ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মৌলভীবাজারের হাওরাঞ্চলে সচেতনতামূলক প্রচারণায়ও থামছেনা অতিথি পাখি শিকার

সালেহ আহমদ (স’লিপক)

 

শীতে অতিথি পাখির কলকাকলীতে মুখর হয়ে উঠেছে মৌলভীবাজারের হাইল হাওর ও বাইক্কাবিল সহ বিভিন্ন বিল-ঝিল। কিন্তু এই পাখি নিধনে স্থানীয় অসাধু শিকারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বিভিন্ন বিষ টুপ ফাঁদ সহ নানা কৌশলে অসংখ্য অতিথি পাখি শিকার করছে তারা।

প্রতিবছরের মতো এবারও শীতের শুরুতে শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কাবিল সহ বিভিন্ন বিল-ঝিলে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি এসেছে। এসব পাখির কলকাকলীতে দেখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাখি প্রেমিকরা আসেন বাইক্কাবিলে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও থেমে নেই পাখি শিকার। শিকারিরা নানা কৌশলে শিকার করছে দেশি বিদেশী পাখি।

 

গত ২১ জানুয়ারী রবিবার রাতে বড়লেখা উপজেলা হাকালুকি হাওরের মালাম বিলে বিষটোপ দিয়ে পাঁচ শতাধিক অতিথি পাখি নিধন করেছে সংঘবদ্ধ অসাধু শিকারি চক্র। বিলগুলোতে পাখি নিধনে অসাধু শিকারি চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে। পাখি নিধনকারিরা যেন অপ্রতিরোধ্য।

 

স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, খাবারের সাথে বিষ টুপ বানিয়ে বিলে ফাঁদ পেতে রাখা হয়। এসব বিষ টুপ খেয়ে মারা যাচ্ছে অতিথি, পরিযায়ী সহ নানান প্রজাতির পাখি।

 

শিকারের এই চিত্র প্রতিনিয়তই দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল হাইল হাওর এবং বাইক্কাবিল সহ বিভিন্ন জলাশয়ে। শিকার করা এসব পাখি বেশি দামে বিক্রির লোভে নানা কৌশলে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন শিকারিরা। প্রতিবছর শীতকালে হাইল হাওরে এসব শিকারিদের দৌরাত্ব্য বেড়ে যায়। এবারও এই অঞ্চলে পাখি শিকারিদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। তবে বিলের সৌন্দর্য্য রক্ষায় বাইক্কাবিল প্রকল্প চালু, বিল খনন করা সহ বিলের আয়তন বৃদ্ধির দাবি উঠেছে। পাশাপাশি রক্ষনাবেক্ষনে চরম অবহেলার পাশাপাশি মাছের জন্য বিখ্যাত বাইক্কাবিলে অবৈধভাবে পাখি শিখারীদের দৌরাত্ব্য বন্ধ না হওয়ায় বাইক্কাবিল সৌন্দর্য্য যেমন হাঁরাচ্ছে; তেমনি সরকার হাঁরাচ্ছে রাজস্ব।

 

জানাযায়, সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকা থেকে খাজা মিয়া নামে এক পাখি শিকারিকে বেশকিছু পরিযায়ী পাখি ও পাখি ধরার সরঞ্জাম সহ আটক করা হয়। এসময় তাকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়াও মৌলভীবাজারের থানাবাজার এলাকা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ৮টি পাখি সহ আটক আব্দুস শহীদকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালাত। পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় তাকে।

 

হাইল হাওর এলাকার বাসিন্দা সফল মিয়া জানান, হাইল হাওরের পাশাপাশি বিলের এবং কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, ইসলামপুর ও হাজীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় শিকার করা পাখি বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব বলেন, অবাধ শিকারের কারণে পাখিদের পরিসর যেমন সীমিত হয়ে আসছে, তেমনি হুমকির মুখে পড়ছে এর প্রজনন ও আবাসস্থল। অতিথি পাখির আগমনের এ সময়টিতে শিকারিরা বেশি সক্রিয় থাকে।

হাওর-বিলের পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকা থেকে শিকার করা পাখি খুব গোপনে বিক্রি হয় জানিয়ে মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সৈয়দ মহসীন পারভেজ বলেন, গ্রামের অনেক মানুষ এখনো জানে না যে পাখি শিকার নিষিদ্ধ এবং বেআইনী। তাই এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি শিকার বন্ধে ব্যাপক অভিযান চালাতে হবে।

শ্রীমঙ্গল বাইক্কাবিল বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সভাপতি পিয়ার আলী জানান, বাইক্কাবিলের মাছ রক্ষার দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তারাই পাখিদের নিরাপদে রাখার চেষ্টা করেন। পাখির নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারীভাবে পাহাড়াদার বাড়ানো হলে পাখি শিকার কমে আসবে।

সার্বিক বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পাখি শিকার বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পাখি শিকারিদের বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বন বিভাগের নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সচেতনতা কার্যক্রমও চালিয়ে আসছেন তারা। তারপরও তেমন সুফল মিলছে না।