিক ফিরে পেলেও ভাঙারি হিসেবে বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। আইনি জটিলটা আর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। থানার কর্মকর্তারা বলছেন, ডাম্পিং স্টেশনে জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে থানা কম্পাউন্ডে রাখা হচ্ছে জব্দ করা গাড়ি। মূলত প্রতিটি গাড়িই মাদকসহ অবৈধ মালামাল বহন এবং দুর্ঘটনার কারণে কিংবা অন্য কোনো মামলায় জব্দ করা। বছরের পর বছর থানা চত্বরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা এসব বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা ও প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ব্যবহার উপযোগিতা হারাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে থানায় জব্দ করা গাড়ির সংখ্যা। একেকটি থানা কম্পাউন্ড যেন আটক করা গাড়ির ভাগাড়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অযত্ন-অবহেলায় এসব গাড়ির এখন জীর্ণশীর্ণ অবস্থা। যত দিন যায়, ততই কমতে থাকে এসব গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রপাতির সংখ্যা। একসময় পড়ে থাকে শুধুই কঙ্কাল। অভিযোগ রয়েছে, এসব গাড়ি থেকে পার্টস চুরি হওয়ার কারণেও মালিকরা গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে আগ্রহ দেখান না।