ই-পেপার | মঙ্গলবার , ১৮ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পটিয়ার চাঞ্চল্যকর চুমকি হত্যামামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার

আবদুল হাকিম রানা, পটিয়া :

চট্টগ্রামের পটিয়ার চাঞ্চল্যকর জুবাইয়ের মোস্তফা চুমকি হত্যা মামলার প্রধান আসামী খোরশেদুল আলম জুয়েলকে চুমকির পিতার দায়েরকৃত পারিবারিক আইনের মামলায় তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গ্রেফতার করেছে পটিয়া থানার পুলিশ। গত ৭ ডিসেম্বর পটিয়া থানার এসআই জিয়াউল হক জিয়া তাকে নিজের এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেন।

গ্রেপ্তার জুয়েল পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের বিনিনিহারা গ্রামের জাফর আলমের পুত্র।

জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের বিনিনিহারা গ্রামে বোয়ালখালী উপজেলার গোলাম মোস্তফা মেম্বারের একমাত্র কন্যা জুবাইয়ের মোস্তফা চুমকিকে হত্যা করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে লাশ ফ্যানে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে তার পিতা থানায় অভিযোগ করেন। এতে ঘটনাটি হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড না হওয়ায় তিনি পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালতে বিষয়টির শুনানী শেষে ১ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটি গ্রহণ করে আদালতকে অবহিত করার জন্য ওসি পটিয়াকে নির্দেশ দেন বিচারক। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ১৮ নভেম্বরই এ মামলাটি পটিয়া থানায় হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। পরে পটিয়া থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা রেজাউল করিম মজুমদার এ মামলার ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে দাখিল করলে এতে না-রাজী দেন বাদী গোলাম মোস্তফা। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের শুনানী শেষে পরের বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি আদালত তা অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডি’তে প্রেরণের নির্দেশ দেন বলে পটিয়া আদালতের পিপি বদিউল আলম জানান।

হত্যাকাণ্ডের সাত মাস পর ২০১৯ সালের ২১ জুন সকাল ৮টায় আদালতের নির্দেশে পটিয়ার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার( ভূমি) সাব্বির রহমান সানির উপস্থিতিতে ময়না তদন্তের জন্য কুসুমপুরা ইউনিয়নের বিনিনিহারা গ্রামের কবর থেকে লাশটি উত্তোলন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নুরুল হাকিম। চুমকির শ্বশুর বাড়ির কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়।

দীর্ঘ ১ বছর ৬ মাস পর ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর আদালতে সিআইডি স্বামীকে অভিযুক্ত করে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর সিআইডির তদন্তের রিরুদ্ধে ২য় দফায় নারাজি দাখিল করেন মামলার বাদী গোলাম মোস্তফা মেম্বার। শুনানী শেষে উক্ত মামলা তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত। পিবিআই এর তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী এনায়েত করিম দাখিলকৃত প্রতিবেদনে স্বামী খোরশেদ আলম জুয়েল এবং শাশুড়ি হোসনে আরা বেগমকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতেও মামলার বাদী গোলাম মোস্তফা ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর নারাজী দিলে আদালত মামলাটি ৪র্থ বারের মত তদন্তের জন্য পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। এতে তিনি প্রতিবেদন দাখিলের পরে মামলাটি চট্রগ্রাম জেলা জজ আদালতে প্রেরিত হলে সেখানে ১ ও ২ নং আসামীর বিরুদ্ধে ৩২৩/৩২৬/৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। বর্তমানে হত্যা মামলাটি জেলা জজ আদালত বিচারাধীন। এরই মধ্যে চুমকির পিতা পটিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে পারিবারিক এসটি মামলা নং ৪২/২১ ইং দায়ের করলে এতে আদালত ভিকটিমের মোহরানা ও নাবালক পুত্রের খোরপোষ ৫ মাসের মধ্যে ১০ কিস্তিতে পরিশোধের নির্দেশ দেন। আসামী আদালতের আদেশ মোতাবেক টাকা জমা না দেওয়ায় চুমকির পিতা গোলাম মোস্তফা পারিবারিক জারি ৮/২৩ মামলা দায়ের করেন। এতে শুনানী শেষে ওয়ারেন্ট দেওয়া হলে পুলিশ খোরশেদুল আলম জুয়েলকে গ্রেফতার করে বলে সূত্রে প্রকাশ।