কক্সবাজার অফিস :
মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলিতে টিকে থাকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে ভারী অস্ত্র কেড়ে নিচ্ছে স্থানীয় অপরাধীরা। এমনকি সীমান্তের ওপারে গিয়ে অস্ত্র ও ইয়াবা লুটের অভিযোগও উঠেছে এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে।
দ্রুত এসব অস্ত্র উদ্ধার করা না গেলে দেশের সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তির কাছে যদি একটি গুলির খোসাও পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, অস্ত্রসহ পালিয়ে আসার সময় ৬ ফেব্রুয়ারি ২৩ রোহিঙ্গাকে আটক করে বিজিবির হাতে তুলে দেয় স্থানীয়রা। এসময় কিছু রোহিঙ্গার কাছ থেকে বেশ কয়েকটি একে-৪৭ রাইফেল, নাইন এমএম পিস্তল, প্রচুর গুলি লুট করে স্থানীয় অপরাধীরা। পরে দুটি একে-৪৭ রাইফেল বিজিবির কাছে জমা দেওয়া হলেও বাকি অস্ত্রগুলো অপরাধীদের কাছে রয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পালংখালী এলাকার কয়েকজন যুবক বলেন, সেদিন আমরা ঘটনাস্থলে ছিলাম। পালংখালী ইউনিয়নের পুঠিবনিয়া এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে হেলাল উদ্দিন এবং স্থানীয় জাহাঙ্গীর দুটি একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হলে তারা দুজন রাইফেল দুটি বিজিবির কাছে জমা দিতে বাধ্য হয়। এর বাইরেও অনেক অপরাধীরা পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা অপরাধী ও বিজিপির সদস্যদের কাছ থেকে অস্ত্র লুট করেছে।
দুটি একে-৪৭ রাইফেল জমা দিলেও তাদের কাছে আরও বেশ কিছু বিদেশি পিস্তল এবং প্রচুর গুলি রয়েছে। একই দিন পালিয়ে আসা একটি গ্রুপের কাছ থেকে হাজি জালালের পুত্র রুবেল গোলাবারুদ ভর্তি একটি ব্যাগ কেড়ে নেয়। পরে লোক দেখানো কিছু গুলি জমা দিলেও বেশিরভাগ গুলি নিজের কাছে রেখে দেয় সে। যদি তাদের আইনের আওতায় আনা হয় তবে লুট করা সব অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা।
তারা আরও বলেন, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার পর থেকে হেলাল পালংখালী ইউনিয়নের পুঠিবনিয়া ও সফিউল্লাহ কাটা এলাকায় রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী নবী হোসেন গ্রুপের সহযোগী হিসেবেও কাজ করছে সে। পালিয়ে আসা নবী হোসেন গ্রুপের সদস্যদের নিরাপদে ক্যাম্পে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়ে অন্যদের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়েছে হেলাল।
এ ছাড়া পালংখালী আনজুমানপাড়া, বটতলী সীমান্তে থাকা অপরাধীরা রাতের আঁধারে মিয়ানমারের ওপারে গিয়ে অস্ত্র ও ইয়াবা লুট করে এপারে নিয়ে আসছেন। তবে লুটকারীরা অস্ত্রধারী হওয়ায় সহজে কেউ মুখ খুলেছেন না।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন বলেন, ভয়ংকর পরিস্থিতি থাকায় সীমান্তে কী হচ্ছে তা বলা মুশকিল। ভয়ে সাধারণ মানুষ সেদিকে যায় না। আমার কাছেও অস্ত্র লুটের খবর এসেছে। সেদিন ২৩ জনকে আটক করা হলেও অনেকে অনেকভাবে ক্যাম্পে প্রবেশ করেছে। কিন্তু সঠিক তথ্য না পেলে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। যদি অস্ত্র মজুতের তথ্য সঠিক হয়ে থাকে তবে দ্রুত অস্ত্রগুলো জমা নিতে হবে। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি হতে পারে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পালিয়ে আসার সময় স্থানীয়রা ২৩ জন রোহিঙ্গাকে অস্ত্রসহ আটক করে বিজিবির হাতে তুলে দেয়। তারা সবাই উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তালিকভুক্ত মিয়ানমারের নাগরিক। এ ঘটনায় শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিজিবির এক সদস্য বাদী হয়ে আটক রোহিঙ্গাদের আসামি করে মামলা দায়ের করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছে, পালিয়ে আসা এসব ব্যক্তি আরাকান রোহিঙ্গা আর্মির (এআরএ) সদস্য। সশস্ত্র এই বিচ্ছিন্নতাবাদী দলটির প্রধান নবী হোসেন।
উখিয়া থানার ওসি মো. শামীম হোসেন বলেন, সীমান্তের ওপারে যেহেতু গোলাগুলিতে অস্থিরতা চলছে সেহেতু এপারেও আতংক থাকবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আমরা সবসময় সচেষ্ট রয়েছি। কোনো অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা অবনতি হতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কিছু রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। সেগুলো বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ অস্ত্র বা গুলি জমা রাখে, তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি যদি কোনো ব্যক্তির কাছে একটি গুলির খোসাও পাওয়া যায় তবে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।
মো. শামীম হোসেন আরও বলেন, যাদের বিরুদ্ধে বিজিবি মামলা করেছে তারা সবাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তালিকাভুক্ত মিয়ানমারের নাগরিক। তারা কী কারণে এবং কীভাবে মিয়ানমারে গিয়েছিলেন তা জানার চেষ্টা চলছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
বিজিবির তথ্য বলছে, অস্ত্রসহ আটকের পর বিজিবি তাদের হেফাজতে নিয়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। প্রাথমিক তথ্যে আটক রোহিঙ্গারা নবী হোসেন বাহিনীর সদস্য বলে জানা গেছে। তারা সীমান্তের ওপারে বিজিপির (মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী) হয়ে কাজ করত। মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে ইয়াবা, আইস ও অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধ পরিচালনা করত নবী হোসেন। তাই তাকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল বিজিবি।সূত্র:কালবেলা।