নিজস্ব প্রতিকেদক:
রাঙামাটি: গত দেড় দশক ধরে সরকারের সুনজরে দুর্গম জনপদ খ্যাত রাঙামাটির যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে নির্মিত সড়কের ফলে এ অঞ্চলের দৃশ্যপট বদলে গেছে।
উন্নয়নের অংশ হিসেবে সড়ক ও জনপদ বিভাগ জেলার নানিয়ারচর-লংগদু উপজেলার সঙ্গে খুব শিগগিরই সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে যাচ্ছে। সড়কটি নির্মিত হয়ে গেলে তিনটি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। উপজেলাগুলো হলো নানিয়ারচর, লংগদু ও বাঘাইছড়ি।
রাঙামাটি জেলা সদরের সঙ্গে নানিয়ারচর উপজেলার সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলেও লংগদু উপজেলার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা কোনোদিনই ছিল না। যোগাযোগ রক্ষা হত নৌ-পথে। তবে এইবার সরকার নানিয়ারচর উপজেলার সঙ্গে লংগদু উপজেলার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
সড়কটি নির্মিত হলে উপজেলা দুটির যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে তেমনি জেলার সদরের সঙ্গে শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। শুধু তাই নয়; এ সড়কটি গড়ে উঠলে রাঙামাটিবাসী নানিয়ারচর হয়ে, লংগদু-বাঘাইছড়ি উপজেলার সঙ্গে অনায়াসে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে। তথা জেলা সদরের সঙ্গে তিনটি উপজেলার সড়ক পথে যোগাযোগ সহজ হয়ে উঠবে।
স্থানীয়রা বলছেন, নানিয়ারচর-লংগদু সড়ক নির্মিত হয়ে গেলে তিনটি উপজেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন সহজ হবে তেমনি এখানকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত সহজিকরণসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতিফলন ঘটবে।
নানিয়ারচর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রিপন দাশ সিএনএনবাংলা২৪কে বলেন, নানিয়ারচর উপজেলা একটি দুর্গম অঞ্চল। এ অঞ্চলে বর্তমান সরকার চুনীলাল সেতু নির্মাণ করে দেওয়ায় এখানকার জীবনমানে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। এইবার সড়ক বিভাগ লংগদু উপজেলার সঙ্গে নানিয়ারচর উপজেলার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে দিলে এ অঞ্চলের উন্নয়ন বহুগুণ বেড়ে যাবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে পরিণত হবে এই এলাকা।
তিনি বলেন, এ উপজেলা আনারসের জন্য বিখ্যাত। সঙ্গে আরও গুরুত্বপূর্ণ ফসল রয়েছে। সড়ক নির্মাণ হয়ে গেলে জেলা সদরসহ তিনটি উপজেলার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত সহজ হয়ে উঠবে।
সুবলং এলাকার বাসিন্দা কলেজছাত্রী জ্যোতিকা চাকমা সিএনএনবাংলা২৪কে বলেন, আমার কলেজে যেতে কষ্ট হয়। সড়ক হয়ে গেলে আমরা খুব দ্রুত কলেজে যেতে পারবো। সরকারের কাছে অনুরোধ অতি শিগগিরই যেন সড়কটি নির্মাণ করে দেয়।
সবজি ব্যবসায়ী ইমন চাকমা সিএনএনবাংলা২৪কে বলেন, যেকোনো উন্নয়ন ভালোর জন্য হয়। ভালো সড়ক না থাকায় আমাদের ব্যবসা করতে অনেক বেগ পেতে হয়। শুনছি সরকার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করছে। সড়ক নির্মিত হয়ে গেলে আমাদের জন্য আর্শীবাদ হবে।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নানিয়ারচর উপজেলার সঙ্গে লংগদু উপজেলার দূরত্ব ৩৭ কিলোমিটার। দূরত্ব ঘোচাতে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ৩৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে ফেলেছে রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগ। বর্তমানে নানিয়ারচর উপজেলা থেকে লংগদু উপজেলা সীমান্ত পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক থাকলেও সড়কের বেহাল অবস্থা। সড়কটি সংস্কার করাসহ নানিয়ারচর-লংগদু উপজেলার মোট ৩৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ অতি শিগগিরই শুরু করা হবে বলে প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত করেছে।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা সিএনএনবাংলা২৪কে বলছেন, সড়ক নির্মাণের প্রাক্কলনের কাজ শেষ হয়েছে। সড়কটি তৈরি করতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ব্যাটালিয়নকে অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করছি আমরা অতি শিগগিরই বিকল্প সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারবো।
দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হলে তিন উপজেলার বাসিন্দাদের যেমন জেলা সদরের সঙ্গে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারবে তেমনি ওই এলাকার মানুষের জীবনমানে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হবে।