ই-পেপার | শনিবার , ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাত পোহালেই ভোট, চট্টগ্রামের ১৬ আসনে প্রার্থী ১২৫

আবুল ফয়েজ চৌধুরী, চট্টগ্রাম :

স্যাংশান-সংঘাত কোন কিছুই আটকাতে পারছে না দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নানা আলোচনা সমালোচনা ও শঙ্কা কাটিয়ে অবশেষে আগামীকাল রোববার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভোট। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে। সারাদেশের ন্যায় সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর ভোটের জন্য প্রস্তুত চট্টগ্রামবাসীও। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে নির্বাচনী সরাঞ্জম, ব্যালট পেপার পৌঁছাবে আগামীকাল সকালে।

১৬ আসনে প্রার্থী ১২৫, ভোটার ৬৩ লক্ষাধিক জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট, কল্যাণ পার্টিসহ বিভিন্ন দল এবং স্বতন্ত্রসহ ১২৫ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে আছেন। ১৬ আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ২ হাজার ২৩টি এবং ভোট কক্ষের সংখ্যা ১৩ হাজার ৭৩২টি।

চট্টগ্রামে মোট ভোটার সংখ্যা ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩২ লাখ ৮৯ হাজার ৫৯০ জন এবং নারী ভোটার ৩০ লাখ ২৪ হাজার ৭৫১ জন। তৃতীয় লিঙ্গ ৫৬ জন। এবার ৪৭ হাজার ৫৪৪ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার) সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন। ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১০টি আসনের রিটার্নিং অফিসার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। অপর ৬টি আসনের রিটার্নিং অফিসার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম।

জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোথাও কাউকে প্রভাব বিস্তার করতে দেবো না। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, আমরা আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। নির্বাচনি সরঞ্জাম অনেকগুলোই আগে পাঠানো হয়েছে। আজ (শনিবার) সকাল থেকে বাকিগুলো পাঠানো হচ্ছে। ব্যালটপেপার আগামীকাল (রোববার) সকাল ৭টার মধ্যে কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে যাবে।

মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান, নিরাপত্তা জোরদার নির্বাচনে অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ এবং যানবাহনের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নগরীর বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে পুলিশের সরব উপস্থিতি। এ সময় মোটরসাইকেলসহ সন্দেহজনক পরিবহন তল্লাশি করা হয়।

জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) মোটরসাইকেল এবং অন্যান্য যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার মধ্যরাত ১২টা হতে ৮ জানুয়ারি (সোমবার) মধ্যরাত পর্যন্ত মোটর সাইকেল চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

এছাড়া ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিবসের পূর্ববর্তী মধ্যরাত অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি (শনিবার) দিবাগত মধ্যরাত ১২টা থেকে ৭ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত ট্যাক্সি ক্যাব, পিকআপ, মাইক্রোবাস, ট্রাক চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন ও অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষকসহ বিশেষ কিছু ক্যাটাগরিতে এসব বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে বলে জানানো হয়।

এদিকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে ৮২ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩২ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। চট্টগ্রাম জেলা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ৯ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ৯৬ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য, র‌্যাবের ৩২টি টহল টিম নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ৩ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্বে রয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের ৪ হাজার ৫০০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত বড় কোনো নাশকতা ঘটনা ঘটেনি। উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে ভোটকেন্দ্রে মানুষ ভোট দিতে পারবে। তবুও আমরা সতর্ক আছি যে কোনো নাশকতা মোকাবিলায়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় গণমাধ্যমকে জানান, নগরের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে চারজন এবং কম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে তিনজন করে অস্ত্রধারী পুলিশ এবং ২ জন করে অস্ত্রধারীসহ ১৫ জন আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এর পাশাপাশি মোবাইল টিম, থানা এবং কন্ট্রোল রুমে স্ট্রাইকিং টিম থাকবে। সোয়াত, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট ও ডগ স্কোয়াডের কে-নাইন ইউনিটকেও স্ট্রাইকিং হিসেবে রাখা হবে।