ইকরা তৌহিদ মিম, চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে এদিন সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে পুস্পস্তবক অর্পণ করে দেশ-জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে।
পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি শোকর্যালি চবি’র শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ চত্বর থেকে শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এরপর চবি উপাচার্য দপ্তরের সভাকক্ষে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি’র উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে। আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, চবি’র বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন।
চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি প্রক্টর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চবি এস্টেট শাখার প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম।
আলোচনা সভায় উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিনম্র চিত্তে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদ সকল সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ত্রিশ লক্ষ বীর বাঙালি এবং শহীদ জাতীয় চার নেতাকে বিনম্র চিত্তে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন।
উপাচার্য বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা বাঙালী জাতির সূর্য সন্তান। এ জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁদের অবদান চিরস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরকে বেছে বেছে নির্মমভাবে হত্যা করে স্বাধীনতা সংগ্রামকে চিরতরে রুখে দিতে চেয়েছিল এবং বাঙালি জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে চিরতরে পঙ্গু করে দিতে চেয়েছিল; কিন্ত তাতে তারা সফল হয়নি। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী অতিবাহিত হয়েছে, দেশের বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা এ জাতি আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে এবং ভবিষ্যতেও স্মরণ রাখবে।’
ড. শিরীণ বুদ্ধিজীবীরা যে চেতনা ও লক্ষ্য নিয়ে আত্মত্যাগ করেছেন তা নিজেদের ধারণ করে প্রত্যেকে একেকজন সৃজনশীল নাগরিক হয়ে গড়ে উঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান।
আলোচনা সভার শুরুতে কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন চবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবু দাউদ মুহাম্মদ মামুন। গীতা থেকে পাঠ করেন চবি রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায়। ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন চবি পালি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অরূপ বড়ুয়া এবং বাইবেল থেকে পাঠ করেন চবি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক জেসী ডেইজী মারাক।
অনুষ্ঠানমালায় চবি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, অনুষদের ডিন, শিক্ষক সমিতির নেতা, রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক, হলের প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষক, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক, শিক্ষক, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর, অফিস প্রধান, অফিসার এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ, চবি অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়ন, চবি সাংবাদিক সমিতি, শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য ও বিভিন্ন সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মসজিদে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত, দুপুর ১২ টায় চবির কেন্দ্রীয় মন্দিরে গীতাপাঠ ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার চিরশান্তি ও দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার সদগতি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। এছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়।