ই-পেপার | শনিবার , ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হিন্দু হয়েও কেন বিএনপি করিস ?

নিজস্ব প্রতিবেদক :

“তুই হিন্দু হয়েও কেন বিএনপি করিস? আর করবি বিএনপি? সরকারের বিরুদ্ধে আর লিখবি? নওফেলের বিরুদ্ধে আর লিখবি? তোর বাপ তারেককে বাঁচাতে বল এমন অশ্রাব্য গালিগালাজ ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি সৌরভ প্রিয় পাল।

 

সৌরভ জানান, ‘এমন গালাগাল দিতে দিতে আমাকে গাছের টুকরো দিয়ে বেধড়ক পিটাচ্ছিলো পুলিশের পাঁচ সদস্য। মারধরের পাশাপাশি চলছিলো খিস্তিখেউড়। এদের মধ্যে দুইজন অফিসার ও তিনজন কনস্টেবল একযোগে বলতে থাকেন ‘তোকে আজকে পুঙ্গ করে ফেলবো ‘।

 

মিছিল করবি আর? এভাবে আমাকে প্রায় ঘণ্টা খানেক পেটানো হয় প্রিজনভ্যানে। আমার পিঠে, উরু ও পায়ের গোলার মাংসল স্থানে বারবার আঘাত করা হয়। আমি প্রথমে কিছুক্ষণ ব্যাথা পাচ্ছিলাম ও চিৎকার করছিলাম।এরপর শরীর অবস হয়ে গেলে আর ব্যাথাটা বুঝতে পারছিলাম না। মাঝেমাঝে পুলিশ সদস্যদের মোবাইলে কল আসছিলো এবং এ-প্রান্ত থেকে বলছিলো,স্যার সালার বেটারে কুকুরের মতো পিটাচ্ছি স্যার। সমস্যা নাই স্যার দেখেশুনে করছি স্যার। এভাবে মারার কিছুক্ষণ পর আমাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

 

আমি হাঁটতে পারছিলাম না প্রচন্ড ব্যাথায়। আমার পা দুটি অবস হয়ে গিয়েছিলো গাছের টুকরো আর লাঠির আঘাতে। আমাকে দুজন পুলিশ সদস্য ধরে গাড়ী থেকে নামায়। এরপর নাম ঠিকানা এন্ট্রি করে কোতোয়ালি থানার লকাপে নিয়ে যায়। সেখান থেকে কিছুক্ষণ পরপর আমায় বের করছিলো আর পাশে একটি রুমে নিয়ে গিয়ে বারবার টর্চার করেছিলো আর জিজ্ঞেসাবাদ করছিলো।

 

একেক সময় একেক অফিসার এসে আমার ছবি তুলে ও ভিডিও করে নিয়ে যাচ্ছিলো। পরবর্তীতে আমি যখন প্রচন্ড ব্যাথায় দাঁড়াতেই পারছিলাম না,এক অফিসার বললো আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে। পরে থানার ওসি এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানোর নির্দেশ দিলে,পাঁচ ছয়জন পুলিশ মিলে আমাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে বহিঃবিভগে চিকিৎসা করায়। আঘাতকৃত স্থান ফুলে যায় এবং কালচে দাগ হয়ে যায়।

 

সেখান থেকে ডাক্তার ব্যাথানাশক ঔষধ ও ইনজেকশন দেন। পরে আবার আমাকে থানায় নিয়ে এসে প্রায় সন্ধ্যার দিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। ঐদিন আমাকে আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয়। ‘বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে ২৯ নভেম্বর মিছিল করতে গেলে, চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার এলাকা থেকে সাদা পোশাকের কয়েকজন পুলিশ তাকে আটক করে।চট্টগ্রামের লালখানবাজার এলাকা থেকে ভোরে পুলিশের হাতে আটক হন সৌরভ প্রিয় পাল। আর ধারাবাহিক নির্যাতনের পর আদালতে পাঠানো হয় সন্ধ্যা বেলায়।

 

সৌরভের ভাষ্য, পরদিন আমার রিমান্ড শুনানির জন্য আমাকে আদালতে তোলা হয় অসুস্থ শরীর নিয়ে। মহামান্য আদালত আমার চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে ও আমাকে সশরীরে দেখে আমাকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসার নির্দেশ দেয়। এবং কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আমার শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন চায় মহামান্য আদালত। এরমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে আমার ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে মহামান্য আদালত আমার শারীরিক অবস্থা দেখে রিমান্ড নামঞ্জুর করেন এবং জেল গেটে জিজ্ঞেসাবাদের নির্দেশ দেন। মহামান্য আদালতের নির্দেশ মতো আমাকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে ডাক্তাররা এবং আমাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি দেয়। কারা হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় আমার চিকিৎসা চলতে থাকে।

 

এরমধ্যে চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ৪ দিন পরে একদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ করে জেলার ও জেল সুপার আসে আমার কাছে। তারা আমার কেসকার্ড নিয়ে নেয় এবং রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চায়। আমি পরিচয় দিলে তারা বলে সিটি এসবি এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ফোন এসেছে আমাদের কাছে, আপনাকে হাসপাতালে রাখা যাবে না।

 

আপনাকে ওয়ার্ডে চলে যেতে হবে। আমি শারীরিকভাবে প্রচন্ড অসুস্থ শর্তেও আমার অনেক অনুনয়-বিনয়ের পরও তারা আমার কোন কথা শুনেনি। পরদিন সকালে ডাক্তারের রূমে ডেকে নিয়ে গিয়ে আমাকে বিনা চিকিৎসায় ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমার মৌলিক অধিকারের একটি চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে দেয়নি এই সরকার। কারাগারেও থেমে থাকেনি তাদের নির্মম অত্যাচার।

 

এভাবে আটক হবার পর ও কারাগারে নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন সদ্য কারামুক্ত, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি সৌরভ প্রিয় পাল। সোরভকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বিবৃতি দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডাঃ শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর।

 

বিএনপির দাপ্তরিক তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা আসামির সংখ্যা ৪০ লাখের ওপরে। বিএনপির মামলার তথ্য ও সংরক্ষণ শাখার তথ্য অনুযায়ী ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির ২১,৮৩৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।২৮ অক্টোবর মহাসামবেশের পর বিভিন্ন মামলায় বিরোধী দলের ৭৩ হাজার ১২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

 

হয়রানিমূলক নতুন করে গায়েবী মামলা দেয়া হয়েছে ৮শ’ ৩৭টি। এসব মামলায় আন্দোলন চলাকালীন সময়ে গ্রেফতার করা হয় ২০ হাজার ৩২৬ জনকে।