হাবিবুর রহমান ,লক্ষীপুর :
লক্ষীপুরের কমলনগর চরকাদিরা ইউনিয়নে এক সময়ের খর স্রোত চরঠিকা ও চরপাগলা খালটি শতাধিক প্রভাবশালীর দখলকব্জায় পড়ে অস্তিত্ব হারাচ্ছে।সারাদেশে খালের উচ্ছেদ অভিযান জোরালো দেখা গেলেও এখানে প্রশাসনের ধোঁয়াসা দেখা যায়। তবে আদালত থেকে অফিসপাড়ায় ঘন ঘন দেখা গেছে খাল দখলদারীদের উপস্থিতি। এতে উচ্ছেদ অভিযানে প্রশাসনের দায়সাড়া তদন্ত বলে ক্ষোভ এলাকাবাসীর।
চরঠিকা ও চরপাগলা এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি, উক্ত খালটি ছিলো এ অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ এলাকার পানি নিষ্কাশন একমাত্র উপায়। এসময় এ খালের দৈর্ঘ ছিলো প্রায় ৪ কিলোমিটার। কিন্তু গত কয়েক বছরের দখলে এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। একদিকে খালপাড়ে প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, অন্যদিকে বিভিন্ন স্থানে পতিত ময়লা-আবর্জনায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে খালটি। এতে ব্যহত হচ্ছে কৃষকের প্রধান ফসল ইরি- বোরসহ কৃষি আবাদ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালটি রক্ষায় এরই মধ্যে শতাধিক অবৈধ দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার আশা দেন।
জানা যায়, চরঠিকা খালের পানি দিয়ে একসময় হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমির চাষাবাদ হতো। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ এলাকার পানি নিষ্কাশন হতো এ খাল দিয়ে। দখল-দূষণে সেই খাল বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। দখলদারদের কবলে পড়ে খালটি এখন বিপন্ন। ময়লা-আর্বজনায় দূষিত হয়ে পড়েছে খালের পানি। খালের ওপর স্থাপনা তৈরি হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। দীর্ঘ সময় ধরে খনন না হওয়ায় খালটি এখন পরিণত হয়েছে নালায়।
সরজমিন দেখা যায়, চরঠিকা খালটির ফজুমিয়ারহাট বাজার অংশে থাকা খালের ওপর তৈরি হয়েছে বাণিজ্যিক স্থাপনা, আর উত্তর অংশে গড়ে উঠেছে বসতি। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে পতিত ময়লা-আবর্জনায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে খালটি। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রভাবশালীরা খালটি দখল করেছে। কিন্তু খালটি দখলমুক্ত করতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। খালের ওপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পুনরায় খনন করলে পানিপ্রবাহ যেমন স্বাভাবিক হবে, তেমনি উপকৃত হবেন হাজার হাজার কৃষক- কৃষাণী।
ফজুমিয়ারহাট বাজার পরিচালনা কমিটির অন্যতম এক সদস্য মোখলেছুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কমলনগরের একটি গ্রামকে শহর ঘোষণা করেছে সরকার। সেটি চরকাদিরা ইউনিয়নের চর ঠিকা গ্রাম। কিন্তু এ গ্রামের নামে চরঠিকা খালটি এখন দখলদারদের কবলে। ফজুমিয়ারহাট বাজারের ময়লা-আর্বজনা এ খালে ফেলা হচ্ছে। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাজারের মধ্যে থাকা খালের ওপর দোকানপাট নির্মাণ করে জমি দখল করে নিয়েছে। বাজারের উত্তর-পূর্ব অংশে দখলদাররা ঘরবাড়ি তৈরি করে ফেলছে।’ কৃষক ইউনুছ মিয়া ও কবির হোসেন বলেন, ‘মূলত খালটি কৃষি আবাদ বৃদ্ধির জন্যই খনন করেছিল সরকার। এ খালের পানি দিয়ে একসময় বোরো ধানের আবাদ করতে পারতাম। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে এখন আর এ খালের পানি ঢুকতে পারে না। খালের ওপর বসতবাড়ির চলাচলের পথ তৈরি করে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বোরো আবাদ হয় না।
আবার বর্ষায় খালের দুই পাড়ে থাকা ফসলি জমির পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। এতে আমন চাষও ব্যাহত হচ্ছে। অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ খালটি দ্রত সংস্কার করা প্রয়োজন। স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল্লাহ মুরাদ জানান, দখল-দুষণে কয়েকশ কৃষক তাদের আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটি দখল ও দূষণমুক্ত হলে কয়েক হাজার হেক্টর জমি চাষের আওতায় আসবে বলে জানান তিনি।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস জানান , চরঠিকা ও চরপাগলা খালটি কৃষকদের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ । খালের দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। খুবদ্রতই আমরা উচ্ছেদের কাজ শুরু করবো। তিনি আরও জানান, জাতীয় নির্বাচনী ভোট ও সময় স্বল্পতার জন্যে একটু দেরি হচ্ছে, এখানে তদন্তের নামে কোন ধরণের ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।