শিব্বির আহমদ রানা,বাঁশখালী প্রতিনিধি:
বারো মাসেই সবজি উৎপাদিত হয় বাঁশখালীর বিভিন্ন জায়গায়। এক সবজি গেলো তো নতুন আরেক সবজি বাজারে এসে হাজির। সবুজ শাকসবজি উৎপাদনে উপজেলার সমতল ভূমি, পাহাড়ী নিম্নাঅঞ্চল ও ঢালু জায়গা অনন্য উর্বর ভূমির স্বাক্ষর রাখে। বাঁশখালীকে সবুজ শাকসবজি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ উপজেলা বলা হয়। রোজার সময় সবজির বাজার কিছুটা স্বস্তিদায়ক থাকলেও ঈদের পর দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। চলমান তাপপ্রবাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন বেড়েই চলছে সবজির দাম। এদিকে বাঁশখালীর স্থানীয় বাজারগুলোতে আসতে শুরু করেছে নানাজাতের সবজি। সবজির চড়া দাম এখনো রয়েছে। সবজির মধ্যে বাজারে কাঁকরোল জায়গা করে নিয়েছে। অল্প কয়দিন পর সবজির দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে বলে অনেকের ধারণা। এবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কাঁকরোলের ভাল ফলন হয়েছে।
বাঁশখালীতে যে বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করা হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়েছে কাঁকরোল। বাঁশখালীতে করলা চাষে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে। চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় খুশি উপজেলার নাপোড়া, শেখেরখীল, পূর্ব নাপোড়া, শীলকূপ, সাধনপুর, কালীপুর, চাম্বল, পুইছড়ি, জঙ্গল জলদী, প্রেমবাজার সহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষক। এসব করলা বাঁশখালীর স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিঠানোর পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরেও সরবরাহ করা হয়। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এসব করলা চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশখালীর বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে চোখে পড়ার মতো কাঁকরোলের চাষ। প্রতিদিন সকালে কাঁকরোলের মাঠে ফুল লাগাতে ব্যস্ত সময় দিচ্ছে কৃষকরা। সকাল সন্ধ্যায় স্থানীয় বাজারে কাঁকরোল তুলতে কাজ করছে কৃষকের সাথে তার পরিবারের সদস্যরা। সময় দিচ্ছে বউ-ঝি, ছেলেরা। বড় সাইজের পলিথিন ব্যাগে ভরছে কাঁকরোল। পাইকাররা কেজি দরে ক্রয় করছে। প্রতিদিন বাঁশখালী থেকে পাইকারী দরে বিক্রেতারা বাঁশখালীর বিভিন্ন বাজার এবং ফসলী ক্ষেত থেকে সবজি ক্রয় করে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করছে। আগাম চাষে এ অঞ্চলের সবজি চাষীরা ভাল দাম পেয়ে খুশি।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, এ বছর চলতি মৌসুমে আশানুরুপ কাঁকরল উৎপাদন হয়েছে তবে কালবৈশাখীর প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি না হলে সবজি আরো বেশী উৎপাদন হবে। এই চলতি মৌসুমে কাকাঁরোল ছাড়াও বিভিন্ন জাতের বেগুন, ঢেঁড়শ, শশা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, বরবটি, কচুর লতি, কাচামরিচ, পুঁইশাক, পালংশাক সহ নানাজাতের সবজি বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। অল্প কয়দিন পরেই বাঁশখালীর উৎপাদিত সবজি বাজারের জায়গা করে নিবে। দামও কমে যাবে। সবজির ক্রয়ক্ষমতাও ক্রেতাদের নাগালে চলে আসবে।
উপজেলার পূর্ব চাম্বল বর্মোত্তর বিলের কাঁকরোল চাষী মো. আবদুর রহিম বলেন, ‘আমি এক কানি জমিতে কাঁকরোল চাষ করেছি। চৈত্রের শুরুতে পাইকারি কেজিপ্রতি ২৫০টাকা করে বিক্রি করেছি। বর্তমানে দাম অনেকটা কমেছে। ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজি পাইকারি দামে নিয়ে যাচ্ছে পাইকাররা। স্থানীয় পাইকারসহ বিভিন্ন উপজেলার পাইকাররা আমাদের কাঁকরোল নিয়ে যায়। এবারে ফলনও ভাল হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এখানকার সবজিতে কোন ধরনের রাসায়নিক বিষ মিশ্রিত না হওয়ায় ক্রেতারা সহজেই এই সবজির প্রতি আকৃষ্ট থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাঁশখালী এসে পাইকারি দামে ক্রয় করে ট্রাকে ট্রাকে নিয়ে যাচ্ছে বাঁশখালীর সবজি।
শীলকূপ টাইমবাজারের একজন খুচরা বিক্রেতা মো. সেলিম সাও জানান, আমাদের বেশি দামে সবজি কিনতে হয়েছে। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। ইদের পর থেকে নতুন নতুন সবজি বাজারে আসতে শুরু করছে। সামনে দামও কমে যাবে।
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সালেক প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ বছর বাঁশখালীতে ১২শ হেক্টর জমিতে কাঁকরোল চাষ হয়েছে, পাশাপাশি সকল ধরনের শাক সবজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের ব্যাপক হারে উৎপাদন হয়েছে। তার মধ্যে এবার কাঁকরোল চাষ করে চাষীরা সফল হয়েছে। কাঁকরোল এ অঞ্চলের অন্যতম একটি মৌসুমী সবজি। জমির উর্বরতা, কৃষি সহায়তা ও কৃষিবিষয়ক পরামর্শ নিয়ে চাষিরা কঁরলা চাষে সফল হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।