ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছড়াশিল্পী মিনারা আজমী’র ছড়াগ্রন্থ ‍‍‌‌‌‍‌‌‌‌‌‌‌‌‌”স্বপ্ন আমার কিচির মিচির “

-শামীমা রিতু

উদীয়মান ছড়াশিল্পী মিনারা আজমী নব্বই দশকের ২০ মার্চ মৌলভীবাজার পৌর শহরের বড়কাপন গ্রামের মোল্লাবাড়িতে রক্ষণশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোট্টবেলা থেকেই মিনারা খুব মেধাবী ও জ্ঞানী ছিলো এবং মৌলভীবাজারের সনামধন্য আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়ণরত অবস্থায় ‘একুশে বইমেলা ২০০৯’ এ ঢাকার “প্রতিভা প্রকাশ” থেকে “স্বপ্ন আমার কিচির মিচির” বইটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশক ছিলেন তরুণ কবি মঈন মুরসালিন। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন বিখ্যাত প্রচ্ছদ শিল্পী নিয়াজ চৌধুরী তুলি এবং অলঙ্করণ করেছেন নজরুল গবেষক কবি মহিউদ্দিন আকবর। বইটির পান্ডুলিপি পড়ে অভিমত দিয়েছেন কবি আল মাহমুদ। এরও আগে ২০০৮ সালে ঢাকার ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ থেকে মিনারা’র প্রথম কাব্যগ্রন্থ “পাখি যদি হতাম” প্রকাশ হয় এবং মিনারা আজমী ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। সে বিষয় নিয়ে অন্য একদিন লিখবো। আজকের রচনা “স্বপ্ন আমার কিচির মিচির” ছড়াগ্রন্থ নিয়ে।

মিনারা আজমী রেড ক্রিসেন্ট, গার্লস গাইড এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাব, আমরা মাদক নিবারণ করি (আমরা মানিক), আলা হযরত (রহ.) ক্বেরাত প্রশিক্ষণ প্রকল্প সহ বিভিন্ন সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, উন্নয়ন ও সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত এবং মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে ‘বাংলা’ বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) অর্জন করেছেন। এছাড়া তিনি একজন ক্বারীয়া। বর্তমানে বিবাহসূত্রে তিনি রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে বসবাস করছেন একমাত্র মেয়ে মরিয়ম এবং স্বামী শাশুড়ী দেবরদের সাথে।

“স্বপ্ন আমার কিচির মিচির” বইটিতে মোট ৩২টি মজার মজার শিশুতোষ ছড়া রয়েছে। এ ছড়াগুলোতে বইটির নামকরণের স্বার্থকতা ফোটে উঠেছে। যেমন, আযব ভুতের কথা, ঘ্যাড়ো ব্যাঙ, যদি হতো ইত্যাদি। মিনারা আজমীর প্রধান অনুপ্রেরণা আরেক প্রখ্যাত লেখক, কবি, সাংবাদিক সালেহ আহমদ (স’লিপক) কে নিয়ে লেখা ছড়া ‘ভাইয়া’, বইমেলা নিয়ে মজার একটি ছড়া, ছেলেবেলার স্মৃতি বিজড়িত ছড়া ‘চড়ুইভাতি’, হেংলা বুড়িকে নিয়ে মজার লেখা, কিপ্টে বুড়োকে নিয়ে মজার লেখা ‘টাকার শোকে’, পান্তাবুড়ির মজার ছড়া। মিনারা আজমী কিশোরী বয়সে রচিত তার মন অতি দরদে ‘ভিক্ষুক’ ছড়ায় ফোটিয়ে তুলেছেন ভিক্ষুকদের কষ্টের কথা। বইটির আরেকটি মজার ছড়া হলো ‘উঠ পাখির ডিম’, দুষ্টুছেলে রমেশের ছড়া পড়লে এমনিতেই হাসতে হবে। প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মহিউদ্দিন আকবরকে নিয়ে লেখা তার আরেকটি ছড়া ‘চিত্রশিল্পী’ পড়লে অবাক হতে হয় যে মাত্রাজ্ঞান ছন্দমাত্রার হালে পাল তুলে কিভাবে কিশোরী মনের মাধুরীতে তার স্বপ্নগুলোতে কিচির মিচির সুর বাজিয়েছেন।

শুধু রূপকথামূলক, হাস্যব্যাঙ্গাত্মক লেখা নয়, বাস্তবতার নিরিখে তিনি ছন্দাক্ষরে এঁকেছেন দামের কারণে ইলিশ মাছ খেতে না পারা ‘গফুর আলী’র’ কষ্টের কথা। আরেক চঞ্চলা শিশু নৃত্যশিল্পী, আবৃতিশিল্পী সাদিয়া জান্নাত নিসার অভ্যাসকে তুলে ধরেছেন ‘সাদিয়ার অভ্যাস’ ছড়ায়। শুধু লেখালেখি নয় লেখাপড়ার গুরুত্বকে তুলে ধরে লিখেছেেন ‘লেখাপড়া করে যে’ শিরোনামক ছড়া। নিপুণ ছড়াশিল্পী তার ছন্দের তুলিতে এঁকেছেেন আরেক কিশোরী ‘ইতির সারাবেলা’। বইপোকা মিনারা আজমী মজা করে লিখেছেন ‘বইপড়া ভারি মজা’। তার বইয়ের শেষ লেখাটি হলো ‘স্বপ্ন আমার কিচির মিচির’-
“স্বপ্ন আমার হরেক রকম
কিচির মিচির শব্দ,
স্বপ্ন আমার পারেনা কেউ
করতে উপলব্ধ”।

মিনারা আজমী’র লেখা এ বইয়ের কয়েকটি ছড়া নিচে দেয়া হলো-

১) ঘ্যাড়ো ব্যাঙ

ঘ্যাড়ো ব্যাঙ, ঘ্যাড়ো ব্যাঙ
বৃষ্টি হলে খালে বিলে
ডাকে শুধু ঘ্যাঙের ঘ্যাঙ।

ডেকে ডেকে ঘাঙের ঘ্যাঙ
মারে সে তো জোড়ে ল্যাং
আনন্দে নেচে গেয়ে
ভাঙল তার দু’টো ঠ্যাং।

তবু্ও সে ঘ্যাড়ো ব্যাঙ
ডাকে শুধু ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ।

২) চিত্রশিল্পী
(মহিউদ্দিন আকবরকে উৎসর্গিত)

আতাগাছে তোতা পাখি ডাকে
খোকন সোনা ডাকছে তার মাকে।
ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ নদীর বাঁকে
নববধু যাচ্ছে কলসী কাঁখে।

হিন্দু নারী সাঁজছে সিঁদুর শাখে
মুক্ত ডানায় উড়ছে পাখি ঝাঁকে।
এসব ছবি আঁকতে বলি যাকে
চিত্রশিল্পী ডাকেন সবাই তাকে।

৩) জোনাকি

একটি পোকা আলো জ্বেলে
আসলো খোকার দিকে
ভয় পেয়ে যে কাঁপছে খোকা
বাত্তি পোকা দেখে।

সেই পোকাটা বলল- খোকা
ভয় পেয়োনা তুমি
রাতের বেলা আলো জ্বেলে
ঘুরে বেড়াই আমি।

ভয়ে ভয়ে বলল খোকা
তোমার নামটা কী
আমি হলাম আঁধার রাতের
আলোর জোনাকি।

মানুষ স্বপ্ন দেখে বিভিন্ন ভাবে। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই স্বপ্ন কাজ করে। স্বপ্ন নিয়েই মানুষের বাস। মিনারা আজমীর স্বপ্নগুলোও সার্থক হয়ে উঠুক। তার স্বপ্ন ভরে উঠুক, সমৃদ্ধতায় পরিপূর্ণ হোক বাংলা সাহিত্যের অমূল্য ভান্ডার।

শামীমা রিতুঃ কবি, সহ-সভাপতি- বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাব মৌলভীবাজার জেলা শাখা।

এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত রিপোর্ট