ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মেরিটাইমে বাংলাদেশ বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হচ্ছে: নৌ প্রতিমন্ত্রী

চট্টগ্রাম ব্যুরো :

মেরিটাইম সেক্টরে বাংলাদেশ বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। রোববার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ৫৭তম গ্র্যাজুয়েশন প্যারেডে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, উন্নতির স্বর্ণশিখরে আরোহনের জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। উপযুক্ত শিক্ষা আর প্রশিক্ষণের যুগপৎ সমন্বয়ে সফলতা সুনিশ্চিত।

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা শিক্ষার গুরুত্ব অনুবাধন করেছেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও বছরের প্রথম দিন তিনি নিজ হাতে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন। দশম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা। উপবৃত্তি আমাদের শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। নারী শিক্ষার বিষয়ে তিনি আপসহীন। তাঁরই উৎসাহে, ২০১২ সাল থেকে এই একাডেমিতে নারী ক্যাডেটরা যোগদান করার সুযোগ লাভ করেছে। শুধু তাই নয় তাঁরই অভিপ্রায়ে, ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ ফি ৪ লাখ টাকা থেকে হ্রাস করে এক লাখ টাকা করা হয়েছে। মেরিন একাডেমির ৩ বছর মেয়াদি ব্যাচেলর (পাস) ডিগ্রি কোর্সকে ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) কোর্সে উন্নীত করা হয়েছে। মেরিটাইম সেক্টরে মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট, রংপুর, বরিশাল ও পাবনায় চারটি মেরিন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পেশাগতভাবে দক্ষ, বুদ্ধিদীপ্ত এবং চৌকস মেরিন ক্যাডেট তৈরির মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ মেরিটাইম সেক্টরের স্থপতি, মেরিটাইম শিক্ষার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনায় ঢেলে সাজানো বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ক্যাম্পাসে ৫৭ ব্যাচের ক্যাডেটদের গ্র্যাজুয়েশন প্যারেড অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আজকের এ অনুষ্ঠানে সমবেত সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলকারি সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনার জন্য বিশ্বমানের মেরিন অফিসার ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ার তৈরির জাতীয় প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পর থেকে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এই একাডেমি। একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্বাধীনতার পরপরই ব্রিটিশ সরকারের কারিগরি সহায়তায় বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৩ সালে ‘ডেভেলপমেন্ট অব মেরিন একাডেমি’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন। প্রকল্পটির আওতায় একাডেমির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে উন্নীত হয়।

তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) নির্বাহী পরিষদে বাংলাদেশ ক্যাটাগরি ‘সি’-তে জয়লাভ করেছে। বিজয়ের মাসে এটি আরেকটি বড় অর্জন। এই অর্জন বাংলাদেশের বৈশ্বিক মেরিটাইম সেক্টর এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক সমর্থনের প্রমাণ। এ বছর জুনে আমরা হংকং কনভেনশন অনুসমর্থন করি; এতে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম মানদন্ড বজায় রাখতে বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গিকার প্রতিফলিত হয়েছে, যা এই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই নির্বাচন মেরিটাইম সেক্টরকে সুগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং সংগঠিত করবে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ পরিচালনা এবং জাহাজ পুনর্ব্যবহার সেক্টরের দক্ষতা বৃদ্ধি করে বিদেশে খ্যাতি অর্জন করবে। ১৭৪টি দেশ নিয়ে আইএমও গঠিত। এখানে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেছিলাম নির্বাহী পরিষদের সদস্য হতে। আমরা এর আগে ছিলাম ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরিতে কাউন্সিল হিসেবে। তখন সেটা নির্বাচিত না, সিলেকশনের মাধ্যমে হয়েছিল। ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত নয় অথচ যেসব সামুদ্রিক পরিবহন বা নেভিগেশন নিয়ে বিশেষ আগ্রহ আছে এবং যাদের কাউন্সিলে নির্বাচন বিশ্বের সব প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করবে, এমন ২০টি দেশ ‘সি’ ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছে। ১৬৮টি দেশের বৈধ ভোটের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ১২৮টি ভোট। ‘সি’ ক্যাটাগরি সদস্য নির্বাচনে মোট ২৫টি দেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ১৬৮টি বৈধ ভোটের মধ্যে বাংলাদেশ ১২৮টি ভোট পেয়ে ১৬তম হয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে।

ক্যাডেটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বয়সে তোমরা একদমই তরুণ। কিন্তু যে দায়িত্ব তোমরা পালন করতে যাচ্ছ, সে এক গুরুদায়িত্ব। এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। তোমরাই পারবে সবকিছু জয় করতে। যুদ্ধটা এখন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আর সমৃদ্ধি অর্জনের। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে তোমরাই। উত্তাল সমুদ্রকে বশ করা, প্রিয়জন থেকে দূরে থাকা, নিরাপদে পণ্য পরিবহনের প্রতিজ্ঞা আর আন্তর্জাতিক কর্মপরিবেশে খাপ খাওয়ানো কিন্তু বেশ সহজ কাজ নয়। তবে আমরা বিশ্বাস করি, এসব বাধাগুলো তোমরা পার হয়ে যাবে খুব সহজেই। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির প্রশিক্ষণ তোমাদের সেভাবেই গড়ে তুলেছে।

দেশ-বিদেশের সমুদ্রগামী জাহাজে আমাদের ক্যাডেট ও মেরিনার নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ব্রেড রয়্যাল শিপিং, বসুন্ধরা শিপিং, মার্কেন্টাইল শিপিং লাইন্স, ভ্যানগার্ড মেরিটাইম, ইস্ট কোষ্ট শিপিং লাইন্স, ক্রাউন মেরিটাইম, আকিজ শিপিং, করিম গ্রুপ, ওরিয়ন অয়েল অ্যান্ড শিপিং ইত্যাদি এবং বিদেশের মধ্যে এএসপি শিপ ম্যানেজমেন্ট, কে-লাইন্স লিমিটেড, এক্সপ্রেস ফিডার্স, পিআইএল লিমিটেড, ওশ্যান ট্যাংকার্স, এ.ই.টি. ট্যাংকার ম্যানেজমেন্ট, ওয়ালেম শিপ ম্যানেজমেন্ট, ভি-শিপস ম্যানেজমেন্ট, এক্সেলারেট এনার্জি, এক্সমার শিপ ম্যানেজমেন্ট, ম্যাক্সিমাস শিপিং, নেভিস্পেক শিপিং, রেড সী শিপিং ইত্যাদি সংস্থাকে আমি ধন্যবাদ জানাই। বর্তমানে বিদেশি ২৫টি কোম্পানি আমাদের ক্যাডেটদের নিয়োগ দিচ্ছে। এক মাস পূর্বে ইউরোপীয় আরও ৩টি শিপিং কোম্পানি আমাদের ক্যাডেট নিয়োগের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছে।

বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল ক্যাডেটদের উদ্দেশে বলেন, কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে আজ কর্মজীবনে পদার্পণ করছো তোমরা। দেশপ্রেম যেন হয় তোমাদের মূলমন্ত্র। মেধা ও শ্রম দিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করবে। মেরিন খাত আন্তর্জাতিক খাত। দেশের নৌখাত সর্বমহলে প্রশংসিত। মেরিটাইম সেক্টরে নৌ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা প্রশংসনীয় ও গতিশীল। আশাকরি তোমরা নিজেদের দক্ষতায় দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সক্ষম হবে।

এবার নটিক্যাল শাখায় ১৩৪ জন, ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় ১৩৮ জন সহ মোট ২৭২ জন ক্যাডেট ২ বছরের একাডেমিক ও রেজিমেন্টাল প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে।

এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত রিপোর্ট