ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এসপির নাম ভাঙিয়ে দোকান ভাঙলেন শ্রমিক লীগ নেতা!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

 

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জ বাস্ট্যান্ড ট্রার্মিনাল সংলগ্ন ফুটপাতের অস্থায়ী ১১টি দোকান থেকে চাহিদা মাফিক চাঁদা না পেয়ে পুলিশ সুপারের নাম ভাঙিয়ে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতির দুই অনুসারী দোকান ভেঙেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকালের দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন টার্মিনালের পাশে ১১টি দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

ব্যবসার অবস্থা ভালো না থাকায় ফুটপাতের দোকানিরা টাকা দিতে পারেননি বলে পুলিশের ভয় দেখিয়ে (শ্রমিক লীগের নেতা) তারা নিজেরাই উপস্থিত থেকে ভাসমান ব্যবসায়ীদের দোকান ঘর ভেঙে সরিয়ে দেন। ভাঙচুরের মধ্যে রয়েছে, ভাতের হোটেল, চায়ের দোকান,পানের দোকান, ইসলামী বইয়ের দোকান ও জুতার দোকান।

 

জানা যায়, এসব নিম্ন আয়ের ব্যবসায়ীরা ফুটপাতে কেউ কেউ পাঁচ থেকে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করে করছেন। চারদিন আগে নবু ও বিলাসের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন যুবক ভাতের হোটেল মালিক ডিপ্তি, খোরশেদ, মানু, মিঠু, আরিফ, ইউসুফ, সেলিম, প্রবির দাস, সুরাতিসহ ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এত টাকা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বাবুল সরকারের আপন ভাগনে মো. বিলাস এবং অনুসারী জাতীয় শ্রমিক লীগের জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম নবুসহ আরও বেশ কয়েকজন দোকান পাট ভেঙ্গে দিয়েছে। তবে ওই দুই শ্রমিকলীগ নেতার দাবি পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস ট্রামিনালের আশপাশে যানজট মুক্ত রাখতে এবং লোকাল যানবাহন রাখার জন্য অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকার ঘর সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।

ভুক্তভোগী আরিফ বলেন, মহাসড়ক বর্ধিত হওয়ার কারণে এখানে হকার্স মার্কেট উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ হওয়া সে মার্কেটে আমরা দুটি দোকান ছিল। দুটি দোকান উচ্ছেদ হওয়ায় আমি পথে বসে গিয়েছিলাম। পরে হকার্স মার্কেটের খালি জায়গায় আমি চায়ের দোকান বসিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু আজ বাবুল সরকারের লোকজন এসে আমার ছোট্ট দোকানটি ভেঙে সরিয়ে দিয়েছে। আমি এখন কীভাবে সংসার চালাবো বলতে পারছি না।

ভুক্তভোগী খোদেজা খাতুন বলেন, আট বছর ধরে এখানে ভাতের দোকান করছি এতদিন কেউ কিছু বলেনি। আজ বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে নবু পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে এসে যাত্রীবাহী লোকাল গাড়ি রাখার কথা বলে দোকান সরিয়ে নিতে বলেন। নিজেরা না সরিয়ে নিলে তারা ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পরে দ্রুত দোকানঘর দোকান সরিয়ে নিয়েছি।

নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা বলেন, তিন-চার দিন আগে নবু এসে প্রতি দোকান থেকে দুই-পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের চাহিদা মাফিক টাকা দিতে না পারায় আজ দোকান ভেঙে দিয়েছে আর আমরা যেখানে দোকান করছি সেটা হকার্স মার্কেটের জায়গা ছিল এটি পৌর বাস টার্মিনালের জমি না।

অভিযুক্ত বিলাশ বলেন, আমি গতকাল (মঙ্গলবার) ঘটনাস্থলে থাকলেও আজ উপস্থিত ছিলাম না। জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি আমার মামা বাবুল সরকার বলেছেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশ টার্মিনালের আশপাশ যানজট মুক্ত রাখতে অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা দোকান সরিয়ে ফেলতে হবে। দোকার ঘর ভাঙলে সমস্যা নেই, আপনারা বিকেলে এসে বাবুল সরকারের সঙ্গে কথা বলেন বলেই ফোন কেটে দেন।

পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, এখানে বাইরের কেউ ব্যবসা করে না, আমাদের লোকাল লোকজন করে। ভাসমান এসব ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা চেয়েছে এটার কোনো প্রমাণ থাকলে আমরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।

পৌর ট্রার্মিনালের ইজারাদার কোরাইশী এন্টার প্রাইজের মালিক এম এ ইরাদ কোরাইশী ইমন বলেন, আমি শুনেছি টার্মিনালের আশপাশে যানজট মুক্ত রাখতে এবং লোকাল যাত্রীবাহী যানবাহন রাখতে ভাসমান দোকানগুলো সরানো হয়েছে। তবে দোকান সরানোর ভয় দেখিয়ে কেউ যদি ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করে সমর্থন করি না। পৌর টার্মিনালের জন্য নিদিষ্ট কোনো জায়গা আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বাবুল সরকার বলেন, চাঁদা দাবির বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। টার্মিনালের প্রবেশ পথ যানজট মুক্ত রাখতে অস্থায়ী দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপারের (এসপি) নাম ভাঙিয়ে দোকান সরানোর বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, বিষয়টি জানার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশের নাম ভাঙিয়ে যারা এ কাজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।