ই-পেপার | সোমবার , ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের অডিও ফাঁস : শাস্তি কার্যকরের সিদ্ধান্ত

ইকরা তৌহিদ মিম, চট্টগ্রাম :

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও নগদ অর্থ লেনদেনের বিষয় মুঠোফোনে আলাপ ফাঁস হয়েছে। এই ঘটনায় উপাচার্যের (ভিসি) তৎকালীন ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) খালেদ মিসবাহুল মোকররবীন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী আহমেদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে ওই দুই জনের বিরুদ্ধে শাস্তি কার্যকরের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।এছাড়া অভিযুক্ত এই দুইজনসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করারও সুপারিশ করা হয়েছে।

 

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪৫তম সিন্ডিকেট সভায় গেলো সোম ও মঙ্গলবার দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি প্রদত্ত সুপারিশের ভিত্তিতে তাদের এই শাস্তি প্রদানের সুপারিশ করে সিন্ডিকেট। এই ঘটনায় অভিযুক্ত খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীনকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে পদাবনতি (ডিমোশন) দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

 

 

অপরদিকে অর্থ ও হিসাব শাখার কর্মচারী আহমদ হোসেনকে সরাসরি চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ নথি হারানোর দায়ে উপাচার্য (ভিসি) অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে সতর্ক করে ভিসির অফিস থেকে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিন্ডিকেট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে খালেদ মিছবাহুল মোকর রবিনকে ভিসির অফিস থেকে বদলির সুপারিশ করে এক গ্রেড ডিমোশন (পদাবনতি) দিয়েছে। সিন্ডিকেট মনে করেছে তাকে এক গ্রেড ডিমোশন দিতে হবে। কর্মচারী আহমদ হোসেনকে সরাসরি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে একটি মামলা করবে।’

 

 

অন্যদিকে ভিসি অফিসের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে উপাচার্য দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনসহ তৎকালীন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায় খুঁজে পেয়েছে এ সংক্রান্ত গঠিত তদন্ত কমিটি।তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাইল হারানোর দায় মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিনসহ উপাচার্য দপ্তরে কর্মরত তৎকালীন অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনোভাবে এড়াতে পারেন না। এছাড়া এ সংক্রান্ত সকল তথ্য মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তদন্ত কমিটির কাছে পুরোপুরি গোপন করেছেন, যা অবাধ্যতা ও অসহযোগিতা।

 

 

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি সুপারিশ না করলেও সিন্ডিকেট থেকে সর্বসম্মতিক্রমে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে সতর্ক করাসহ উপাচার্য দপ্তর থেকে বদলির সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ আলী।প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে প্রভাষক নিয়োগে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত পাঁচটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। ফাঁস হওয়া এ পাঁচটি ফোনালাপ ছিল উপাচার্য ড. শিরীণ আখতারের ব্যক্তিগত সাবেক সহকারী (পিএস) খালেদ মিছবাহুল মুকাররবীন ও হিসাব নিয়ামক দপ্তরের কর্মচারী আহমদ হোসেনের সঙ্গে দুজন নিয়োগপ্রার্থীর। এর মধ্যে একটি ফোনালাপে প্রভাষক পদের এক প্রার্থীর সঙ্গে উপাচার্যের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারীকে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলতে শোনা যায়। অপর একটি ফোনালাপে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলার শীর্ষ ব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ’ করতেই উপাচার্যের টাকার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন কর্মচারী আহমদ হোসেন। এ ঘটনায় একইবছর হাটহাজারী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সিন্ডিকেট সভায় এই নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ বাতিল ও জড়িতদের শনাক্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে পিএস রবীন ও আহমেদ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।