চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :
প্রশাসনিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষক সমিতির পূর্বঘোষিত আন্দোলনের প্রথমদিন দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র। যেখানে একপাশে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আয়োজনে গানবাজনায় উদযাপন করা হচ্ছিল ‘গণতন্ত্রের বিজয়’।
অপরদিকে তার পাশেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষক সমিতি নেতৃবৃন্দ পালন করছিল অবস্থান কর্মসূচি।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) বেলা ১২টায় চবির প্রশাসনিক ভবনের সামনে দেখা যায় এমন দৃশ্য।
এদিন বেলা ১১টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা থাকলেও একই স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও আয়োজন করে ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ মঞ্চ।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষক সমিতি অবস্থান কর্মসূচি শুরুর পর বক্তব্য দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হয় সংগীতানুষ্ঠান। এ সময় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ কোনো ধরনের বক্তব্য ছাড়াই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
দুপুর ১টার দিকে প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত সংগীতানুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হকের সঞ্চালনায় সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন সাময়িক স্থগিত ছিল। কিন্তু প্রশাসন আজ শিক্ষক সমিতির পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি ভন্ডুলে স্থান বেদখল করে রেখেছে। আমরা বারবার তাদেরকে বলেছি, আমরা যেন আমাদের স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে পারি। কিন্তু মৌখিক আশ্বাস দিলেও তারা যথাসময়ে স্থান ছেড়ে না দিয়ে আমাদের স্থানে একটা তথাকথিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তারা যান্ত্রিক সংগীত পরিবেশন করে আমাদের কর্মসূচির পরিবেশ নষ্ট করতে চায়।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়েরিতে বঙ্গবন্ধু টানেলকে বাদ দিয়ে বিদেশের একটি টানেলের ছবি দেওয়া হয়েছে। যা প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের প্রতি চবি উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে আপোষ করার জন্য তিনি চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন। অথচ রেজিস্ট্রারকে দিয়ে তিনি আবার খুবই অপমানজনক একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। উপাচার্য আমাদের সঙ্গে সমঝোতার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কিন্তু শিক্ষক সমিতি মনে করে, এ প্রশাসনের বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। আমরা এমন নজির কখনো দেখিনি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অমান্য করে আলাদা সিন্ডিকেট গঠন করে প্রশাসন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। উপাচার্যের নিকট আমার প্রশ্ন, যারা এই দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষক হবে তারা জাতিকে কি দিবে?
চবির সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন না হওয়া পর্যন্ত আমরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এ আন্দোলন কর্মসূচী চালিয়ে যাবো।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সিরাজ উদ দৌল্লাহ, আইন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিউল আযম ডালিম।
এর আগে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে’র পদত্যাগের দাবিতে টানা তিনদিনের অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ আন্দোলন।