নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত সপ্তাহে সোমালিয়ার উপকূলে জলদস্যুদের হাত থেকে একটি বাণিজ্যিক জাহাজ উদ্ধার করেছে ভারতীয় বাহিনী। এতে তারা প্রমাণ করেছে কীভাবে দিল্লির সামরিক বাহিনী বিশ্বের সেরা কয়েকটির বাহিনীর সমকক্ষ হয়ে উঠেছে। তারা নিজেদের বিশেষ বাহিনীর পর্যায়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের বিশ্লেষণে এমনটা বলা হয়েছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, প্রায় দুই দিন ধরে চলা জলদস্যুতা বিরোধী অভিযানে নৌবাহিনী জাহাজ এমভি রুয়েনের ১৭ নাবিককে উদ্ধার করেছে। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। কয়েক ডজন জলদস্যুকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এই অভিযানে একটি নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার, একটি টহল জাহাজ, ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি সি-১৭ ট্রান্সপোর্টার, একটি নৌ ড্রোন, একটি পুনরুদ্ধার ড্রোন এবং একটি পি-৮ নজরদারি জেট ব্যবহার করা হয়েছিল।
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ফেলোজন ব্র্যাডফোর্ড বলেছেন, ‘অপারেশনের সাফল্য ভারতীয় নৌবাহিনীকে প্রশিক্ষণ, কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য ক্ষমতার দিক থেকে বিশ্বমানের বাহিনী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এই অভিযানকে চিত্তাকর্ষক হিসেবে যে জিনিস বিশেষায়িত করেছে তা হলো যুদ্ধজাহাজ, ড্রোন, ফিক্সড ও রোটারি-উইং এয়ারক্রাফ্ট এবং সামুদ্রিক কমান্ডোগুলোর সমন্বিত শক্তির ব্যবহার করে ঝুঁকি হ্রাসের পদ্ধতি।’
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বাণিজ্যিক জাহাজে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের আক্রমণের কারণে লোহিত সাগরে অস্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক বাহিনীকে এক করতে পারে। নিকটবর্তী হর্ন অব আফ্রিকাতে সোমালি জলদস্যুদের জন্য নতুন ব্যবস্থা নিতে পারে। কারণ তারা বিলিয়ন ডলারের বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হুমকির।
ইয়েমেন ও সোমালিয়া এই অঞ্চলের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি। উভয়ই বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে বিধ্বস্ত। গত বছরের ডিসেম্বরে সোমালি জলদস্যুদের এমভি রুয়েন ছিনতাই করে। এটি ছিল ২০১৭ সাল থেকে দেশের উপকূলে প্রথম সফল ছিনতাইয়ের ঘটনা।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন নৌবাহিনীর ডিসেম্বরের প্রতিবেদন অনুসারে, স্প্যানিশ, জাপানি ও ভারতীয় যুদ্ধজাহাজগুলো মাল্টার পতাকাবাহী বুলগেরিয়ান-পরিচালিত জাহাজটিকে ট্র্যাক করেছিল। কারণ এটি ছিনতাই করে সোমালি আঞ্চলিক জলসীমায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করা নৌবাহিনীর বিবৃতি অনুসারে, রুয়েন নিয়ে গত সপ্তাহে সমুদ্রে নামে সোমালি জলদস্যুরা। তারাই এতদিন এটি পরিচালনা করছিল। এরপরই ভারতীয় নৌবাহিনী জাহাজটি আটকানোর পদক্ষেপ নেয়।
ভারতীয় বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডেস্ট্রয়ার আইএনএস কলকাতা এই এলাকায় কাজ করছে। রুয়েন সশস্ত্র জলদস্যুদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তা নিশ্চিত করার জন্য জাহাজ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য একটি ড্রোন ব্যবহার করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জলদস্যুরা ড্রোনের ওপর গুলি চালিয়ে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজেই এটিকে ধ্বংস করে। তারপরে রুয়েনের ওপর গুলি চালানোর প্রতিক্রিয়া জানায় ভারতীয় বাহিনী।
নৌবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গত ৪০ ঘণ্টা ধরে ভারতীয় নৌবাহিনীর অব্যাহত চাপ ও ক্রমাঙ্কিত পদক্ষেপের কারণে ৩৫ সোমালি জলদস্যুর সবাই আত্মসমর্পণ করেছে।’
প্রেসিডেন্ট রুমেন রাদেভসহ বুলগেরিয়ার নেতারা এই অভিযানের জন্য ভারত ও তার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
রাদেভ এক্স-এ বলেছেন, ‘ছিনতাইকৃত বুলগেরিয়ান জাহাজ ‘রুয়েন’ ও এর ক্রুসহ ৭ জন বুলগেরিয়ান নাগরিককে উদ্ধার করার সাহসী পদক্ষেপের জন্য (মোদির) প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।’
মার্কিন নৌবাহিনীর প্রাক্তন অধিনায়ক বিশ্লেষক কার্ল শুস্টার বলেছেন, ঘটনাটি ভারতীয় নৌবাহিনীর পেশাদারিত্বকে তুলে ধরেছে। দিল্লির মেরিন কমান্ডো বাহিনী (মারকোস) তার মার্কিন ও ব্রিটিশ প্রতিপক্ষের কাছ থেকে শিখেছে। ভারতীয় নৌবাহিনী নিজেই একটি উচ্চ প্রশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল পেশাদার বাহিনী।’
জানুয়ারির একটি সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, এই অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা ভারতের অগ্রাধিকার।
সরকারি মুখপাত্র শ্রী রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘সেখানে চলমান কার্যক্রম সত্যিই উদ্বেগের বিষয় এবং এটি আমাদের অর্থনৈতিক স্বার্থকে প্রভাবিত করে। আমরা ধারাবাহিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের নৌবাহিনী, নৌ জাহাজ বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিযুক্ত রয়েছে।