সালেহ আহমদ স’লিপক:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওর অন্তর্গত বাইক্কা বিলের মাছ ও পাখিরা আবারো চোরচক্রদের হাতে জিম্মি হয়ে পরেছে। স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল থেকে মাছ চুরি করতে গিয়ে বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীর বাধার সম্মুখীন হয়। এ কারণে প্রায় সময় মাছ চোরদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অনেক সদস্য ও পাহারাদার। এ সমস্ত ঘটনায় থানায় মামলাও হয়। মামলার বেশিরভাগ ফাইল চাপা পড়ে গেছে। বর্তমানে মাছ চুরি ও পাখি শিকারের কারণে বাইক্কা বিল হুমকির মুখে পড়েছে।
২০০৩ সালে চাপড়া, মাগুড়া ও যাদুরিয়া বিলের ১০০ একর জলাভূমিতে বাইক্কা বিল নামে একটি স্থায়ী মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। দুই যুগ বয়সী ১০০ হেক্টর জায়গার এই অভয়াশ্রমে বিল ভর্তি মাছ ও পাখি থাকার কথা থাকলেও স্থানীয়দের চোখে তেমন মাছ ধরা পড়ে না। সরকার এ পর্যন্ত হাঁরিয়েছে কোটি টাকার রাজস্ব।
স্বেচ্ছাসেবীদের মতে, অভয়াশ্রম মানেই তো নিরাপদ আশ্রয়। মাছেরা বিলে ইচ্ছেমত ঘুরবে, খাবে, পাখিরা খেলা করবে। কিন্তু বাইক্কায় হয়েছে তার উল্টোটা। বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমটির জীববৈচিত্র্য ফিরে পাওয়া ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শুরু থেকে সরকার বড়গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে।
দেশীয় নানা জাতের ছোট বড় মাছ ও পাখির নিরাপদ আবাসস্থল এটি। বাইক্কা বিল মনিটরিং করতে যে পরিমাণ অর্থ লাগে ওই টাকা নাই স্বেচ্ছাসেবীদের আয়ের উৎস বন্ধ করার ফলে। বাইক্কা বিল অনেক বড় এরিয়া। কিন্তু ৪ জন পাহারাদার এটা কন্ট্রোল করতে পারে না। বাইক্কা বিলের এত বড় এরিয়া মাত্র ৪ জন পাহারাদার। এই ৪ জন পাহারাদার দিয়ে বাইক্কা বিল মেইনটেইন করাটা কঠিন। তারপরও কন্ট্রোল করে।
এলাকা মসজিদের ইমাম মোঃ তৈয়বুল ইসলাম বলেন, বাইক্কা বিলটা সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত। কিন্তু এই বিলের মধ্যে চোর যে কীভাবে মাছ ও পাখি চুরি করে, আবার কীভাবে ছাড়া পায় আমরা এটাই বুঝতে পারছি না।
স্থানীয় বাসিন্দা রুমেন আহমদ বলেন, মাছ ও পাখি চুরি হচ্ছে। এগুলা রোধে আমাদের পাহারাদার এবং আমাদের সংঘটনের লোকজন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। চোরদেরকে ধরা হচ্ছে, ধরার পর দেখা যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা হওয়ার পরও তারা কীভাবে প্রশাসনের হাত থেকে রক্ষা পায় সে বিষয়টি আমরা বুঝতে পারি না।
বাইক্কা বিলের গার্ড তানভির আহমদ বলেন, রাতে আমরা গার্ড চারজন থাকি। তারা তো ১৫/২০ জন আসে চুরি করতে। আমাদের হাতে তো কোনো ধরনের অস্ত্র নাই। কিন্তু তাদের হাতে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র থাকে। তাদের সাথে যদি আমরা মারামারি করি। তাহলে তাদের সাথে পারবো না। কিছুদিন আগে ওইখানে মাছ চুরি হইছিল। আমরা বাঁধা দিতে গেলে আমাদের মারপিট করে। পরে তাদের সাথে না পেরে সংগঠনে ফোন দিছি। পরে সংগঠনের লোকজন এসে আমাদের উদ্ধার করে।
বাইক্কা বিল বড়গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিন্নত আলী জানান, কিছু চোর আছে জাগির, রোজেল, শাহ্ আলম এরা অনেকেই আছেন যারা চুরি করে। এদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। যদি প্রশাসনিক সহযোগিতা বেশি থাকে তাহলে চুরি রোধ করা সম্ভব। মামলাগুলো যদি একটু দ্রুত রেকর্ড করে আইনের আওতায় আনা হয় এবং সঠিকভাবে আ্যকশন নেওয়া হয় তাহলে এই চুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল বাইক্কা বিলের বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন (আরএমও) এর সভাপতি পিয়ার আলী বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আসছে, এই অভিযোগটা বাইক্কা বিলের মাছ চুরির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়ে তারা আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। জাকির, জাহাঙ্গীর, আলমগীর তারা এক-ই গোত্রের শাহ্ আলম সহ তারা ছয়ভাই। তাদের সাথে আরও কিছু লোক আছে যারা বাইক্কা বিলের কাছেই থাকে। এরাই সবসময় বাইক্কা বিলের মাছ চুরি করে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা মৎস্য সিনিয়র অফিসার মোঃ ফারাজুল কবির বলেন, এটা হাতেনাতে কখনোই ধরা পড়ে নাই। আমরা বিভিন্ন সময় জাল ধরি। জালগুলোকে জব্দ করে পুড়িয়ে দেই। ওরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কাজ করে এই অভিযোগটা সত্য নয়। আমাদের জানামতে এই বিষয়ে একটা মামলা জজকোর্টে চলমান আছে এবং আমরা আরেকটি অভিযোগ দায়ের করি সাম্প্রতিক সময়ে ওটা থানার তদন্ত পর্যায়ে আছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন জানান, বাইক্কা বিলে সম্প্রতি মাছ ও পাখি চুরি ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন বিলে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। যারা দোষী হবে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।