ই-পেপার | শনিবার , ১৫ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘পূর্ব পরিকল্পনায় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদকে ট্রাকচাপায় হত্যা করা হয়’

কক্সবাজার অফিস :

কক্সবাজারের উখিয়ায় মাটি পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি অভিযান অব্যাহত রাখায় ‘সংক্ষুব্ধ হয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী’ ডাম্প ট্রাকচাপায় বনবিট কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

ডাম্প ট্রাকচাপায় বন কর্মকর্তা হত্যায় উখিয়া থানায় উখিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহাম্মদ রাসেল সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানান তিনি।

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি মো. বাপ্পীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে মাটি পাচারকারী চক্রের সদস্যদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাইবাছাই করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২টায় উখিয়া থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উখিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহাম্মদ রাসেল।

সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘এক মাসের বেশি সময় উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক হারে পাহাড় কেটে মাটি পাচার করে আসছিল একটি চক্র। আর পাহাড় কেটে মাটি বিক্রিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বনবিভাগের দোছড়ি বিটের কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান সজল। ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে অভিযান চালিয়ে তিনি মাটি পাচারকারী চক্রের ৫টি ডাম্প ট্রাক জব্দ এবং কয়েকটি মামলা দায়ের করেন। এ নিয়ে চক্রটির লোকজন তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।

‘গ্রেফতার হওয়া আসামি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, বনবিভাগের অভিযানে ট্রাক জব্দ এবং মামলা দায়ের করায় এজাহারভুক্ত ১০ নম্বর আসামি কামাল উদ্দিন চালকসহ মাটি পাচারকারীরা বনবিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। তারা মোবাইল ফোনে কল দিয়ে এবং নানাভাবে তাকে (সাজ্জাদুজ্জামান) হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিলেন। এমন কি তারা সাজ্জাদুজ্জামানকে প্রাণে মারারও হুমকি দেন।’

সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, ‘ঘটনার দিন গভীর রাতে উখিয়া উপজেলার হরিণমারা এলাকার সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে মাটি পাচারের খবরে বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান সহকর্মী আলী আহমদকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় একটি ডাম্প ট্রাকে মাটি পাচার করতে দেখে থামতে বলেন তিনি। কিন্তু ট্রাকচালক না থেকে তাদের (বনকর্মীরা) বহনকারী মোটর সাইকেলটিকে চাপা দেন। এতে ঘটনাস্থলেই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে সাজ্জাদুজ্জামান নিহত হন এবং তার সহকর্মী আলী আহমদ আহত হন।

তিনি বলেন, ঘটনার সময় ট্রাকচালক বাপ্পীর পাশের সিটে কামাল উদ্দিন ড্রাইভার বসা ছিলেন এবং তার ইন্ধনে বন কর্মকর্তাদের বহনকারী মোটরসাইকেলটি চাপা দেয়া হয়েছিল।

গ্রেফতার হওয়া আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে পাহাড় কেটে মাটি পাচারকাজে জড়িত চক্রটির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে এবং এসব তথ্য যাচাই বাছাই করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে। ওইদিন রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পরিত্যক্ত একটি ইটভাটা থেকে ট্রাকটি জব্দ করা হয়। এরপর গত ১ এপ্রিল ভোরে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি ছৈয়দ করিমকে গ্রেফতার করা হয়।

সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল জানান, মামলা দায়েরের পর থেকে আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর থানা এলাকায় মামলার প্রধান আসামি ও ঘাতক ট্রাকচালক বাপ্পী আত্মগোপনে রয়েছে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। এতে সন্দেহজনক স্থাপনাটি ঘিরে ফেললে তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এসময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।

গত ৩১ মার্চ মধ্যরাতে উখিয়ায় সংরক্ষিত বনের পাহাড় কাটার খবরে অভিযানে গিয়ে ‘মাটি পাচারকারীদের ডাম্প ট্রাকচাপায় বনবিট কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান (৩০) নিহত হন।

তিনি কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন এবং মুন্সিগঞ্জ জেলার গজরিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে।

এ ঘটনায় আহত হন বনরক্ষী মোহাম্মদ আলী (২৭), তিনি টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ঝিমংখালী এলাকার আবুল মঞ্জুরের ছেলে। এ ঘটনায় পরদিন ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বাদী হয়ে উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।