ই-পেপার | শনিবার , ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও ফ্লাইওভার

ইকরা তৌহিদ মিম:

ফ্লাইওভার আর এলিভেটেড একপ্রেসওয়ে কি এক? নাকি দুটোর মধ্যে কোনো পার্থক্য রয়েছে? চলুন উত্তর জানা যাক

সবার মুখে এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাম। ২ সেপ্টেম্বরে ২০২৩ খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ (১২ কিলোমিটার) উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে এই এলিভেটেভ একপ্রেসওয়ে নিয়ে। এটি কি উড়াল সেতু? ফ্লাইওভার আর এলিভেটেড একপ্রেসওয়ে কি এক? নাকি দুটোর মধ্যে কোনো পার্থক্য রয়েছে? চলুন উত্তর জানা যাক-

ফ্লাইওভার বা উড়ালসেতু কী?

উড়ালসেতু বা অধিসরণি ফ্লাইওভার বা ওভারপাস হচ্ছে এক ধরনের সেতু, সড়ক, রেলরাস্তা বা এ ধরনের কোনো স্থাপনা। এটি কোনো সড়ক বা রেলপথের ওপর দিয়ে নির্মিত হয়। গাঠনিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নিম্ন ধারণক্ষমতাবিশিষ্ট সড়কের ওপর অপেক্ষাকৃত বেশি ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট রাস্তা তৈরি করা হলে তাকে ফ্লাইওভার বলে। কোনো সিগন্যাল ছাড়া এক রাস্তাকে অন্য আরেকটি রাস্তার সঙ্গে মেলানোর কাজটি করে ফ্লাইওভার।

 

বাংলাদেশের ফ্লাইওভার:

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফ্লাইওভার হলো ‘মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার বা যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার’। এর দৈর্ঘ্য ১০.৩ কিলোমিটার। মূল ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য ৪.১ কি.মি.। এটির সংযোগকারী সড়কের দৈর্ঘ্য ৬.২ কি.মি.।

 

এছাড়াও আছে ৩.১ কিলোমিটার বিশিষ্ট কুড়িল ফ্লাইওভার, ১.৯ কিলোমিটার বিশিষ্ট খিলগাঁও ফ্লাইওভার। রাজধানী ঢাকার আরও কটি ফ্লাইওভারের মধ্যে রয়েছে মহাখালী ফ্লাইওভার (১.১২ কিলোমিটার), বিজয় সরণি ফ্লাইওভার (১ কিলোমিটার), জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার (১.৭৯৩ কিলোমিটার), মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভার (৮.২৫ কিলোমিটার)।

 

এই হিসেবে রাজধানী ঢাকাকে অনেকটা ফ্লাইওভারের নগরী বলা যায়। মূলত যানজট কমানো এবং যাতায়াত ব্যবস্থাকে উন্নত করার লক্ষ্যেই এসব উড়ালসেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

 

এটি এক ধরণের হাইওয়ে। যার অবকাঠামো ফ্লাইওভারের মতই। ফ্লাইওভার শুধু নির্দিষ্ট একটি স্থানের ট্রাফিক ওভার করে। অপরদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বয়ে যায় একটা শহর বা অঞ্চলের ওপর দিয়ে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এটি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে শুরু হয়ে-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে এটি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অংশের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। সংযোগ সড়কসহ এর দৈর্ঘ্য হবে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে:
বাংলাদেশের দ্বিতীয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এটি। চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর বা পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত নির্মিত হবে এই উড়ালসড়ক। এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে নগরীর সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে কর্ণফুলী টানেলের সঙ্গে। এর দৈর্ঘ্য হবে ১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফ্লাইওভার এবং এলিভেটেড একপ্রেসওয়ের পার্থক্য

এক ধরনের সেতু হলেও ফ্লাইওভার আর এলিভেটেড একপ্রেসওয়ে এক নয়। কোনো সড়ক বা রেললাইনের ওপর দিয়ে যে সেতু নির্মিত হয় তা ফ্লাইওভার। এর দৈর্ঘ্য কম হয়। অন্যদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হলো একটি শহর বা অঞ্চলের ওপর বয়ে যাওয়া দীর্ঘ উড়ালসড়ক। এর দৈর্ঘ্য অনেক বেশি হয়।

এক্সপ্রেসওয়ে এবং এলিভেটেড একপ্রেসওয়ে কী এক?

এই প্রশ্নের উত্তর হবে— না। প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত বিশ্বমানসমৃদ্ধ মহাসড়ক এক্সপ্রেসওয়ে। সব মহাসড়কে বিরতিহীনভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হয় না। এর প্রধান কারণ, এসব মহাসড়কে রয়েছে প্রতিবন্ধকতা। আছে একের পর এক মোড়।

এমন নানা জটিলতায় মহাসড়ক বা হাইওয়েতে চলাচলকারী যানবাহন নির্দিষ্ট গতিতে চলতে পারে না। ফলে গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টি থাকে অনিশ্চিত। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতেই বিশেষ সুবিধাসহ যে হাইওয়ে নির্মিত হয় সেটি এক্সপ্রেসওয়ে। এতে প্রবেশের পথ একটি, বের হওয়ারও পথ একটি। হাইওয়ের তুলনায় এক্সপ্রেসওয়েতে যাতায়াত করতে কম সময় লাগে। বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে’। অন্যদিকে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংজ্ঞা আগেই বলা হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়ার মাধ্যমে রাজধানীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। অসহনীয় যানজটে নাকাল নগরবাসী পাবে কিছুটা স্বস্তি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে মাত্র ১০ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ভ্রমণ করা সম্ভব হবে।

তাছাড়া রাজধানীর বাইরে অবস্থান করা বিদেশগামী কিংবা বিদেশফেরত যাত্রীরা কোনো সিগন্যাল ছাড়াই বিমানবন্দর থেকে পৌঁছে যেতে পারবেন সায়েদাবাদ। যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হবে না তাদের।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪