ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভিকারুননিসায় ভর্তি নিশ্চিত করতে অভিনব কৌশল, জালিয়াতি জন্মসনদ জালিয়াতি করে আরও ৩৬ শিক্ষার্থী ভর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন এক শিক্ষার্থীর বাবা। এ কারণে তার সন্তানের একটি প্রকৃত জন্মসনদ ছাড়া আরো তিনটি ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করেন তিনি। আর এই চারটি জন্মসনদ দিয়ে ভিকারুননিসায় প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিতে লটারির জন্য আবেদন করেন। অভিভাবকের কৌশল হলো, চারটি আবেদনের মধ্যে যে কোনো একটি টিকে গেলেই হলো, ভর্তি করা যাবে। লটারির ফলে দেখা যায়, ঐ শিক্ষার্থী চার বার ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে। ফলে সৌভাগ্যবান পিতা প্রকৃত জন্মসনদ দিয়ে যে আবেদন করেছিলেন, সে আবেদনের ভিত্তিতে ভর্তি হন। ভুয়া সনদগুলো এড়িয়ে যান।চলতি বছরের ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার ঘটনা এটি।

 

ভিকারুননিসার মূল শাখায় প্রায় একই ধরনের জালিয়াতি হয়েছে। এক জন শিক্ষার্থীর অভিভাবক তার সন্তানের দুটি জন্মসনদ তৈরি করে একই শাখায় পৃথক দুটি আবেদন করেছে। ঐ শিক্ষার্থী দুটি আবেদনের বিপরীতেই লটারিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু একটিতে সে ভর্তি হয়েছে। এমন কৌশল নিয়ে আরো বেশ কয়েক জন অভিভাবক তার সন্তানকে ভর্তি করিয়েছেন। বিষয়গুলো প্রমাণ পাবার পর সংশ্লিষ্ট ভর্তি কমিটি ও অধ্যক্ষের কাছে লিখিত জবাব চেয়েছে ভর্তি অনিয়মে গঠিত তদন্ত কমিটি।

 

নির্বাচিত হওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, এমন শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়েছে, যাদের জন্মসনদ অনলাইনে পাওয়া যায়নি। বা কারো কারো জন্মসনদের একটি সংখ্যা ভুল। কারো আবেদন করা বয়সের সঙ্গে জন্মসনদের বয়সের মিল নেই। কোনো কোনো শিক্ষার্থীর জন্মসনদের স্থলে বাবার জন্ম সনদ নম্বর দেওয়া হয়েছে। কেউ বাবার নামের বানান পরিবর্তন করে একাধিক আবেদন করেছে।

 

এভাবে এনআইডি জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তত ৩৬ জনের ভর্তির বিষয়ে তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে মূল প্রভাতি বাংলা ভার্শনে ৯ জন, মূল দিবা বাংলা ভার্শনে দুই জন, মূল দিবা ইংরেজি ভার্শনে চার জন, ধানমন্ডি প্রভাতিতে এক জন, ধানমন্ডি দিবায় তিন জন, বসুন্ধরা প্রভাতি দুই জন, বসুন্ধরা দিবা তিন জন, আজিমপুর প্রভাতি তিন জন এবং আজিমপুর দিবা শাখায় সাত জন।

 

ভিকারুননিসায় ভর্তিতে অনিয়মের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোমিনুর রহমান এসব অনিয়মের কারণে ভিকারুননিসার ভর্তি কমিটির সদস্যদের কাছে লিখিত জবাব চেয়েছে। লিখিত জবাব দেওয়ার জন্য চার কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ভিকারুননিসা ভর্তির জন্য একটি পৃথক নীতিমালা জারি করে। সেখানে বলা হয়েছে, সব শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি/অনলাইন কপি আবেদনকৃত ফরমের সঙ্গে জমা দিতে হবে। সব জন্মসনদ অনলাইনে যাচাই করা হবে। আবেদনকারীর অনলাইন জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে আবেদন ফরমের কোনো ভুল বা তথ্যে গরমিল থাকলে ভর্তির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবে।

 

এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর তাদের নীতিমালায় বলেছে, কোনো তথ্য পরিবর্তন করে একাধিক বার আবেদন করে থাকলে তার ভর্তির নির্বাচন বাতিল হবে। এছাড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোনো শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়ে থাকলে তাকে ভর্তি করা যাবে না। ভিকারুননিসার এক জন অভিভাবক আজিজুল ইসলাম বলেন, এভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়ায় প্রকৃত শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এই অনিয়ম ও জালিয়াতির দায় প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও ভর্তি কমিটি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

 

তবে এ বিষয়ে অভিযোগের দায় নিতে রাজি নন ভর্তি কমিটির সদস্যরা। ভর্তি কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যারা জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছে তাদের ভর্তি বাতিল করা হবে। অধিক জালিয়াতি করা অভিভাবকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি আমাদের কাছে চিঠি দিয়েছে। আগামী রবি-সোমবারের মধ্যে চিঠির জবাব দেওয়া হবে।