ইকরা তৌহিদ মিম, চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড এলাকায় নিজের জন্মদাতা পিতা হাসান আলিকে হত্যার পর কেটে টুকরো টুকরো করা ছেলে শফিকুর রহমান জাহাঙ্গীর অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছে।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকার হাজারিবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই।
এদিকে শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে নিহত পিতা হাসান আলির কাটা মাথা উদ্ধারে ফের চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর কর্মকর্তারা। এর আগে গত ২ অক্টোবর জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আনারকলিকে নিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছিল।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান বলেন, ‘হাসান আলি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তার ছেলে শফিকুর রহমান জাহাঙ্গিরকে রাজধানীর হাজারিবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিহত হাসান আলির কাটা মাথা উদ্ধারে শনিবার পতেঙ্গা সৈকত এলাকায় ফের তল্লাশি চালানো হয়।
তিনি আরও বলেন, শফিকুর রহমান জাহাঙ্গিরের বাসায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর হাসান আলির মরদেহ খণ্ড খণ্ড করে আনারকলির লাগেজে ভরে ফেলে দেওয়া হয়। আরেকটি থলেতে ভরে কাটা মাথাও ফেলে দেওয়া হয়। এছাড়া শরীরের কিছু অংশ নগরীর আকমল আলি রোডের একটি খালে ফেলে দেওয়া হয়।
জানা যায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা বোট ক্লাবের অদূরে ১২ নম্বর গেটে একটি ট্রলিব্যাগ পাওয়া যায়। কফি রঙের ওই ট্রলিব্যাগে ছিল মানব শরীরের দুই হাত, দুই পা, কনুই থেকে কাঁধ এবং হাঁটু থেকে উরু পর্যন্ত অংশ। এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদির বাদি হয়ে একটি হত্যামামলা দায়ের করেন।
এদিকে, খণ্ড-বিখণ্ড এই মরদেহ পরিচয় শনাক্ত ও রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামেন পিবিআই কর্মকর্তারা। তারা প্রথমে ফিঙ্গারপ্রিন্টের সহায়তায় নিহত ব্যক্তি হাসান আলির বলে শনাক্ত করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী হাসান আলি চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালি উপজেলার কাথারিয়া এলাকার সাহেব মিয়ার ছেলে। তার বর্তমান ঠিকানা লেখা আছে সিলেট সদরের সাধুর বাজার সংলগ্ন রেলওয়ে কলোনি এলাকায়।
পিবিআই জানায়, অন্তত ২৮ বছর ধরে ভুক্তভোগী হাসান আলির সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ ছিলোনা। এ সময়ে তিনি কোথায় ছিলেন তাও জানতেন না পরিবারের সদস্যরা। বছরখানেক আগে হঠাৎ তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। বাড়িতে হাসান আলির নামে কিছু পৈতৃক সম্পত্তি ছিল। যেটি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন ভুক্তভোগী হাসান। এ নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর একটি বাসায় স্ত্রী-সন্তানেরা মিলে হাসান আলিকে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী হাসান আলির স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম (৫০) ও তাদের বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে (৩২) গ্রেপ্তার করে পিবিআই। গত ২৭ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তিনি বাবাকে হত্যার কারণ, কেমন করে হত্যা করা হয় এবং কীভাবে মরদেহ ফেলে দেওয়া হয় তার বিশদ বর্ণনা দেন।