ই-পেপার | শনিবার , ১৫ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৪৩ জেলায় চলছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার শৈত্যপ্রবাহ

নিউজ ডেস্ক :

গত ক’দিন ধরে কনকনে শীতের দাপট বাড়ছে। বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। কার্যত হিম শীতে কাঁপছে দেশ। গতকাল চুয়াডাঙ্গা-সিরাজগঞ্জে ছয়ের ঘরে নামে তাপমাত্রা। দেশের ৪৩ টি জেলায় প্রবাহিত হয়েছে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্য প্রবাহ। রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা গতকাল আরও এক ডিগ্রি হ্রাস পেয়ে ১১ ডিগ্রিতে নামে।

তবে ঘন কুয়াশা কেটে সূর্যের আলোকচ্ছটায় দিবাভাগে কিছুটা উষ্ণতা ছড়ায়। ৬-৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা নেমে আসা জেলাগুলোতে শরীর অবশ হওয়ার মতো ঠাণ্ডা অনুভূত হয়েছে।শৈত্য প্রবাহ কবলিত জেলাগুলোর স্কুলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তীব্র শীতে প্রায় সারাদেশে জনজীবন ছিল বিপর্যস্ত। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ। কষ্ট বেড়েছে শ্রমজীবী শিশু-বৃদ্ধদের। ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা ভিড় করছেন হাসপাতালে। সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।এছাড়া মানুষের সঙ্গে প্রাণীকূলও শীতে দুর্বিষহ অবস্থায় পতিত হয়েছে।।

আবহাওয়া বিশ্লেষকগণ জানান, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে আজ মধ্যরাতের মধ্যে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবারও খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের কোন কোন জেলায় বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির পর তাপমাত্রা ক্ষাণিকটা হ্রাস পেতে পারে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, দেশে চারটি বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গা এবং সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি। ঢাকায় এই বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কাল। ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের পুরো অঞ্চল এবং বরিশাল, ভোলা, মৌলভীবাজার ও কুমিল্লা এই চার জেলায় বইছে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ।

আবহাওয়াবিদ ওমার ফারুক বলেন, এটা মৌসুমের শেষ শৈত্যপ্রবাহ নয়। আরও একটা শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। ২৭ জানুয়ারির দিকে আবার শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। তবে সেটা বেশি দিন স্থায়ী হবে না। ২৯-৩০ জানুয়ারির দিকে তাপমাত্রা আবারো বাড়বে।

আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শৈত্যপ্রবাহ হতে দেখা যায়। তাপমাত্রার ভিত্তিতে অন্তত তিন দিন স্থায়িত্বকাল অনুযায়ী শৈত্যপ্রবাহকে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। তাপমাত্রা যখন ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝে থাকে, তখন তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটিকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, চার থেকে ছয় ডিগ্রির মাঝে হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে হলে তাকে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

অধিদপ্তরের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে ২০১৮ সালে। ঐ বছরের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড। সে বছর সারাদেশে দফায় দফায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেই তুলনায় এ বছর এখন পর্যন্ত কোনও জেলাতেই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ দেখা যায়নি।

এদিকে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ গতকাল কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে জানান,পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ওপরে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।

১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা যেসব জেলা-উপজেলায়: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গতকাল টাঙ্গাইলে ৮.৫, ফরিদপুরে ৭.৫, মাদারীপুরে ৮.৩, গোপালগঞ্জে ৭.৮, রাজশাহীতে ৭.৮, ঈশ্বরদীতে ৮.০, বগুড়া ও বদলগাছীতে ৯.০, তাড়াশে ৮.৪; রংপুরে ৯.৬, দিনাজপুরে ৮.৪, সৈয়দপুরে ৮.৬, তেঁতুলিয়ায় ৭.১, ডিমলায় ৮.৫, রাজারহাটে ৭.৫; শ্রীমঙ্গলে ৯.২; সীতাকুন্ডে ৯.৪, কুমিল্লায় ৯.৯; খুলনায় ৯.৪, সাতক্ষীরায় ৯.৫, যশোরে ৮.৬, চুয়াডাঙ্গায় ৬.৬, কুমারখালীতে ৯.০, বরিশালে ৮.৪ ও ভোলায় ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মৌলভীবাজার, বরিশাল, ভোলা ও কুমিল্লা জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলা, রংপুর বিভাগের ৮টি জেলা, রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলা ও খুলনা বিভাগের ১০টি জেলাসহ মোট ৪৩টি জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়।