নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০২৪ এবং ২০২৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের জন্য আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে ভিসা প্রাপ্তির হার ৩৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডিয়ান সরকার। সেইসঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয় ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার ৬৩৫ কানাডিয়ান ডলারে বাড়িয়েছে দেশটি। ফলে উচ্চশিক্ষা অর্জনে কানাডায় পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
আইআরসিসি’র (ইমিগ্রেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডা) প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশক ধরে উচ্চশিক্ষা অর্জনে পছন্দের দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে কানাডা।
২০১৫ সালে কানাডায় পড়তে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৩৬৫ জন থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৯ হাজার ৫৩৫ জন হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরো বাড়বে, তবে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীদের দেশ পছন্দে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
এসএফএক্স গ্রীনহেরাল্ড স্কুলের শিক্ষার্থী শাফাত রাজিন এ-টু লেভেল পরীক্ষা শেষে ফল সেমিস্টারে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। পছন্দের প্রোগ্রাম ও স্কলারশিপ সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন কার্লটন ইউনিভার্সিটি এবং ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু ভিসায় বিধিনিষেধ আরোপ হওয়ায় তার স্বপ্নপূরণের পথে বাধা পড়বে।
শাফাত বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে আবেদনের জন্য খরচ করেছেন প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘কানাডায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল আগে থেকেই এবং সে অনুযায়ী কাজ করেছি আমি। কিন্তু এখন স্কলারশিপ পেলেও ভিসা পাব কি না জানি না। সরকার আরো আগে ঘোষণা দিলে আবেদন খরচসহ নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ পেত শিক্ষার্থীরা।’
আত্মীয়স্বজন এবং ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের কানাডা গমনের হার দেখে দেশটির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। যাদের মধ্যে শ্রেয়া সেমন্তী একজন। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক শেষে কানাডায় পড়তে যাওয়ার জন্য চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু এখন ভিসা সীমাবদ্ধতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আবেদনের পরিকল্পনা করছেন।
কেন এই নিষেধাজ্ঞা
আইআরসিসি’র বিবৃতিতে ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘কানাডায় ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ফলে আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য পরিষেবার ওপর চাপ পড়ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধা থেকে রক্ষা করতে এবং টেকসই জনসংখ্যা উন্নয়নের জন্য কাজ করি। তাই ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের সংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে নানাবিধ ব্যবস্থা নিচ্ছে কানাডা সরকার।’
আবাসন সংকট বর্তমানে কানাডার সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এ মাসের শুরুতে কানাডার উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘অত্যধিক বাড়ি ভাড়া দেশটির নাগরিকদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ ২০২১ সালে কানাডার জাতীয় জনশুমারির তথ্য অনুসারে, প্রতি তিনজনের একজন ভাড়া বাড়িতে থাকেন এবং প্রতি সাতটি বাড়ির একজন বাসিন্দাদের জন্য খুব ব্যয়বহুল। অভিবাসী ও ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীরা এই আবাসন সংকটের জন্য দায়ী কি না তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, জনসাধারণের জন্য সরকার এই বিধিনিষেধ জারি করেছে।