আন্তজার্তিক ডেস্ক :
শহরজুড়ে জাফরান পতাকা। নানান রঙের ফুলের বাহার। রঙিন বাতির আলোকসজ্জায় সেজেছে রাস্তাঘাট, দালান-কোঠা-অফিস। ছোট ছোট গাড়িতেও একই সাজসজ্জা। গান-বাজনা, খাওয়া-দাওয়া, হই-হুল্লোড়ের পাশাপাশি কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। মহা ধুমধামে মহা আয়োজন চলছে ভারতে। জমজমাট হয়ে উঠেছে দেশটির উত্তর প্রদেশের শহর অযোধ্যা। কেননা, প্রায় ৩ বছরের নির্মাণকাজ শেষে আজ উদ্বোধন হচ্ছে বহুল প্রতিক্ষিত রাম মন্দিরের। বেশ ঘটা করেই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ মহোৎসব চলবে।
স্থানীয় সময় সোমবার দুপুর ১২.১৫ থেকে ১২.৪৫ মধ্যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময়সূচি নির্ধারিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতেই শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান। বিরাট এই কর্মযজ্ঞের মধ্যমণি তিনিই। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত থাকবেন তিনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৮,০০০ অতিথি আয়োজনে অংশ নেবেন। এছাড়াও ৫০৬ জনের আমন্ত্রিত তালিকায় রাজনীতিবিদ, শীর্ষস্থানীয় অতিথি, তারকা, কূটনীতিবিদ, বিচারক, মহাযাজকও উপস্থিত থাকবেন। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আলজাজিরা, দ্য হিন্দু, সিএএনএন।
মহা-উৎসবের আয়োজন শুরু হয়েছিল ১৬ জানুয়ারি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ সর্বত্রই ছিল মন্দির উদ্বোধনের প্রচারণা। জোর দিয়ে বলা হচ্ছে রাম ‘ফিরে আসছেন’। এছাড়াও রামের জীবন ঘিরে নতুন টিভি শোও প্রচারিত হচ্ছে টিভি চ্যানেলগুলোতে।
নিউজ টেলিভিশন চ্যানেলের যানবাহনে বিশাল রাম স্টিকার লাগানো হয়েছে। সারা দেশের সিনেমা হলগুলোতে মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। সরাসরি সম্প্রচার হবে দেশের বাইরে ভারতের বিভিন্ন দূতাবাস, কনস্যুলেট ভবনগুলোতেও। ১০০ রূপ দিয়ে সেই বিশেষ আয়োজন দেখতে দর্শকরা পপকর্ন ও কোমল পানীয়ও পাবেন। উপস্থিত দর্শকদেরও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ইতোমধ্যেই কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে অযোধ্যাকে। পুলিশ এবং কম্যান্ডো বাহিনীতে ছয়লাব গোটা শহর।
প্রতিটি উঁচু বাড়ির মাথায় স্লাইপার পাহারা। আকাশে নিরন্তর উড়ছে অত্যাধুনিক নজরদারি ড্রোন। পথচারী ও যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য কাঠের ব্যারিকেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উদ্বোধন চলাকালীন ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত নিরাপত্তাবাহিনীর কঠোর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। আমন্ত্রিত অতিথিদের অব্যশই রাম মন্দিরের ট্রাস্টের দেওয়া লিঙ্কে নিবন্ধন করতে হবে। প্রক্রিয়াটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। নির্ধারিত কিউআর কোড মিললেই অতিথিরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। পাশাপাশি তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রও সঙ্গে আনতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে ভক্তরা পিঠা, হালুয়া, লাড্ডু, শস্য, মিষ্টি এবং আরও অনেক কিছু প্রসাদ আকারে পাঠাতে শুরু করেছেন।
ছত্তিশগড় থেকে প্রায় ৩০০ টন সুগন্ধি চাল পাঠানো হয়েছে। আয়োজনটিকে আরও জমকালো করতে নির্বাচিত সংগীতশিল্পীরা তাদের নিজ নিজ অঞ্চলে স্থানীয় বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র প্রদর্শন করবেন। এদের মধ্যে উত্তর প্রদেশের বাঁসুরি ও ঢোলক শিল্পী, কর্নাটকের বীণা, পাঞ্জাবের আলঘোজা, ওডিশা থেকে মারদালা, মধ্যপ্রদেশের সান্টুর, মণিপুরের পুং, আসামের নাগাদা ও কালি, ছত্তিশগড়ের তম্বুরা, বিহারের পাখাওয়াজ ইত্যাদি নানা বাদ্যযন্ত্রে ব্যবস্থা থাকবে।
২৩ জানুয়ারি থেকে ভক্তদের আগমনের জন্য চিকিৎসাব্যবস্থায়ও জোর দেওয়া হয়েছে। অযোধ্যায় ১২০ এবং ৩৫০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে।